পরিবহন খাতের ‘দানব’ সামলানো যাবে না

সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে প্রত্যাশা অনেক বেশি ছিল। কিন্তু ৩৫ বছর পর আইনটির যে খসড়া চূড়ান্ত হলো, তা প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। এর কারণ, সড়ক দুর্ঘটনার দায় অনেকাংশেই চালকের ওপর চাপানো হয়েছে। দুর্ঘটনার সঙ্গে বাকি যাঁরা সংশ্লিষ্ট, তাঁদের দায়মুক্তি দিয়েছে। এটা মানবিক হয়নি। এই আইন বাস্তবায়ন করতে গেলে চালকদের প্রতিরোধের মুখে পড়তে পারে সরকার।

চালক এককভাবে সব নিয়ম মেনে লাইসেন্স নিয়ে গাড়ি চালালেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যদি চালককে দিয়ে অতিরিক্ত সময়ে গাড়ি চালানো হয়, যদি মহাসড়কে অবৈধ নছিমন-করিমন ও ভ্যান চলে; যদি মালিক মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি নামান, গাড়ির চাকা ও যন্ত্রাংশ নষ্ট থাকে, তাহলেও দুর্ঘটনা হতে পারে। অথচ এর দায় চালকের না।

২০১১ সালে যখন এই আইনটির খসড়া আমাদের কাছে আসে, তখন মনে হয়েছিল অনেক সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আইনটি সংশোধন করা হচ্ছে। গত সাত বছরে এতে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। পরিবহন খাতের স্বার্থান্বেষী মহলের চাপে আইনটির অনেক ধারা বদল হয়েছে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাওয়া আইনটির চূড়ান্ত খসড়ায় চালকদের কারণে দুর্ঘটনা হলে, তার কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়নি। বড় আকারের জরিমানার ব্যবস্থা রাখা উচিত ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। আইনে পাঁচ বছরের জেলের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবেশী ও উন্নত দেশে ১০ থেকে ১৪ বছরের জেলের বিধান আছে।

দেশের পরিবহন খাত যাঁরা নিয়ন্ত্রণ করেন, তাঁদের অনেকেই সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাঁড়াবেন। ফলে আইনে তাঁদের দায়মুক্ত রাখা হয়েছে। আমাদের এখানে বাসের রুট পারমিট দেওয়ার কাজটি খুব অদক্ষ হাতে করা হয়। যাঁরা পরিবহন সেক্টরে ব্যবসা করেন, তাঁরাই এই অনুমোদন দেন। দুর্ঘটনার পর যে তদন্ত হয়, সেটা করার মতো দক্ষতাও দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থাগুলোর নেই। এ জন্য বাসের অনুমোদন, দুর্ঘটনার তদন্তের মতো কাজগুলো অনেক বেশি কারিগরি ও বিজ্ঞাননির্ভর। এ ধরনের কাজের জন্য একটি স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ সংস্থা গড়ে তোলা উচিত।

একটি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে শিশু-কিশোর-তরুণদের বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর আমরা দেখলাম পরিবহন খাতে কতটা গভীর অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনা চলছে। বছরের পর বছর নানা অনিয়ম জমে জমে পরিবহন খাত একটি দানব হিসেবে তৈরি হয়েছে। আমরা নতুন যে আইনটি পেতে যাচ্ছি, তা সড়ক পরিবহন খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারবে কি না, সে সন্দেহ থেকেই গেল। সংসদে আইনটি পাস হওয়ার আগে সরকারের উচিত বিশেষজ্ঞদের আরও মতামত নেওয়া। আইনটি যাতে জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারে, সে চেষ্টা করা।

জাতীয়