মির্জা মেহেদী তমাল ছিলেন তিনি গাড়ির হেলপার। সেখান থেকে দুর্ধর্ষ প্রতারক। শুধু ভিজিটিং কার্ড দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা। যখন যার ভিজিটিং কার্ড পেতেন, তখন তিনি সেই লোকের পরিচয় দিতেন। কখনো ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা থানার বড় ওসি। এমনই এক প্রতারকের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। মোস্তাফিজুর রহমান নীরব। তবে তিনি বাবু নামে পরিচিত। তিনি ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে যাতায়াতকারী একটি পরিবহনের হেলপার। বাসের যাত্রী পেশাজীবী মানুষের ভিজিটিং কার্ড সংগ্রহ করতেন বাবু। তারপর সেই ঠিকানার মানুষদের নাম ব্যবহার করে গত কয়েক মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করেছেন এই প্রতারক। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ধরা পড়েছেন চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে। ব্যবসায়ী সেজে বাবুকে টাকা দিতে গিয়ে গ্রেফতার করা হয় তাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, বাসে চলাচলকারী সরকারি কর্মকর্তাদের সেবা করে কৌশলে ভিজিটিং কার্ড সংগ্রহ করতেন। কখনো গাড়ি বুকিংয়ের জন্য দেওয়া মোবাইল নম্বর আর নামটি জেনে নিতেন। ব্যস্?! এরপর অসহায় মানুষদের মোবাইল করে কিংবা মামলা দায়েরের পর তা নিষ্পত্তির কথা বলে আদায় করতেন টাকা। পুলিশ জানায়, দুর্ধর্ষ এই প্রতারক বাবুকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানা থেকে কৌশলে আটক করা হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ নিশ্চিত হন বাবু পতেঙ্গা এলাকায় এক লোকের কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করছেন। পরিকল্পনা মতে পুলিশ সাগর পাড়ের পতেঙ্গা বেড়িবাঁধ এলাকার জনৈক ইসমাইল মিয়ার ভাড়াঘরে হানা দেন। সেখান থেকে ধরা পড়েন বাবু। পুলিশ তার কাছ থেকে প্রতারণার নানা কায়দার কথা শুনে হতবাক। বাবু নওগাঁর নেয়ামতপুর থানার চৌড়াপাড়া এলাকার সিরাজুল ইসলামের পুত্র। আটকের সময় তার কাছ থেকে পাওয়া গেছে ২টি মোবাইল ও ৬টি সিম। যেগুলো ব্যবহার করে সে নানা অপকর্ম করে আসছিলেন। কীভাবে অপরাধ করতেন প্রতারক বাবু? জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী একটি পরিবহনের বাসের হেলপার হিসেবে কাজ করতেন। বাসের হেলপার হিসেবে কাজ করার সুবাদে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির নাম পরিচিতি ইত্যাদি ব্যবহার করার বিষয়টি রপ্ত করেন। এরপর উদ্ধার হওয়া মোবাইল ও সিম ব্যবহার করে নিজেকে বিভিন্ন সময়ে ম্যাজিস্ট্রেট, অ্যাডভোকেট, দুদক কর্মকর্তা, ডিজিএফআই কর্মকর্তা, এনএসআই কর্মকর্তা, সিআইডি কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী ব্যক্তি পরিচয় দিয়ে টাকা আদায় করেন। তার কাছে এরকম অন্তত ৫০০ থেকে ১০০০ জনের মোবাইল নম্বর ও পদবি লেখা রয়েছে। জব্দ হওয়া ৪টি সিমের মাধ্যমে পৃথক বিকাশের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেওয়ার কথা বলতেন।
কেবল তাই নয়, বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপন, টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি ইত্যাদি থেকে সংশ্লিষ্ট অফিস বা কর্মকর্তার নাম, পদবি, আইডি নম্বর, ঠিকানা ইত্যাদি সংগ্রহ করে নিজের উক্ত পরিচয় দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতে আসছিলেন। এই বিষয়ে বাবু আরও বলেন, আমি কৌশলে ভিআইপি নম্বর ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা সেবা প্রত্যাশী ব্যক্তির কাছে বলতাম, জনাব আমি অমুক বিচারক। আপনাকে নারী শিশু মামলায় আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই সমঝোতা করতে চাইলে যোগাযোগ করুন। তিনটি ফোন নম্বর দিয়ে দিতেন তিনি। যারা যোগাযোগ করতেন তাদের কাছ থেকে সে বিকাশের মাধ্যমে টাকা আদায় করতেন। জিজ্ঞাসাবাদে বাবু বলেছেন, চট্টগ্রাম শহরের অন্তত ৩০/৪০ ব্যক্তিকে এমন ফাঁদে ফেলে সে ৩ মাসে কয়েক লাখ টাকা আদায় করেছেন। এসব ব্যক্তি নগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে পুলিশ কৌশলে ব্যবসায়ী সেজে টাকা দেওয়ার কথা বলে আটক করে প্রতারক বাবুকে। পুলিশ জানায়, এমন প্রতারক চক্র এখন সারা দেশেই সক্রিয়। তাই কাউকে নিজের ভিজিটিং কার্ড দিতে হলে তা ভেবে চিন্তে দেওয়া দরকার। অন্যথায় নিজের ভিজিটিং কার্ড অন্য কেউ পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করেই যাবে। তাতে করে নিজেকেই বিপদে পড়তে হতে পারে।