মোহাম্মাদ মানিক হোসেন চিরিরবন্দর(দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
আদি কালে যে নারীরা কৃষি কাজের সূচনা করেছিল সেই নারীরা আজো সম্পৃক্ত আছে কৃষি কাজের সাথে। কেবল কৃষি কাজই নয় দিনের পর দিন বেড়েছে নারী শ্রমিকদের কর্ম পরিধি কিন্তু বাড়েনি তাদের পারিশ্রমিক।
নানান অবহেলায়, পরনির্ভরশীল হয়ে বেঁচে না থেকে স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার তাগিদেই নারীরা বিভিন্ন কাজের সাথে যুক্ত হচ্ছেন। চিরিরবন্দর এলাকার নারীরা কৃষি কাজের পাশাপাশি গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন (রাস্তা ঘাট নির্মাণ), ধানের চাতাল, হোটেল, ইটের ভাটা এমনকি নির্মাণ শ্রমিকের কাজও করছেন। এমন অনেক নারী আছেন যারা বিধবা অথবা স্বামী পরিত্যক্তা। তারা খেয়ে পরে বাঁচতেই বাধ্য হয়ে যুক্ত হচ্ছেন শ্রম বিক্রির সাথে। কিন্তু এ শ্রম বিক্রি করতে গিয়ে তারা অবহেলার শিকার হচ্ছেন নানা রকমের। সেই সাথে উপযুক্ত পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নারীরা। চিরিরবন্দরে প্রায় ১শত ৫০টি মিল-চাতাল ও ২৭টি ইটভাটায় কমরত প্রায় ৩ হাজার নারী শ্রমিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত বাঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। মজুরি কম পাবার পাশাপাশি এসব পরিবারে না আছে শিশু ও বয়স্ক শিক্ষা, জন্মনিবন্ধন ও প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটাধিকার ক্ষমতা। রাষ্ট্রের সব সুযোগ-সুবিধা থেকেও এরা বঞ্চিত। এদের একটাই কাজ হাড়ভাঙা খাটুনি আর খাটুনি। আর এই ভাবেই এক সময় শেষ হয় ওদের জীবন। এসব শ্রমিক পরিবার গুলোতে স্বাক্ষর জ্ঞান আছে সামান্য। শ্রমিকদের সন্তানরাও ছোট থেকেই জড়িয়ে পড়ে এই ধরনের পেশায়।
মানবাধিকার কর্মী আরজিনা খাতুন জানান, যাদের ঘর্মাক্ত শরীর আর বিন্দু বিন্দু রক্তের ফোঁটায় তিল তিল করে গড়ে ওঠে মালিকের সম্পদের পাহাড়, সেই শ্রমিকদের দুরাবস্থার কথা যেন শোনার কেউ নেই। চাতাল শ্রমিক ভারতী রাণী জানান, রাত ২টা থেকে থেকে ধান ভেজানো, সিদ্ধ করা, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধ ধান শুকাতে দেয়া, দিনভর ধান নাড়াচাড়া শেষে শুকিয়ে মিল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। দিনরাত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টাই তাদের কাজ করতে হয়। অথচ মজুরি খুবই সামান্য। কমপক্ষে ১৮ ঘণ্টা কাজ করে মহিলা শ্রমিকদের পারিশ্রমিক সর্বসাকুল্যে ৩৫০ টাকা। কিন্তু তারা পায় ১৫০ টাকা। চাতাল শ্রমিক ফাতেমা বেগম জানান, চাতালের মধ্যেই তাদের জীবন সীমাবদ্ধ। নির্দিষ্টভাবে চাতাল শ্রমিক ও তাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য কোনো কর্মসূচি নেই। কথা হয় ইট ভাটায় কাজ করা ফতেজংপুর ইউনিয়নের রাজাপাড়া গ্রামের লাইলি বেগম (৫০)এর সাথে তিনি জানান, ৮ বছর আগে স্বামী মারা যায়। ছেলেদের ভবিষ্যতের চিন্তায় এবং খেয়ে পরে দিন কাটাতে কাজ করেন ইটের ভাটায়। কিন্তু“সমান কাজ করলেও কেবল নারী বলে আমাদের কম পারিশ্রমিক দেয়া হয়।
এসব নারী শ্রমিকের সাথে কথা বলার সময় তাদের চোখে মুখে ক্ষোভ আর দুঃখের ছাপ লক্ষ্য করা যায়। তারা বার বার বলেন পুরুষে পাশাপাশি নারীরা সমান কাজ করলেও পারিশ্রমিকের বেলায় কেন এত বৈষম্য ?
চিরিরবন্দর চাতাল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মিল মালিক বাবলু হোসেন হোসেন জানান, একমাত্র সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাই দেশের চাতাল মালিক ও শ্রমিকদের টিকিয়ে রাখতে পারে। ব্যবসা লসের কারণে আমরাও ইচ্ছা করলেই শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে পারি না।