নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এখন আমাদের প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের ঐক্যের যোগসূত্র হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সাম্য ও ন্যায়বিচার এবং উন্নয়ন ও অগ্রগতি। বিজয়ের পর আমরা সরকার গঠন করেছি। সরকারের দৃষ্টিতে দল-মত-নির্বিশেষে দেশের সব নাগরিক সমান। আমরা সবার জন্য কাজ করব।’ গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টায় তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বিটিভি ওয়ার্ল্ডসহ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে একযোগে জাতির উদ্দেশে এ ভাষণ দেন।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর দেওয়া এ ভাষণে শেখ হাসিনা দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান এবং তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার নানা বিষয় তুলে ধরেন।
দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভাষণের শুরুতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে বিপুলভাবে বিজয়ী করার জন্য আমি আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে আমি মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে শোকরিয়া আদায় করছি। যাঁরা নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের বিজয়ী করেছেন, আমি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ। যাঁরা আমাদের ভোট দেননি, আমি তাঁদেরও ধন্যবাদ জানাচ্ছি নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব দল ও জোট এবং প্রার্থীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সবার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সহযোগিতায় আমরা এ বিশাল বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য আমি দেশবাসী, নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর সব সদস্যের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয় ছিল খুবই প্রত্যাশিত। নির্বাচনের আগে দেশি-বিদেশি জরিপগুলোও এ রকমই ফলাফলের ইঙ্গিত দিয়েছিল। লন্ডনভিত্তিক ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এবং রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের জরিপের ফল আপনারা লক্ষ করেছেন। আমাদের এই ল্যান্ড-স্লাইড বিজয়ের কয়েকটি কারণ আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিগত ১০ বছরে দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, সাধারণ মানুষ তার সুফল পেয়েছে। ১০ বছর আগে যে বালক-বালিকাটি হারিকেন বা কুপির আলোয় পড়ালেখা করত, গ্রামে পাকা রাস্তা দেখেনি, তরুণ বয়সে সে এখন বৈদ্যুতিক বাতির আলোয় পড়াশোনা করছে, মোটরযানে যাতায়াত করছে। যে বয়স্ক পুরুষ-নারী পরিবারে ছিল অবহেলিত-অপাঙক্তেয়, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা তাঁকে সংসারে সম্মানের জায়গায় নিয়ে গেছে। গ্রামবাংলার খুব কম পরিবারই আছে, যে পরিবার সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর উপকারভোগী নয়। কোনো না কোনোভাবে প্রতিটি পরিবার উপকৃত হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘কৃষি শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, ভ্যান বা রিকশাচালকসহ নিম্নবিত্তের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। ১০ বছর আগে একজন কৃষি শ্রমিক তাঁর দৈনিক মজুরি দিয়ে বড়জোর তিন কেজি চাল কিনতে পারতেন। এখন তিনি ১০ কেজি চাল কিনতে পারেন। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বিগত ১০ বছরে আড়াই থেকে তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাও সমহারে বেড়েছে। যেমন পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন এক হাজার ৬০০ টাকা থেকে পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে আট হাজার টাকা হয়েছে। কৃষিজীবীদের সার, বীজসহ বিভিন্ন উপকরণে ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। ব্যবসায় এবং শিল্পবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে একদিকে কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে রপ্তানি বাণিজ্য প্রসারিত হয়েছে; যার সুবিধা সাধারণ জনগণ পাচ্ছে। পদ্মা সেতু, ঢাকা মেট্রো রেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ , মহাসড়কগুলোকে চার লেনে উন্নীতকরণসহ মেগা প্রকল্পগুলো দৃশ্যমান হওয়ায় সাধারণ মানুষের বর্তমান সরকারের ওপর আস্থা জন্মেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ নিজের এবং দেশের মর্যাদা চায়। আমরা বাংলাদেশকে সেই মর্যাদা এনে দিতে পেরেছি। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ৪৬ বছর পর উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা প্রাপ্তি জনগণকেও গর্বিত করেছে। ভিক্ষুকের দেশের দুর্নাম ঘুচেছে। যাঁরা মানুষকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন, তাঁদের মানুষ মর্যাদা দেবে—এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের পর থেকেই নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। প্রতিটি সম্ভাব্য প্রার্থী নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগ বাড়িয়েছেন এবং এলাকার উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। এবারের নির্বাচনে দলের প্রত্যেক নেতাকর্মী মনোনীত প্রার্থীর জন্য কাজ করেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি ছিল ব্যাপক। সরাসরি সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি আমরা ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছি। নির্বাচনী প্রচারকালে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, শিক্ষাবিদ, সাবেক আমলা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ধর্মীয় নেতা—সবাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন। একটি সমাজের প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যখন কোনো দলের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে তখন তাকে কোনোভাবেই আটকে রাখা যায় না।’
