প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশপ্রেম, নৈতিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে দুর্নীতির মূলোৎপাটনে এগিয়ে আসার জন্য তরুণ প্রজন্মেসহ সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
‘আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস-২০১৮’ উদযাপন উপলক্ষে রোববার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আয়োজিত শিক্ষার্থী ও সততা সংঘের সদস্যদের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ আহ্বান জানান।
দুর্নীতির মূলোৎপাটনের সুফল দেশের প্রতিটি নাগরিক ভোগ করবে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে বলে— এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধান বিচারপতি বলেন, দেশপ্রেমের মাধ্যমে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে দুর্নীতি কমিয়ে আনা সম্ভব। দুর্নীতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করছে। সবাইকে একযোগে দুর্নীতিকে না বলতে হবে এবং বয়কট করতে হবে।
দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের বৈশ্বিক অভিযাত্রার অংশ হিসেবে এই মহতী অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য প্রধান বিচারপতি দুর্নীতি দমন কমিশনকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘আজকের এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে উপস্থিত হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। আমার বিশ্বাস আজকের এই অনুষ্ঠানে সততা সংঘের সদস্যসহ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আমাদের দুর্নীতিমুক্ত করার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, দুর্নীতিবিরোধী গণজাগরণে জাতির আগামী প্রজন্মকে সম্পৃক্তকরণে দুদকের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। দুর্নীতি আমাদের একটি জাতীয় ব্যাধি। এটি সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি করে ও সুষম রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ব্যাহত করে। জাতীয় এই সমস্যা প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে দুদককে একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান সৃষ্টির ফলে ক্ষমতাবান দুর্নীতিবাজরা শঙ্কিত হয়ে পড়ে।’
তিনি বলেন, ‘দেশপ্রেম, আদর্শ ও নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধের আন্দোলনকে সার্বজনীন করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ বছরের একটি দিনকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষেরা অনেক ত্যাগ ও কষ্টের বিনিময়ে আমাদেরকে এই স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন। এই দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও চেতনাকে অবমাননা করছে। সমাজ হতে দূরে সরে যাচ্ছে আদর্শ ও নৈতিকতা। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে এদেশের যুবসমাজ সবচেয়ে বড় শক্তি এবং অপার সম্ভাবনা। অদম্য আগ্রহ, সৃজনশীলতা এবং সুন্দর বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে তাদের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ আজ সময়ের দাবি।’
বক্তৃতা শেষ করার আগে হজরত আলী (র.)-র একটি উক্তি উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি, তা হলো— ‘দেশের বিদ্বান ব্যক্তিগণ লোভী হলে, দেশের নেতৃবৃন্দ ঐশ্বর্যের পেছনে ছুটলে, দেশের ব্যবসায়ীগণ অসাধু হলে, দেশের প্রশাসন এবং ন্যায়দণ্ডধারী বিচারকগণ দায়িত্বহীন হলে- দেশ এবং দেশের নিপীড়িত জনগণকে কে রক্ষা করবে?’
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা অডিটরিয়ামে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুদকের কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান, কমিশনার এ. এফ. এম আমিনুল ইসলাম, সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিন, সততা সংঘের সদস্যবৃন্দ।