ক্ষুদে চিত্র শিল্পীদের রংতুলিতে অপরূপ সাজে নীলফামারী

ক্ষুদে চিত্র শিল্পীদের রংতুলিতে অপরূপ সাজে নীলফামারী

ক্ষুদে চিত্র শিল্পীরা তাদের নিজ জেলা শহরকে সাজিয়েছে অপরূপ সাজে। রংতুলির আচড়ে সাজিয়েছে শহরের বিভিন্ন দেওয়াল। তাদের আঁকা চিত্রকর্মের ফুটে তুলেছে ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ। শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ বিখ্যাত মানুষদের প্রতিকৃতি। অঙ্কন করেছে জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও প্রিয় জম্মভূমি বাংলাদেশের মানচিত্র।
নিজের শহর সাজাতে ছোটদের এই দৃষ্টিনন্দন শিল্পকর্ম প্রভাব ফেলেছে বড়দের মনে। শিশুদের হাতের ছোঁয়ায় সাজানো শহর দেখে আনন্দিত অনেকে। দেওয়ালে দেওয়ালে আঁকা বিভিন্ন ছবি মন কেড়েছে শহরের মানুষসহ পথচারিদের। ছবিতে ছবিতে সুন্দর এ শহর সাজানোর কাজটি যে সম্পন্ন হচ্ছে ক্ষুদে শিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় সেটি অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য। তবে সুন্দর এ শহর সাজানোর চেতনা ছড়িয়ে পড়েছে সবার মাঝে।
ভিশন- ২০২১ নামে একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে গত মার্চ মাসে শুরু হয় শহর রাঙ্গানোর এ কাজটি। জেলায় জাতীয় রবীন্দ্র সম্মেলন ঘিরে শহর সাজাতে ৮৮ জন ক্ষুদে চিত্র শিল্পী বিভিন্ন দেওয়ালে আঁকতে থাকে ছবি। সে সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে ১৫ জনের একটি প্রতিনিধি দল ক্ষুদে শিল্পীদের ছবি আঁকার দিকনির্দেশনা দেন। সেই থেকে আজও থামেনি ক্ষুদে ওই শিল্পীদের রংতুলি। লেখাপড়ার পাশাপাশি ছুটির দিনে রংতুলির আঁচড়ে তারা রঙ্গিন করে তুলেছে নীলফামারী শহরের বেশীরভাগ দেওয়াল।
শিশুদের দৃষ্টিনন্দন এমন চিত্রাঙ্কন দেখে নীলফামারী শহরের আমজাদ হোসেন বলেন,‘পথ দিয়ে হাঁটলে দেওয়ালে দেখা যায় ছবি আর ছবি। তাতে শোভা পেয়েছে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, বিখ্যাত অনেক ব্যক্তি, জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ প্রাকৃতিক বিভিন্ন দৃশ্যের ছবি। এসব ছবিতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বৃদ্ধি পাবে, দেশ প্রেম জাগরিত হবে। পোস্টার আর দেওয়াল লিখনের পরিবর্তে সুন্দর ছবি দেখে মানুষের মন প্রফুল্ল থাকবে, চেতনার পরিবর্তন ঘটবে।
দেওয়ালে দেওয়ালে ছবি আঁকতে পেরে আননন্দিত ক্ষুদে শিল্পীরা। তাদের মধ্যে অদিতি রায় ঊর্মি, মীর মাহাজাদিন আফরোজ উর্শিতা, আশিকুর রহমান, নির্জনা বৈরাগী, মেধা কু-ু, বুশরা, ইভা, অথৈ আপনসহ অনেকে বলেন ‘আমাদের কোন ক্লান্তি নেই, নিজের শহর সাজাতে পেরে আনন্দ পাচ্ছি, এমন সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি আমরা কখনো ভাবতে পারিনি।’
ওই ক্ষুদে শিল্পীরা জানায়, আগে ছবি এঁকেছিল কাগজে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রতিযোগিতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল তাদের চিত্রাঙ্কন। রংতুলির আঁচড়ে নিজের শহরকে রঙ্গিন করে তুলতে পারবে এটা তারা ভাবতেই পারেনি কখনো।
কাজটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ভিশন-২০২১ এর এক ঝাঁক তরুণ সংগঠক। ওই সংগঠকদের মধ্যে আল-মামুন করিম সুমেল, সহিদুল ইসলাম সেতু, তপন রায় বর্ষণ, সাগর শারিয়ার বলেন,‘শিশুদের সাথে কাজ করে আমরা আনন্দ পাচ্ছি। তাদের কাছে রং ও ছবি আঁকার কাজ শিখতে পারছি। এমন একটি কাজের সাথে যুক্ত হতে পেরে আমরা নিজেকে ধন্য মনে করছি।’
সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী ওয়াদুদ রহমান জানান, ওই উদ্যোগের প্রধান পৃষ্টপোষক নীলফামারীর কৃতিসন্তান সাদা মনের আলোকিত মানুষ দেশ বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সরকারের সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তাঁর সহযোগিতায় একটি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শহরের ৮৮ জন ক্ষুদে শিল্পীকে বাছাই করে গত মার্চে জেলায় জাতীয় রবীন্দ্র সম্মেলন ঘিরে চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে শহরের দেওয়াল সাজানোর কাজ শুরু করে এই ক্ষুদে শিল্পীরা। এসময় ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের একজন শিক্ষকসহ ১৫ জনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ওই চিত্রাঙ্গণের সুযোগ পায় তারা। সেটি শেষ হলেও ক্ষুদে এই শিল্পীদের উদ্যম থামেনি। তাদের ছবি আঁকার আগ্রহে সুন্দর শহর সাজাতে অন্যান্য দেওয়াল রাঙ্গানোর কাজ হাতে নেওয়া হয়। ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থানের ৬০ভাগ দেওয়ালে শিল্পীদের তুলির আঁছড়ে সৌন্দর্য দৃশ্যমান হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ চলমান আছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি শুক্রবারসহ অন্যান্য ছুটির দিন সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ছবি আাঁকার কাজটি করছে শিশুরা।
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘শিশু মনের সৃজনশীলতার এই যে আলো, তা ছড়িয়ে যাবে লাল-সবুজের দেশটা জুড়ে- তারা জাগিয়ে দিয়েছে তেমনই শুভ প্রত্যাশা।’
তিনি আরো বলেন, ‘নীলফামারী আমাদের ভালোবাসার শহর, আমাদের গর্বের শহর। এটাকে আমরা সুন্দর রাখতে চাই, পরিচ্ছন্ন রাখতে চাই। বাইরের মানুষ যারা আসবেন তারা যেন বলতে পারেন আমরা একটা ভিন্ন ধরণের শহরে গিয়েছিলাম। এই চেষ্টা আমরা অব্যাহত রাখছি।

বিনোদন