নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং দুই সিটির সম্প্রসারিত অংশের কাউন্সিলর নির্বাচন হবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। একই দিনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কিশোরগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচনের জন্য তারিখ রেখে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল নির্বাচন কমিশন সভা শেষে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এ দুই নির্বাচনের বিস্তারিত সময়সূচি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। বিকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে ৪৩তম কমিশন সভা হয়।
এ ছাড়া ৮/৯ মার্চ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের ভোট এবং মার্চের প্রথম সপ্তাহে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এই দুই নির্বাচনের বিস্তারিত সূচি আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করবে কমিশন। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালী, আমতলী পৌরসভাসহ ১১ ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হবে বলে জানিয়েছে ইসি। ঢাকায় ভোট : ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ঢাকা উত্তরের মেয়র পদ ও দুই সিটির (উত্তর-দক্ষিণ ৩৬ ওয়ার্ড) সম্প্রসারিত অংশের কাউন্সিলর ভোটের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৩১ জানুয়ারি, মনোনয়নপত্র বাছাই ৩ ফেব্রুয়ারি, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি, ২৮ ফেব্রুয়ারি ভোট হবে। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মেয়র আনিসুল হক। তার মৃত্যুতে ডিএনসিসির মেয়র পদটি ১ ডিসেম্বর শূন্য ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ওই পদে উপনির্বাচনের পাশাপাশি ঢাকার দুই সিটি নতুন ৩৬টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার জন্য গত বছর তফসিলও ঘোষণা করেছিল ইসি। কিন্তু আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে সেই ভোট এতদিন আটকে ছিল। সম্প্রতি আদালতের স্থগিতাদেশ উঠে গেলে ঢাকা সিটির এ নির্বাচনের পথ তৈরি হয়। কিশোরগঞ্জ-১ আসনে ভোট : নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, কিশোরগঞ্জ-১ আসনের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মৃত্যুবরণ করায় তিনি শপথ গ্রহণ করেননি। যেহেতু তিনি শপথ গ্রহণ করেননি তাই সাধারণ নির্বাচন হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী কিশোরগঞ্জ-১ আসনের নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৩০ জানুয়ারি, বাছাই ২ ফেব্রুয়ারি, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি, ভোট হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি। কিশোরগঞ্জ-১ সংসদীয় আসনে ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে এমপি হিসেবে নির্বাচিত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শপথ নেওয়ার আগেই মারা যান। ফলে এ আসনে নতুন করে ভোট করার প্রয়োজন হচ্ছে। উপজেলায় প্রথম ধাপে ভোট ৮/৯ মার্চ : এবারে পাঁচ ধাপে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে প্রথম ধাপের ভোট হবে ৮ অথবা ৯ মার্চ এবং দ্বিতীয় ধাপ ১৮ মার্চ, তৃতীয় ধাপ ২৪ মার্চ, চতুর্থ ধাপ ৩১ মার্চ ও পঞ্চম ধাপের ভোট রমজানের পরে করার প্রস্তাব দিয়েছে ইসি সচিবালয়। এ বিষয়ে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেবে। গতকাল কমিশন সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। পরে ইসি সচিব জানান, সারা দেশে ৫ ধাপে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হবে। প্রথম ধাপের ভোট হবে ৮/৯ মার্চ। ৭-৮ দিন পর পর দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের ভোট হবে। পঞ্চম ধাপের ভোট হবে পরীক্ষা ও রমজান শেষে ঈদের পরে। পরবর্তী কমিশন সভায় কখন, কোন উপজেলায় ভোট হবে সে সংক্রান্ত তফসিল ঘোষণা করা হবে। প্রথম ধাপ ৮/৯ মার্চ; দ্বিতীয় ধাপ ১৮ মার্চ, তৃতীয় ধাপ ২৪ মার্চ ও চতুর্থ ধাপ ৩১ মার্চ করার প্রস্তাব রয়েছে ইসি সচিবালয়ের। বাংলাদেশে বর্তমানে ৪৯২টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের মার্চ-মে মাসে ছয় ধাপে এর অধিকাংশগুলোতে ভোট হয়েছিল। আইনে মেয়াদ শেষের পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা থাকায় এই নির্বাচন করতে হচ্ছে। ১৯৮৫ সালে উপজেলা পরিষদ চালু হওয়ার পর ১৯৯০ ও ২০০৯ সালে একদিনেই ভোট হয়েছিল। ২০১৪ সালে ছয় ধাপে ভোট করেছিল তৎকালীন ইসি। ইতিমধ্যে ইসি সচিব বলেন, আট বিভাগের উপজেলাগুলোকে চার দিনে চার ধাপে ভোট করা হবে। বাকিগুলোর মেয়াদোত্তীর্ণ কবে হচ্ছে তা বিবেচনায় নিয়ে আরেকটি ধাপে ভোট শেষ করা হবে। সেক্ষেত্রে ৫ ধাপে ভোট করা হচ্ছে। উপজেলা ভোটেও ব্যবহার হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন। জেলার সদর উপজেলায় পুরোপুরি ইভিএম ব্যবহার করা হবে। স্থানীয় সরকারের ভোটে কে এলো তা ইসির বিবেচ্য নয় : সংসদ নির্বাচনের পর দলীয় প্রতীকে উপজেলা ভোটে বিএনপির অংশ গ্রহণ নিয়ে এখনো ঘোষণা আসেনি। এরই মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে সংসদের ফল প্রত্যাখ্যানের পর দলটি উপজেলায় অংশ নেবে না। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আগামী মে মাসের মধ্যে উপজেলার মেয়াদোত্তীর্ণ হবে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের ভোটে কে এলো কে এলো না তা ইসির বিবেচ্য বিষয় নয়। প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই : সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেছেন, সারা বছর বিভিন্ন নির্বাচন থাকে। তাই নিজেদের কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজের জ্ঞানকে প্রসারিত করা যায়। যারা রাজনীতি করেন তাদের কাছে যেতে হবে। তাদের আপনাদের কর্ম পরিধিও বোঝাতে হবে। আপনাদের মাধ্যমে দেশের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রত্যেকটা অনুশীলন শিক্ষণীয়। যত বেশি জানার চেষ্টা করবেন, ততবেশি ক্ষেত্র প্রসারিত হবে। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন আগে একটি বড় নির্বাচন গেল। সেখানে আপনাদের কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেখানে কাজ করতে গিয়ে আপনাদেও যেসব বিষয়ে ঘাটতি আছে বলে মনে হয়েছে সেগুলো এই প্রশিক্ষণ থেকে জানার চেষ্টা করবেন। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইটিআই ভবনে নবনিয়োগকৃত ও পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মচারীদের ওরিয়েন্টেশন কোর্সের উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।