সমস্যা যখন মাথাব্যথা

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

মাথাব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও তা ক্ষেত্র বিশেষে বেশ যন্ত্রণাদায়ক। প্রত্যেকে জীবনের কোনো না কোনো সময় মাথাব্যথায় আক্রান্ত হন। নানা কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। প্রায় ৫০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ মাথাব্যথায় ভুগে থাকেন, যার মধ্যে টেনশন টাইপ মাথাব্যথার রোগী বেশি। মাথাব্যথার সাধারণ কিছু কারণ হলো-দুশ্চিন্তা ও অতিরিক্ত মানসিক চাপ, সর্দি-কাশি, ভাইরাসের আক্রমণ (যেমন ডেঙ্গু জ্বর), ক্লান্তি, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, সাইনোসাইটিস, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, মাথায় আঘাত, উচ্চ রক্তচাপ, মাইগ্রেন ও ক্লাস্টার মাথাব্যথা, ব্রেন টিউমার ও ইনফেকশন (যেমন : মেনিনজাইটিস) ইত্যাদি। এ ছাড়াও চোখের, দাঁতের এবং নাক-কানের রোগ মাথাব্যথার অন্যতম কারণ। অনেক সময় ডাক্তারগণও মাথাব্যথার কোনো কারণ খুঁজে পান না, তাই মাথাব্যথা শুধু রোগীদেরই না, তা ক্ষেত্র-বিশেষে ডাক্তারদের ‘মাথাব্যথা’র কারণ।

ধরন ও চিকিৎসা : কারণ অনুযায়ী মাথাব্যথার চিকিৎসা ভিন্ন। সর্দি-কাশি, ভাইরাসের জ্বরের সঙ্গে অন্য কোনো ইনফেকশনে চিকিৎসা দিলেই মাথাব্যথা ভালো হয়। যারা অনেকদিন যাবৎ মাথাব্যথায় ভোগেন, তাদের ডাক্তার শরণাপন্ন হয়ে উচ্চ রক্তচাপ, চোখ, দাঁত, ইত্যাদির সমস্যা কিনা তা দেখানো উচিত।

♦ টেনশনজনিত : বেশির ভাগ মাথাব্যথাই হয় টেনশন বা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে। মানসিক চাপজনিত মাথাব্যথা হলে মনে হয় মাথার তালুতে কিছু একটা চেপে ধরে আছে। সারা দিনের কাজের শেষে ব্যথার তীব্রতা বাড়তে থাকে। তবে ব্যস্ততার সময় মনে হয় ব্যথাটা যেন একটু কম। সেক্ষেত্রে সুশৃঙ্খল পারিবারিক জীবনাচরণ ও আনন্দময় ঝামেলাহীন জীবনই পারে টেনশন থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে।

♦ মাইগ্রেন : এ ধরনের ব্যথা মাথার এক পাশে হয়, বমি বমি ভাব হয়। এই ব্যথা শুরু হলে তা কয়েক ঘণ্টা, এমনকি কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। আলোতে তীব্রতা বাড়ে, রোগী অন্ধকারে থাকতে পছন্দ করে। কোনো কোনো রোগীর মাইগ্রেন ব্যথা শুরু হওয়ার আগে কিছু বিশেষ লক্ষণ দেখা দেয়। চোখের সামনে আঁকাবাঁকা রেখা দেখা বা ঝাপসা দেখা, কথা বলতে অসুবিধা কিংবা শরীরের কোনো অংশ ঝিনঝিন করা বা অবশ লাগা। চিকিৎসকের অধীনে এবং নিয়মিত চেক আপের মাধ্যমে মাইগ্রেনের চিকিৎসা করা উচিত। কারও কারও ক্ষেত্রে চকলেট, পনির বা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেলে মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়ে, তাঁরা নির্দিষ্ট ওই উপাদানটি এড়িয়ে চলুন। পাশাপাশি, মেডিটেশন, নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো, অতিরিক্ত বা কম আলোতে কাজ না করা, কড়া রোদ বা তীব্র ঠাণ্ডা, উচ্চ শব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ পরিহার, পিসি ও টিভির সামনে বেশিক্ষণ না থাকা, প্রচুর পানি পান ইত্যাদি মাইগ্রেনে বেশ উপকারী।

♦ ক্লাস্টার : মাথাব্যথা হঠাৎ করেই শুরু হয়, তবে আস্তে আস্তে এর তীব্রতা বাড়ে। ব্যথা এক পাশে শুরু হয়ে সাধারণত চোখের পেছনের দিকে তীব্র আকার ধারণ করে। আক্রান্ত পাশের চোখ লাল বর্ণও ধারণ করা, পানি পড়া অথবা আক্রান্ত চোখের পাতা ঢলে পড়া এবং নাক বন্ধ ও নাক থেকে পানি ঝরা এ ধরনের মাথাব্যথার প্রধান লক্ষণ । ২৪ ঘণ্টায় ঘন ঘন আক্রান্ত হলেও রাতে সাধারণত বেশি হয়, এমনকি ব্যথার তীব্রতায় রোগী ঘুম থেকে জেগে ওঠেন। অ্যালকোহল, ধূমপান ত্যাগ করা, সঠিক সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস ইত্যাদি সমস্যা থেকে মুক্ত রাখতে সহায়তা করে। অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

♦ সাইনাস জনিত মাথাব্যথা : কপালে বা গালের দুই দিকে কিংবা চোখের পেছনে হয়, নাকে পানি, হাঁচি, নাক বন্ধ ও জ্বর বোধ হয়। পিএনএস এক্সরে করলে সহজেই ডায়াগনোসিস করা যায়। এ জাতীয় মাথাব্যথায় অ্যান্টিহিস্টামিন, গরম পানি দিয়ে গোসল করলে অথবা গামলায় গরম পানির বাষ্প টেনে নিলে আরাম পাওয়া যায়।

♦ হরমোনাল : নারীদের ঋতুকাল, গর্ভধারণ এবং মেনোপজের সময় হরমোনের মাত্রার পরিবর্তন হয়। তখন মন-মেজাজ পরিবর্তন, এমনকি মাথাব্যথাও হতে পারে। জন্মনিয়ন্ত্রণের ট্যাবলেট সেবনেও মাথাব্যথা বেড়ে যায়। এ ধরনের সমস্যায় স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে এবং চিকিৎসায় হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি বেশ উপকারী।

লেখক : সাবেক ডিন, মেডিসিন অনুষদ,

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

Others শীর্ষ সংবাদ