আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেটকে সামনে রেখে মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলো উন্নয়ন ব্যয় বাড়ানোর অসংখ্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ২ লাখ ৫২ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব এসেছে ৭৪টি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কাছ থেকে। প্রতিটি প্রস্তাবে গত বছরের তুলনায় বরাদ্দ বেশি চাওয়া হয়। এসব প্রস্তাবের বিপরীতে প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা দেয়ার সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, টাকা বরাদ্দের দাবি নিয়ে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করা হয়েছে। প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনার পর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নতুনভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে আগামীতে এ বরাদ্দের পরিমাণ প্রয়োজনে কিছুটা বাড়তে বা কমতে পারে।
সূত্র মতে আগামী বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সম্ভাব্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। এ ব্যয় সীমার মধ্যে থেকেই মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর উন্নয়ন ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে। জানা গেছে, আসন্ন বাজেটে মন্ত্রণালয়গুলো গুরুত্ব দিচ্ছে স্বল্প মেয়াদি উন্নয়ন প্রকল্পকে- যা নির্বাচনী বছরের মধ্যে সমাপ্ত করা যায়। এসব প্রকল্পের উপকার সরাসরি ভোগ করতে পারবেন ভোটাররা। ফলে এসব প্রকল্পের চাপে বেড়ে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়গুলোর ব্যয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটে উন্নয়ন খাতে ব্যয়ের জন্য ৭৩টি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার অনুকূলে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৭৫ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে ২৭ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগকে। ১ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা দেয়া হয় কৃষি মন্ত্রণালয়কে। ৫ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে, ১৩ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগকে, ১৫ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় রেল বিভাগকে এবং বিদ্যুৎ বিভাগকে দেয়া হয়েছে ৩১ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা।
এছাড়া প্রাথমিক ও শিক্ষা বিভাগ ৮ হাজার ৫০০ কোটি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ৪ হাজার ৮৯০ কোটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ ১৩ হাজার ৮৮০ কোটি, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ৮ হাজার ১৮৩ কোটি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এদিকে ৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে সেতু বিভাগকে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগকে বরাদ্দ দেয়া হয় ১ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা। অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় বরাদ্দ চূড়ান্ত করলেও মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রস্তাবে অর্থ দাবির পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। সূত্র মতে, আগামী বাজেটে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ৪০ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ, ২ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়, ৭ হাজার ৪১ কোটি টাকা চেয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, ৩৮ হাজার ৪০ কোটি টাকা চেয়েছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ, ১৮ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা রেল বিভাগ ও বিদ্যুৎ বিভাগ চেয়েছে ৩১ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা। এছাড়া প্রাথমিক ও শিক্ষা বিভাগ ৯ হাজার ২০০ কোটি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ১১ হাজার ২৭ কোটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ ৯ হাজার ২৪৭ কোটি, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ১০ হাজার ২৪০ কোটি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ৩ হাজার ৬১১ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এদিকে ৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা চেয়েছে সেতু বিভাগ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ চেয়েছে ৪ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা। অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থাও অর্থ বরাদ্দ চাওয়ার তালিকায় আছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, আগামী বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে এ বছর বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে উন্নয়ন খাতকে। কারণ এ বাজেটের বছরে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ফলে নির্বাচনকে সামনে রেখে উন্নয়ন খাতে জনবান্ধব অনেক প্রকল্প রাখা হচ্ছে। ফলে নতুন বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতগুলো উল্লেখ করে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। নতুন বাজেটে আয় বৈষম্য কমানো, দারিদ্র্য নিরসন, কর্মসংস্থান সৃজন, মানবসম্পদ উন্নয়ন (শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা), কৃষি, শিল্প, সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি, নগর উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, অবকাঠামো ও আইসিটি উন্নয়ন, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন, জেন্ডার সমতা, সামাজিক সুরক্ষা, পরিবেশ টেকসইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ও কর্মসূচির প্রকল্পগুলো বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এছাড়া নতুন প্রকল্প গ্রহণের চেয়ে চলতি বছরে শেষ করা যাবে এমন প্রকল্পকে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া এবং আগামী অর্থবছরের মধ্যে শেষ করা যাবে এমন সব প্রকল্পের পৃথক তালিকা পাঠাতে বলা হয়। তবে সর্তক করে বলা হয়েছে, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ কোনো প্রকল্প নতুন করে মেয়াদ বাড়ানো ছাড়া আগামী এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। এছাড়া পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) আওতায় বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প, বরাদ্দবিহীন অননুমোদিতবিহীন প্রকল্প, বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দ ছাড়া অননুমোদিত প্রকল্পের আলাদা তালিকা পাঠাতে বলা হয় মন্ত্রণালয়গুলোকে।