রাশিদ রিয়াজ
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর চারটি নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ যে ২৭টি আসনে প্রতিবারই জয়ী হয় সেগুলো হচ্ছে : দিনাজপুর-৫, সিরাজগঞ্জ-১, নড়াইল-২, বাগেরহাট-১, বাগেরহাট-৩, খুলনা-১, পটুয়াখালী-৩, পটুয়াখালী-৪, টাঙ্গাইল-১, জামালপুর-৩, ময়মনসিংহ-১০, কিশোরগঞ্জ-৫, গাজীপুর-১, ফরিদপুর-১, গোপালগঞ্জ-১, গোপালগঞ্জ-২, গোপালগঞ্জ-৩, মাদারীপুর-১, মাদারীপুর-২, মাদারীপুর-৩, শরিয়তপুর-২, শরিয়তপুর-৩, সুনামগঞ্জ-৩, মৌলভিবাজার-৪, হবিগঞ্জ-২, হবিগঞ্জ-৪ ও পার্বত্য বান্দরবান। আসনগুলির এক-তৃতীয়াংশই বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায়। আর ১৫টি ফরিদপুর-সহ দক্ষিণবঙ্গে। এই আসনগুলিতে ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনেও আওয়ামী লিগ জয় পেয়েছিল।
অন্যদিকে ওই চারটি নির্বাচনে প্রতিবারই বিএনপি জয় পায় ১৮টি আসনে, যেগুলো হচ্ছে : জয়পুরহাট-১, জয়পুরহাট-২, বগুড়া-৩, বগুড়া-৪, বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, খুলনা-২, বরিশাল-৫, কুমিল্লা-২, চাঁদপুর-৪, ফেনী-১, ফেনী-৩, নোয়াখালি-১, নোয়াখালি-২, নোয়াখালি-৩, লক্ষ্মীপুর-১, লক্ষ্মীপুর-২ ও লক্ষ্মীপুর-৩।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ৩০টি আসনে জয় পায় যা দলটির সবথেকে কম আসনের জয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি ঢাকা ও সিলেট বিভাগের ৯৪ ও ১৯টির মধ্যে ১টি আসনও পায়নি। তবে ওই ভরাডুবির পরও বিএনপির আওয়ামী লীগের থেকে মাত্র আটটি কম আসনে একটানা জয় পায, যেগুলো ছিল বৃহত্তর বগুড়া, বৃহত্তর কুমিল্লা ও বৃহত্তর নোয়াখালি থেকে। একই সময়ে জাতীয় পার্টি যে সাতটি আসনে একটানা জয় পায় সেগুলো হল : লালমনিরহাট-২, রংপুর-১, রংপুর-২, রংপুর-৩, কুড়িগ্রাম-১, কুড়িগ্রাম-২ ও গাইবান্ধা-৩। সব কটিই বৃহত্তর রংপুরের।
১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ৪টি নির্বাচনে একটানা চারবারই ২৭টি আসনে জয় ছাড়াও আওয়ামী লীগ ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত একটানা তিনবার নড়াইল-১, ফরিদপুর-৫ ও চট্টগ্রাম-৪ এই তিনটি আসনেও জয় পায়। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আসন পুনর্বিন্যাসের সময় ফরিদপুর-৫ আসনটি বিলুপ্ত হয়।
