শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসবেন কি না, তা নির্ধারণ করতে রোববার ভোট দেবেন বাংলাদেশের মানুষ। বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে তুলে এনেছেন শেখ হাসিনা। তবে তার সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও রয়েছে। তা সত্ত্বেও শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী থাকার পক্ষে অনুকূল পরিস্থিতি রয়েছে।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলেছে।
এতে উল্লেখ করা হয়, সরকারবিরোধীরা চলমান পরিস্থিতিকে দেশটির ৪৭ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি শ্বাসরুদ্ধকর বলে উল্লেখ করেছে। নির্বাচনের কয়েক মাসে শেখ হাসিনার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়াসহ বিরোধীপক্ষের অসংখ্য নেতাকর্মী কারারুদ্ধ অথবা নিখোঁজ আছেন।
আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ও স্বাধীন গণমাধ্যমের সংগঠনগুলো অভিযোগ তুলেছে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কাজে বাংলাদেশে যাওয়ার ভিসা দিতে অহেতুক দেরি করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনার বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘প্রতিপক্ষের কর্মীদের ওপর পুলিশের হয়রানি নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে।’ তিনি বলেন, তাদের জোটের ৭০ জনের বেশি প্রার্থীর মিছিল ও দলীয় কার্যালয়ে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে। তারা নির্বাচনী কার্যক্রম চালাতে শঙ্কিত ছিলেন। এ মাসের শুরুতে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান থেকে ফেরার পথে তার নিজের গাড়িবহরেও হামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বিরুদ্ধে এই হামলার অভিযোগ উঠেছে।
নির্বাচনী প্রচার শুরু হওয়ার প্রথম দিনই সহিংসতায় আওয়ামী লীগের দুই সদস্য নিহত হন। শেখ হাসিনা আশা করছেন, ১০ কোটি ভোটার সহিংসতাকে ঘৃণা করে দেশের অসাধারণ অর্থনৈতিক উন্নতি তথা ২০০৯ সাল থেকে মাথাপিছু আয় তিনগুণ বেড়ে যাওয়া এবং গত এক দশক ধরে ৬ শতাংশের বেশি বার্ষিক প্রবৃদ্ধিকে গুরুত্ব দেবেন। এই প্রবৃদ্ধির বেশির ভাগই এসেছে দেশের ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের গার্মেন্ট খাত থেকে- যেখানে ৪৫ লাখ মানুষ কাজ করেন। এ খাতে নারীদের অংশগ্রহণ দ্বিগুণ বেড়েছে। মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের সুবিধা বেড়ে যাওয়ায় গড় আয়ু ৭২ বছর হয়েছে, যা ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বেশি।
তবে এসব ইতিবাচক হিসাব-নিকাশ থাকলেও এ বছরেই রাজধানী ঢাকা দু’বার অচল করে দিয়েছিল আন্দোলনকারীরা, যা কয়েকজন বিশ্লেষকের দৃষ্টিতে ব্যাপক অস্থিরতার প্রমাণ। ভোটাররা যদি রোববারের নির্বাচনে বাধাহীনভাবে ভোট দিতে পারেন, তবে এর প্রতিফলন ব্যালট বাপে দেখা যেতে পারে।
বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের পরিচালক শাহাব এনাম খান বলেন, বিশ্বের অতি ধনী ব্যক্তিদের প্রবৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। এর অর্থ এই নয় যে, নিম্ন আয়ের মানুষেরাও এতে উপকৃত হচ্ছেন। শাহাবের মতে, গত আগস্ট মাসে নিরাপদ গাড়ি চালনার দাবিতে আন্দোলনের বিষয়টি ভোটারদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। জননিরাপত্তার নামে আইনের প্রয়োগ ও বিচার বিভাগের ওপর মানুষের আস্থার বিষয়টিও ভোটে নির্ধারক হয়ে উঠবে।
মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের তথ্য অনুযায়ী, শত শত মানুষকে জোর করে তুলে নেওয়া হয়েছে বা অজ্ঞাত স্থানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ ছাড়া মাদক ব্যবসার অভিযোগে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৪৫০ জন নিহত হয়েছেন।
নির্বাচনের আগে ভুয়া প্রচার ঠেকানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে কয়েকবার ইন্টারনেট সেবা সীমিত করেছে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) এক কর্মকর্তা বলেন, দেশজুড়ে ইন্টারনেট সেবার গতি কমানো হয়। কয়েক ঘণ্টার জন্য থ্রিজি ও ফোরজি সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। অবশ্য ১০ ঘণ্টা পর শুক্রবার সকালে ইন্টারনেটের গতি স্বাভাবিক হয়।
রক্ষণশীল বিএনপি যতটা দুর্বল হয়েছে, বাংলাদেশে কতৃত্ববাদী শাসন ততটা দৃঢ় হয়েছে। ২০১৪ সালে কারচুপির আশঙ্কা করে আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যেতে অস্বীকৃতি জানায় বিএনপি। ফলে বিদায়ী সংসদে তাদের কোনো প্রতিনিধি নেই। দুর্নীতির দায়ে খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে। তার ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনাকে হত্যা ষড়যন্ত্রের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন লন্ডনে থাকছেন। বিএনপি দুর্বল হলেও সরকার কোনো সুযোগ হাতছাড়া করেনি। নির্বাচনে আগে এই দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তিন লাখ মামলা হয়েছে। শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বার্তা সংস্থা এপিকে বলেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে তারা ১৫টি পেজ বন্ধ করে দিয়েছে। সেগুলোতে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের পক্ষে এবং বিরোধীদের বিপক্ষে ভুয়া তথ্য ছড়ানো হচ্ছিল। জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টুইটারও জানিয়েছে বাংলাদেশে ১৫টি অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া গেছে, যেখান থেকে ভুয়া খবর ছড়ানো হচ্ছিল। এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর জানা গেছে এসব অ্যাকাউন্ট পরিচালনায় সরকারের মদদ ছিল।