সিলেটে সেনা অভিযান চলছে দুই জঙ্গি নিহত, বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬

শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী এলাকার আতিয়া মহলে নিহত হয়েছে দুই জঙ্গি। একজন নিহত হয়েছে সেনা কমান্ডোদের গুলিতে, অপরজন গুলিবিদ্ধ হয়ে সুইসাইডাল ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মারা গেছে। গতকাল বিকালে কমান্ডোদের অভিযানের বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এমন তথ্য জানান সেনা সদর দফতরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান। আতিয়া মহলের ভিতরে ঠিক কতজন জঙ্গি রয়েছে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি এই সেনা কর্মকর্তা। এ অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি। গত শুক্রবার সকাল ৭টায় বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল ‘আতিয়া মহল’। সেই বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ থামেনি অভিযানের টানা তৃতীয় দিনেও। গতকাল সকাল থেকে থেমে থেমে বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শোনা গেছে আতিয়া মহলে। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী পাঠানপাড়ার পাঁচতলা এই আতিয়া মহলে আস্তানা গাড়া জঙ্গিদের সঙ্গে গতকালও সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোদের লড়াই হয়েছে। আতিয়া মহলের অদূরে বোমা বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ছয়ে দাঁড়িয়েছে। নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তার জানাজা শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আতিয়া মহল গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ঘেরাওয়ের মধ্যে রয়েছে। শুক্রবার বিকালে তাতে যোগ দেয় বিশেষায়িত বাহিনী সোয়াত। রাতে ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণে আসে সেনা প্যারা-কমান্ডো ইউনিট। গত শনিবার সকাল সোয়া ৯টা থেকে ভবনের ভিতরে অভিযান শুরু করেন প্যারা-কমান্ডোরা। সে অভিযান গতকালও চলে। অভিযান চলাকালে আতিয়া মহলে একাধিকবার শক্তিশালী বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শোনা গেছে। গতকাল সকাল থেকেই আতিয়া মহলের ধারেকাছে কাউকেই যেতে দেওয়া হচ্ছে না। আগের মধ্যরাত থেকেই শিববাড়ী এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, দলবদ্ধভাবে চলা নিষিদ্ধ করে মহানগর পুলিশ। গত শনিবার দিবাগত রাত থেকে রবিবার ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত আতিয়া মহলে থেমে থেমে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা ‘শান্ত’ হয়। গতকাল সকাল ৯টা ৫৭ মিনিট থেকে ফের শুরু হয় বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ। ১০টা ৭ মিনিটে ফের প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে ওঠে শিববাড়ী এলাকা। এরপর ১১টা ৪৩ মিনিট ও ২টা ৪১ মিনিটে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। গতকাল বেশ কয়েকবার আতিয়া মহলে প্যারা-কমান্ডোর বুলেট প্রুফ আর্মারড ভেহিক্যাল ঢুকতে ও বেরোতে দেখা যায়।

নিহতের সংখ্যা বেড়ে ছয় : গত শনিবার সন্ধ্যায় আতিয়া মহলের অদূরে বোমা বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ছয়ে দাঁড়িয়েছে। শনিবার দিবাগত গভীর রাতে ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দুজন। নিহত ছয়জন হচ্ছেন— নগরীর জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম, আদালতে পুলিশের পরিদর্শক চৌধুরী মো. আবু কায়সার, মদন মোহন কলেজের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা অহিদুল ইসলাম অপু, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা জান্নাতুল ফাহিম, নগরীর দাঁড়িয়াপাড়ার বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম ও সুনামগঞ্জের ছাতকের দয়ারবাজার এলাকার কাদিম শাহ।

পুলিশ কর্মকর্তাদের জানাজা, লাশ হস্তান্তর : বোমা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ কর্মকর্তার জানাজা গতকাল বেলা ২টার দিকে সিলেট পুলিশ লাইন মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এর পূর্বে দুজনের লাশে পুলিশের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। জানাজায় সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মিজানুর রহমান, এসএমপি কমিশনার কামরুল আহসানসহ সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। জানাজার পূর্বে ডিআইজি ও কমিশনার বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ও চৌধুরী মো. আবু কায়সার সৎ ছিলেন। দেশের জন্য তারা জীবন উৎসর্গ করেছেন। ’ জানাজা শেষে উভয়ের স্বজনদের কাছে তাদের লাশ হস্তান্তর করা হয়। মনিরুল ইসলামের বাড়ি নোয়াখালীতে, আবু কায়সারের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছইলা আফজলাবাদে। এর আগে ওসমানী হাসপাতালে তাদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এদিকে বিস্ফোরণে নিহত অহিদুল ইসলাম অপু ও জান্নাতুল ফাহিমের লাশও তাদের স্বজনদের হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি দুজনের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খোঁজ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া।

ওসমানীতে এখনো চিকিৎসাধীন ২৮ জন : গত শনিবারের বোমা বিস্ফোরণে আহত ২৮ জন ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের জানান, বোমা বিস্ফোরণের পর ৫০ জনকে ওসমানী হাসপাতালে আনা হয়। তন্মধ্যে চারজন ছিলেন মৃত। হাসপাতালে মারা যান আরও দুজন। র‌্যাব কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদকে রাতেই ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ ছাড়া ১৭ জন চিকিৎসা নিয়ে ফিরে যান। বাকি ২৮ জন চিকিৎসাধীন। তিনি বলেন, ‘ঘটনার পরেই হাসপাতালের সব চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়, ১০টি অস্ত্রোপচার কক্ষ প্রস্তুত করে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। দ্রুত চিকিৎসাসেবা দেওয়ায় প্রাণহানি কমেছে। ’

Others