রাজধানীতে পরিবহনে বাড়তি ভাড়া, নৈরাজ্য সিটিং-গেটলকের নামে প্রতারণা

ইকবাল ফরিদ হাসান

গণপরিবহনে থামছে না বাড়তি ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ইচ্ছেমতো বাড়ানো হয় ভাড়া। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাড়িয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ করা হয়।

সিটিং সার্ভিস, গেটলক, সময় নিয়ন্ত্রণ, স্পেশাল সার্ভিসসহ নানা নামে ইচ্ছেমতো আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। এক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না বিআরটিএ’র ভাড়ার তালিকা। যাত্রীরা বলছেন, সব অনিয়মই যেন গণপরিবহন সংশ্লিষ্টদের নিয়ম। তাদের হাতে রীতিমতো জিম্মি মানুষ। আর নগর পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার কঠোরভাবে হস্তক্ষেপ করলেই এ সমস্যা নিরসন করা সম্ভব।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৭০ পয়সা আর সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ থেকে ৭ টাকা বেঁধে দিলেও তা মানছে না পরিবহনগুলো। সিটিং ও গেটলক সার্ভিসের নামে তারা সর্বনিম্ন ভাড়া আদায় করছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। জানা গেছে, মহাখালী থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৮ টাকা। এই রুটে বিভিন্ন পরিবহনে ২০ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়। এটিকে আবার ভাগ করে নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ মহাখালী থেকে মগবাজার এলেই গুনতে হচ্ছে ২০ টাকা। আগে এই পথটুকুর ভাড়া ছিল ১০ টাকা।

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা সবুর হোসেন যুগান্তরকে বলেন, মোহাম্মদপুর থেকে গুলিস্তান ও মতিঝিলের ভাড়া কয়েক মাস আগেও ছিল ১৫ টাকা। হঠাৎ এই রুটে সিটিং সার্ভিস, ডাইরেক্ট সার্ভিস ও গেটলক সার্ভিস ঘোষণা দিয়ে ভাড়া ৫ টাকা করে বাড়তি নিচ্ছে।

ফলে ৫ টাকার ভাড়া ১০ টাকা এবং ১৫ টাকার ভাড়া ২০ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। মিরপুরের বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, মিরপুর রুটের কয়েকটি পরিবহন কোম্পানিও একইভাবে ২০ টাকার ভাড়া ২৫ টাকা এবং ২৫ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা করেছে। আবদুল্লাহপুর ও এয়ারপোর্ট থেকে গুলিস্তান, মতিঝিলে আসা বাসেও বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়। তিনি বলেন, অধিকাংশ সিটিং সার্ভিসই যাত্রী নিচ্ছে দাঁড় করিয়ে।

আবার টিকিট দিয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হয় যাত্রীদের কাছ থেকে। একপর্যায়ে লোকাল সার্ভিসে পরিণত হয় এসব বাস। তবে ভাড়া কমে না। চলতে থাকে এভাবেই। সিটিং ও গেটলকের নামে বাস চলাচলের কারণে সব রুটের যাত্রীরা এখন চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

সকালের দিকে প্রায় প্রতিটি বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের ভিড় আগের চেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কবির হোসেন নামের এক যাত্রী জানান, সিটিং ও গেটলকের নামে গণপরিবহন কোম্পানিগুলো সাধারণ মানুষের সঙ্গে চিটিং (প্রতারণা) করছে। তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছে। আবুল হাসনাত নামে আরেক যাত্রী বলেন, পরিবহন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে সরকার সমর্থক লোকজন। এ কারণে এদের বিরুদ্ধে সরকারও ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই কোটি মানুষের এই নগরীতে গণপরিবহন মাত্র সাড়ে ৪ হাজার। ফলে পরিবহন সংকট প্রতিনিয়ত লেগেই আছে। সকাল-বিকাল যাতায়াতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কর্মজীবী মানুষকে। এ ভোগান্তিকে পুঁজি করে উন্নত সেবার নামে ফায়দা লুটছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকার রাস্তার প্রায় সব গণপরিবহনই গেটলক কিংবা সিটিং সার্ভিস করে আদায় করা হচ্ছে নিয়মের দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া। ভাড়া বেশি নিলেও এসব পরিবহনে সেবার চেয়ে ভোগান্তি বেশি। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সিটিং সার্ভিস হিসেবে বাস চালাতে হলে আগে এর অনুমতি নিতে হবে।

কেউ আইন না মানলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বিআরটিএ। বিআরটিএ মুখপাত্র শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানি বলেন, সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে একাধিকবার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর বিরুদ্ধে শিগগিরই মোবাইল কোর্ট চালু হবে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক যুগান্তরকে বলেন, আমরা অভিযোগ পাচ্ছি নির্বাচনী ডামাডোলের মধ্যে অসংখ্য রাস্তায় ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যাত্রীসাধারণকে সংগঠিত ও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, জনগণের স্বার্থ দেখভালের দায়িত্ব সরকারের। সরকার আন্তরিক হলেই গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায়ের নামে যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা থামানো সম্ভব।

Others জাতীয় শীর্ষ সংবাদ