১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিএনপি যে ৫৪টি আসনে একটানা তিনবার জয়ী হয়েছিল সে আসনগুলি হল: পঞ্চগড়-১, বগুড়া-১, বগুড়া-৫, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, নওগাঁ-৩, নওগাঁ-৬, রাজশাহী-১, রাজশাহী-২, রাজশাহী-৫, নাটোর-১, সিরাজগঞ্জ-৩, কুষ্টিয়া-১, কুষ্টিয়া-২, কুষ্টিয়া-৩, চুয়াডাঙ্গা-১, ঝিনাইদহ-২, ঝিনাইদহ-৩, ঝিনাইদহ-৪, বরিশাল-৩, টাঙ্গাইল-৩, টাঙ্গাইল-৬, ময়মনসিংহ-৫, কিশোরগঞ্জ-৬, মানিকগঞ্জ-১, মানিকগঞ্জ-৩, মুন্সিগঞ্জ-১, মুন্সিগঞ্জ-২, মুন্সিগঞ্জ-৩, মুন্সিগঞ্জ-৪, ঢাকা-১, ঢাকা-২, ঢাকা-৩, ঢাকা-৭, ঢাকা-১২, ঢাকা-১৩, নরসিংদী-১, নরসিংদী-২, নরসিংদী-৩, নারায়ণগঞ্জ-৩, ফরিদপুর-৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩, কুমিল্লা-১, কুমিল্লা-৪, কুমিল্লা-৮, চাঁদপুর-৩, চাঁদপুর-৬, নোয়াখালী-৪, চট্টগ্রাম-১, চট্টগ্রাম-৫, চট্টগ্রাম-৮, চট্টগ্রাম-১০, চট্টগ্রাম-১১ ও চট্টগ্রাম-১৩। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে সীমানা পুননির্ধারণের সময় মুন্সিগঞ্জ-৪ ও চাঁদপুর-৬ আসন দুটি বিলুপ্ত হয়ে যায়।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টি ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত একটানা তিনবার ছ’টি আসনে জয়ী হয়েছিল। সেই আসনগুলি হল: রংপুর-৪, রংপুর-৫, রংপুর-৬, কুড়িগ্রাম-৪, গাইবান্ধা-৫ ও ফিরোজপুর-২। একটানা তিনবার জয়ী হওয়ার ক্ষেত্রেও জাতীয় পার্টির প্রাধান্য বৃহত্তর রংপুরে ছ’টি আসনের মধ্যে মাত্র একটি, পিরোজপুর-২, বৃহত্তর রংপুরের বাইরে।
১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি আসনে তিনবার একটানা জিতেছিল, আসনটি ছিল সাতক্ষীরা-২। জামায়াত ১৯৯১ সালে ১৮টিতে, ১৯৯৬ সালে ৩টিতে, ২০০১ সালে ১৭টিতে এবং ২০০৮ সালে মাত্র দু’টি আসনে জয়ী হয়েছিল। ২০০১ ও ২০০৮ সালে জামায়াত চারদলীয় জোটের অংশ হিসেবে বিএনপির সঙ্গে যৌথ ভাবে নির্বাচন করেছিল।
অতীতের নির্বাচন থেকে দেখা যায় আওয়ামী লীগ ৩০টি আসনে প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ এই অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থান অর্জন করেছিল জাতীয় পার্টি ও মহাজোটের অন্য সহযোগিদের সমর্থনে। আওয়ামী লীগের এই অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থান বহুলাংশেই গোপালগঞ্জ-সহ দক্ষিণবঙ্গে। অন্যদিকে বিএনপিও প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী ৭২টি আসনে। তবে ২০০১ ও ২০০৮ সালে তাদের শরীক দল ছিল জামায়াতে ইসলামি।
১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ বিএনপির তুলনায় একটানা চারবার বেশি আসনে জিতেছে। জাতীয় পার্টির আসন যোগ করলে আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টির একটানা চারবার জেতা আসনের সংখ্যা দাঁড়ায় বিএনপির প্রায় দ্বিগুণ। ৩৪ বনাম ১৮। এর সঙ্গে একটানা তিনবার জেতা আসনের সংখ্যা যোগ করলে বিএনপি ও তার জোট থেকে আওয়ামী লীগ ও তার জোট দলকে অনেক বেশি শক্তিশালী মনে হয়। তাদের তুলনামূলক আসনসংখ্যা দাঁড়ায় যথাক্রমে ৭৪ ও ৪৩।