এনইসিতে শত বছরের ডেল্টা প্লান অনুমোদন

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, খাদ্য ও পানির নিরাপত্তা এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় তৈরি হওয়া শত বছরের ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বা ডেল্টা প্লান অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন শুরু হলে প্রথম পর্যায়ে ২০৩০ সালের মধ্যে ১ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে এনইসি চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠকে পরিকল্পনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এ সময় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলাম, আইএমইডির সচিব মফিজুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক পরিকল্পনা। পৃথিবীর কোথাও এত দীর্ঘ পরিকল্পনা হয়নি। বাংলাদেশে এটিই প্রথম। পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে বড় পানি সম্পদকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে টেকসই করা হবে। এছাড়া হট স্পটে যেসব ঝুঁকি রয়েছে সেগুলো মোকাবেলা করা হবে। তখন আর ঝুঁকি থাকবে না।
তিনি জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর কন্যা ও আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন, সুযোগ পেলে নেদারল্যান্ড ঘুরে এসো। পরবর্তীতে তিনি অনেক বার নেদারল্যান্ড ঘুরেছেন। তারই নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় এই দীর্ঘ পরিকল্পনাটি তৈরি করা হয়েছে। পরিকল্পনায় নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং এবং পরবর্তীতে মেইটেন্যান্স ড্রেজিং করা হবে। ফলে নতুন ভূমি পাওয়া যাবে। নদী পথের ব্যবহার বাড়ানো হবে। সেই সঙ্গে নদী ভাঙ্গনের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ডেল্টা প্লানের আওতায় ২০১৮-২০৩০ সাল পর্যন্ত মোট ৮০টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা। এই অর্থ সরকারী,বেসরকারি, উন্নয়ন সহযোগী এবং জলবায়ু তহবিল থেকে যোগান দেয়া হবে। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মোট খরচের ৮০ শতাংশের যোগান আসবে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে। বাস্তবায়ন ব্যয় মেটাতে গঠন করা হবে একটি ডেল্টা তহবিল। এর পাশাপাশি ডেল্টা প্লান বাস্তবায়নে গঠন করা হবে ডেল্টা নলেজ ব্যাংক।
দেশের পানি সম্পদ নিয়ে একশ’ বছর মেয়াদী পরিকল্পনার খসড়া তৈরিতে সহায়তা করেছে নেদারল্যান্ড। পরিকল্পনা তৈরির জন্য ৪৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে দেশটি। ২০১৪ সালে প্রকল্পটি সাজানোর কাজ শুরু হয়। প্রায় সাড়ে তিন বছরে পরিকল্পনাটি অনুমোদন পেল আজ।
পরিকল্পনায় পানি সম্পদ,ভূমি, কৃষি,জনস্বাস্থ্য,পরিবেশ,পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা,অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ভূ-প্রতিবেশ খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ব-দ্বীপ ভূমিতে প্রাকৃতিক সম্পদ খাতের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন সম্পর্কে একটি দীর্ঘ মেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গী তৈরি করার প্রচেস্টা রয়েছে পরিকল্পনায়। সমন্বিত নীতি উন্নয়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ও বাস্তবায়নের সম্ভাব্য বাঁধা চিহ্নিত করা হয়েছে।
ডেল্টা তহবিল গঠনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ বাস্তবায়নের জন্য ২০৩০ সাল নাগাদ প্রয়োজন হবে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা। এজন্য জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ সমপরিমান অর্থায়ন সম্বলিত ডেল্টা তহবিল গঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এর মধ্যে ২ শতাংশ নতুন বিনিয়োগ এবং শুন্য দশমিক ৫ শতাংশ পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় করা হবে। জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ সরকারি তহবিল হতে এবং শতকরা ২০ ভাগ বেসরকারি খাত থেকে আসবে।
পরিকল্পনা সম্পর্কে শামসুল আলম তার উপস্থাপনায় জানান, বদ্বীপ পরিকল্পনায় ২০১৮ সাল থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প এবং সম্ভাব্য বিনিয়োগের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। যেমন-উপকূলীয় অঞ্চলে ২৩টি প্রকল্পের জন্য বিনিয়োগ করা হবে ৮৮ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। বরেন্দ্র এবং খরা প্রবণ অঞ্চলের জন্য ৯টি প্রকল্পের আওতায় বিনিয়োগে হবে ১৬ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। হাওর এবং আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য ৬টি প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হবে ২ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য ৮ প্রকল্পের অনুকূলে ৫ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। নদী এবং মোহনা অঞ্চলে ৭টি প্রকল্পের অনুকুলে ৪৮ হাজার ২৬১ কোটি টাকা এবং নগরাঞ্চলের জন্য ১২টি প্রকল্পের অনুকূলে ৬৭ হাজার ১৫২ কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রাক্কলন করা হয়েছে।

SHARE

অর্থ বাণিজ্য জাতীয় শীর্ষ সংবাদ