জনগণ জেগেছে, শক্তভাবে দাঁড়াতে হবে: ড. কামাল

গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, জনগণ জেগেছে, জনগণকে রুখার উপায় কারও নেই। জনগণকে শক্তভাবে দাঁড়াতে হবে। জেলায় জেলায়, থানায় থানায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে। রাস্তা, নৌপথ, রেলপথ বন্ধ করে জনগণকে নিষ্ক্রিয় রাখা যাবে না।

সাত দফা দাবি আদায়ে মঙ্গলবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশের মালিক হিসেবে আপনারা আজ এখানে দাঁড়িয়েছেন। আপনাদেরকে দেশের মালিক ভাবতে হবে। এটা কোনো ব্যক্তির রাষ্ট্র নয়। এদেশে কোনো রাজতন্ত্র নেই, রাজা নেই, মহারাণী নেই। দেশের মালিক ১৬ কোটি জনগণ। সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আপোষহীনভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।

ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা দেশে অন্যায় বন্ধ করবো। আমাদের ভোট কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। ভোটের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে।

বুধবার সংলাপে দাবি মানা না হলে ৮ নভেম্বর রাজশাহী অভিমুখে রোডমার্চ ও তফসিল না পেছালে নির্বাচন কমিশন কার্যালয় অভিমুকে পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হবে বলে সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য আবারও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের দাবি জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের ওপর অনেক অত্যাচার হয়েছে। আর নয়। জনগণ মুক্তি পাক। নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। জনগণের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে দাবি মেনে নিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারকে পরাস্ত করতে চাই।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণতন্ত্রকে মুক্ত করবো, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো। তিনি বলেন, বিএনপি নয়, ড. কামাল হোসেনের ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়েছি। নেতাকর্মীদের উদ্দেেশে তিনি বলেন, আপনারদের পদে পদে বিপদে ফেলা হয়েছে। আপনাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, এই অবৈধ সরকার ১০ বছর দেশকে শোষণ করেছে। উন্নয়নের কথা বলে লাগামহীন দুর্নীতি করেছে। নিজেদের বাঁচিয়ে রাখার জন্যই এবারও প্রহসনের নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু এবার সেই তামাশার নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না।

সরকার ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি না মানলে সবাইকে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহবান জানান ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অভিযান চালাচ্ছে। বিএনপির একজন নেতা-কর্মীকেও ঘরে থাকতে দিচ্ছে না। প্রলয় আসছে, চোখ বন্ধ করে থাকলেও এই প্রলয় বন্ধ হবে না। ভাবতে পারেন গুম-খুন-গ্রেফতার করলে আন্দোলন থেমে যাবে। কিন্তু না আন্দোলন থামবে না।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, দুর্নীতির কারণে সরকারের উচ্চরক্তচাপ সৃষ্টি হয়েছে। সরকার দশ মাসে সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ হত্যা করছে বিনাবিচারে। তাই রাষ্ট্রের মেরামত করা দরকার।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, আগামীকাল বুধবার যে সংলাপ হবে, সে সংলাপে শুধু মুখে নয়, লিখিত অঙ্গীকার করতে হবে। কারও নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া যাবে না, গ্রেফতার করা যাবে না, কোনও গায়েবি মামলা দেওয়া যাবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, সরকারকে সাত দফা দাবি দিয়েছি, জোর করে কোনো নির্বাচন করা যাবে না। তারা যদি মনে করে, ডিসি এসপি দিয়ে আবার ১৪ সাল মার্কা নির্বাচন করবেন, এটা আর বাংলার মাটিতে হবে না। ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। খালেদাকে মুক্তি দিতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এমন কোনো মায়ের পুত্র নেই, খালেদাকে জেলে রাখবে। সময় এসেছে, মুক্তি দিতেই হবে।

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। এই জনস্রোত প্রমাণ করে, মুক্ত খালেদার চেয়েও বন্দী খালেদা আরও শক্তিশালী।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দুপুর ২টার দিকে শুরু হওয়া এই সমাবেশে বিএনপির সহযোগী সংগঠন, ঢাকা ও আশপাশের জেলার সাবেক এমপি এবং জনপ্রতিনিধিরা যোগ দেন।

সমাবেশ ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ব্যানার ও ফেস্টুন দেখা যায়। এছাড়া বিএনপি নেতাদের ছবিসম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুনও চোখে পড়ে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