ইউপি চেয়ারম্যান থেকে খাদ্যমন্ত্রী

১৯৮৪ সালে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। এরপর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। কিন্তু দমে যাননি।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হন। এরপর দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জয়ী হন। এবার তিনি প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েই পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি হলেন নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর-পোরশা ও সাপাহার) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাধন চন্দ্র মজুমদার। আজ সোমবার বিকেলে বঙ্গভবনে অন্য মন্ত্রীদের সঙ্গে তিনিও রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে শপথ গ্রহণ করেন। একেবারের তৃণমূল থেকে উঠে আসা সাধন চন্দ্র মজুমদার খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন।

ভারতের সীমান্ত ঘেষা নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-১ আসনে স্বাধীনতার পর এই প্রথমবারের মতো মন্ত্রী হয়েছেন কেউ। সাধন চন্দ্র মজুমদারের মন্ত্রী হওয়ার খবরে উচ্ছ্বসিত তাঁর নির্বাচনী এলাকাসহ নওগাঁ জেলাবাসী। সাধন চন্দ্র মজুমদার মন্ত্রী হওয়ায় জেলার বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে।

স্থানীয় ও আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, সাধন চন্দ্র মজুমদার ১৯৫০ সালে ১৭ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। নওগাঁ ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ (স্নাতক) পাস করেন। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার হাজিনগর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে। তবে নওগাঁ শহরের পোস্ট অফিসপাড়ায় সপরিবারে বসবাস করেন। বাবা মৃত কামিনী কুমার মজুমদার ও মা মৃত সাবিত্রী বালা মজুমদার। তিনি চার মেয়ে সন্তানের জনক। বড় মেয়ে সোমা মজুমদার ও তৃতীয় মেয়ে কাদেরী মজুমদার ব্যাংকার, দ্বিতীয় মেয়ে কৃষ্ণা মজুমদার চিকিৎসক এবং ছোট মেয়ে তৃণা মজুমদার প্রকৌশলী। অত্যন্ত সৎ ও নিষ্ঠাবান হিসেবে সাধন চন্দ্র মজুমদারের সুখ্যাতি রয়েছে। আপামর সাধারণ মানুষের মধ্যেও তিনি পরম শ্রদ্ধার পাত্র।

নওগাঁ-১ আসনের সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদারসহ ২৪ জন মন্ত্রীকে আজ সোমবার বিকেলে বঙ্গভবনে শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ছবি : ফোকাস বাংলা

জানা গেছে, সাধন চন্দ্র মজুমদার মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি চতুর্থ। বাবা ছিলেন ধানের ব্যবসায়ী। ছাত্রজীবন থেকেই সাধন চন্দ্র মজুমদার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ১৯৮৪ সালে নিজ জন্মভূমি হাজিনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নির্বাচন হন তিনি। এরপর ১৯৯০ সালে নিয়ামতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ডা. ছালেক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাধন চন্দ্র মজুমদার। এরপর ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেই ছালেক চৌধুরীকে পরাজিত করে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের সাধন চন্দ্র মজুমদার। এরপর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মোস্তাফিজুর রহমানকে পরাজিত করে তৃতীয়বারে মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এ নির্বাচনে তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫৯২ ভোট এবং বিএনপির মোস্তাফিজুর রহমান পেয়েছেন ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৬৪ ভোট। অর্থাৎ ৫৬ হাজার ২২৮ ভোট বেশি পেয়ে তিনি বিজয়ী হয়েছেন।

নওগাঁর ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র ভূমি এলাকা হিসেবে পরিচিত নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার উপজেলা। এ তিন উপজেলায় ২০টি ইউনিয়ন পরিষদ। বছরে একটি মাত্র ফসল বৃষ্টি নির্ভর আমন। তবে খাদ্যের সংকটের চেয়ে পানির সংকট ছিল প্রকট। ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা পোরশা ও সাপাহার উপজেলা। এই দুই উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে পূর্ণভবা নদী। এ ছাড়াও সাপাহারে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী প্রায় এক হাজার আয়তনের জবই বিল। পূর্ণভবা নদী ও জবই বিল থেকে প্রচুর মাছ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।

নওগাঁ-১ আসনের সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদারকে মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়ায় নওগাঁয় আনন্দ মিছিল। ছবি : এনটিভি

২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় পর ১০ বছর সাংসদ থাকায় নির্বাচনী এলাকায় তৃণমূল থেকে নেতাকর্মী সু-সংগঠিত ও এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছেন সাধন চন্দ্র মজুমদার। এখন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে গভীর নলকূপের মাধ্যমে জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন হচ্ছে। এ তিন উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা, পানির সু-ব্যবস্থা, বনায়ন, শিক্ষা ব্যবস্থায় দৃষ্টান্ত মূলক অবদান রেখেছেন তিনি। সাপাহার উপজেলা ৮৫ শতাংশ এবং পোরশা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন উদ্বোধন করেছেন। সব মিলিয়ে তিন উপজেলায় তিনি নিজের ও নিজ দল আওয়ামী লীগের গ্রহণযোগ্য ভাবমূর্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। দলমত বির্নিশেষে সবার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার পাত্র সাধন চন্দ্র মজুমদার।

নওগাঁয় অবস্থান করলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অর্থাৎ বেশির ভাগ সময় উপজেলাগুলোতে সময় দেন সাধন চন্দ্র মজুমদার। আর তাঁর কাছ থেকে কেউ কিছু খালি হাতে ফিরতে হয় না বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা, সাংসদ হয়ে বিগত দিনে তিনি যে পরিমাণ উন্নয়ন করেছেন মন্ত্রী হিসেবে আরো উন্নয়ন করবেন।

নিয়ামতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান এনামুল হক, পোরশা উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম ও সাপাহার উপজেলা চেয়ারম্যান সামসুল আলম শাহ তাঁদের পৃথক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, স্বাধীনতার পর এই প্রথম নওগাঁ-১ আসন থেকে তাঁরা মন্ত্রী পেয়েছেন। এ জন্য তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, অবহেলিত এই নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার উপজেলাসহ নওগাঁর ১১ উপজেলায় একযোগে ব্যাপক উন্নয়ন করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সাধন চন্দ্র মজুমদার খাদ্যমন্ত্রী হওয়ায় নওগাঁবাসীর প্রাণের দাবি গ্যাস সংযোগ, ইপিজেড, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সাধারণ মানুষের সব ধরনের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের একটি পথ সৃষ্টি হলো।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৬ সালে নওগাঁ-৫ (সদর) আসন থেকে বাণিজ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আবদুল জলিল, ২০১৪ সালে তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসন থেকে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী হন মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক। আর চতুর্থবার ক্ষমতায় আসার পর খাদ্যমন্ত্রী হলেন নওগাঁ-১ আসনের সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদার।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ সারাদেশ