ঢাকাসহ সারাদেশের আট জেলার ১১টি সরকারি হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে ৪০ শতাংশ চিকিৎসকের অনুপস্থিতি পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের এই অনুপস্থিতি আরও বেশি ৬২ শতাংশ।
সোমবার দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিমের অভিযানে স্বাস্থ্যসেবার এই বেহাল চিত্র উঠে এসেছে।
বিভিন্ন হাসপাতালে ডাক্তারদের অনুপস্থিতির কারণে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে- কয়েক দিন ধরে এ ধরনের অভিযোগ আসে দুদক হটলাইনে। অভিযোগগুলো প্রাথমিকভাবে যাচাই করে সত্যতা পাওয়া যায়।
দুদক এনফোর্সমেন্ট সেলের সমন্বয়কারী ও কমিশনের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরীর নির্দেশে সোমবার ঢাকাসহ আট জেলার ১১ হাসপাতালে ১১টি টিম একযোগে অভিযান চালায়। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকার তিনটি ও ঢাকার বাইরের আটটি হাসপাতাল।
দুদক জানায়, ঢাকাসহ আট জেলার এই ১১ হাসপাতালে রোস্টার ডিউটি বণ্টনকৃত মোট চিকিৎসকের সংখ্যা ২৩০ জন। এদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত ছিলেন ৯২ জন, যা মোট চিকিৎসকের ৪০ শতাংশ।
তবে ঢাকা বাদে অন্য সাত জেলার আট হাসপাতালে অনুপস্থিতির এই চিত্র আরও ভয়াবহ। এ সাতটি হাসপাতালে রোস্টার ডিউটি বণ্টনকৃত ১৩১ চিকিৎসকের মধ্যে অনুপস্থিত ছিলেন ৮১ জন, অর্থাৎ ৬১.৮ শতাংশ বা প্রায় ৬২ শতাংশ।
সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় দুদক টিমের সদস্যরা ডাক্তারদের অনুপস্থিতি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনাও করেন।
এনফোর্সমেন্ট সেলের সমন্বয়কারী মুনীর চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, স্বাস্থ্য খাতের অবক্ষয় অত্যন্ত দুঃখজনক। মানবসেবার চেতনা না থাকলে চিকিৎসাসেবা পরিত্যাগ করা উচিত। দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে দুদক কঠোর অবস্থান নেবে।
১১টির মধ্যে ঢাকার তিনটি হাসপাতাল হলো- ফুলবাড়িয়া কর্মচারী কল্যাণ হাসপাতাল, নাজিরাবাজারের মা ও শিশু সদন এবং মুগদা জেনারেল হাসপাতাল।
ঢাকার বাইরের আট হাসপাতাল হলো- ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রংপুরের পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, দিনাজপুর সদর হাসপাতাল, কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পাবনার সদর জেনারেল হাসপাতাল ও আটঘরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
এগুলোর মধ্যে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে সব চিকিৎসককেই উপস্থিত পাওয়া যায়। তবে জরুরি বিভাগের এক কর্মচারী (স্ট্রেচার বিয়ারার) দায়িত্ব পালনকালে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে ঘুষ নিতে গিয়ে দুদক টিমের কাছে ধরা পড়েন। দুদক টিমের সুপারিশে তাকে তাৎক্ষণিক বরখাস্ত করা হয়।
দুদক সূত্র জানায়, উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসকদের নিয়োগ দেওয়া হলেও তারা হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা না দিয়ে বাইরে বাণিজ্যিকভাবে রোগী দেখেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও শীর্ষ কর্মকর্তারা মাসের বেশিরভাগ সময় অনুপস্থিত থাকেন। এ সুযোগে কনসালটেন্ট এবং মেডিকেল অফিসাররাও কর্মস্থলে ঠিকমতো থাকেন না। অনেকে সপ্তাহের দু’একদিন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই পুরো মাসের বেতন তোলেন।