বিএনপির পরাজয়ের কারণ ব্যাখ্যায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘এক আসনে তিন-চারজন বা তারও বেশি প্রার্থী মনোনয়ন। মনোনয়ন নিয়ে ব্যাপক বাণিজ্যের অভিযোগ এবং দুর্বল প্রার্থী মনোনয়ন। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা। নিজেরা জনগণের জন্য কী করবে, সে কথা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। অপরদিকে ক্ষমতায় গেলে আমাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের প্রতিহিংসামূলক ব্যবস্থা নেবে, তাদের প্রচারণায় প্রাধান্য পেয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করা ছাড়া নিজেদের সাফল্যগাথা তুলে ধরতে পারেনি। তা ছাড়া ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী অগ্নিসন্ত্রাস ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের মন থেকে মুছে যায়নি। সর্বোপরি, বিএনপির ধানের শীষ মার্কায় যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের মনোনয়ন তরুণ ভোটাররা মেনে নিতে পারেনি। তরুণরা আর যা-ই হোক, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির পক্ষ নিতে পারে না। এ রকম আরো বহু উদাহরণ দেওয়া সম্ভব, যার মাধ্যমে প্রমাণ করা যাবে যে সাধারণ ভোটাররা বিএনপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল এবং নৌকার অনুকূলে এবার গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা টানা তৃতীয়বার এবং ১৯৯৬ সাল থেকে চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সরকার পরিচালনার ম্যান্ডেট দিয়েছেন। আপনাদের এবারের এই নিরঙ্কুশ সমর্থন আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাদের এই রায়কে দেশবাসীর সেবা এবং জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ শেষ করার ও সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ বলে মনে করি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কথামালার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিই, তা বাস্তবায়ন করি। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে যেসব প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছিলাম তার বেশির ভাগই এরই মধ্যে বাস্তবায়ন করেছি।’ তিনি বলেন, “একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আমরা ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ’ স্লোগানসংবলিত নির্বাচন ইশতেহার ঘোষণা করেছি। ইশতেহার ঘোষণাকালে আমি এর সারাংশ আপনাদের সামনে তুলে ধরেছিলাম। আপনারা অনেকেই দলিলটি এরই মধ্যে পড়েছেন। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আমাদের যেকোনো নীতিমালা প্রণয়নে এবং উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে এই ইশতেহার পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে।’
সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও অর্জনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এই পথচলা মসৃণ ছিল না। শত প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করে আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছি; যার সুফল আজ জনগণ পাচ্ছে। এ অর্জন শুধু সরকারের নয়, এ অর্জন দেশের প্রত্যেক পরিশ্রমী মানুষের।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১০ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে বিরাট ব্যবধান। মানুষের জীবনমান এখন অনেক উন্নত। এখন মানুষ সুন্দর করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে। দেশকে আমরা আরো উন্নত করতে চাই। তাই সামনে অনেক কাজ আমাদের। আরো কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। আপনাদের সঙ্গে নিয়ে সেই বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে পারব, ইনশাআল্লাহ।’
তরুণদের কর্মসংস্থানের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব শিক্ষিত তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। তরুণদের কর্মসংস্থানের জন্য আমরা বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত করা, তরুণ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা ও প্রণোদনা প্রদান, সরকারি উদ্যোগে কর্মসংস্থান পরিকল্পনা, তরুণ উদ্ভাবকদের উদ্ভাবনসমূহ আন্তর্জাতিকভাবে পেটেন্ট করার উদ্যোগ গ্রহণ, দেশ-বিদেশে কর্মে নিয়োগের জন্য কারিগরি বিষয়ে দক্ষ কর্মী তৈরি এবং কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনবল গড়ে তোলার জন্য প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কারিগরি কলেজ স্থাপন করা। ইতিমধ্যে কারিগরি কলেজ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আগামী পাঁচ বছরে আমরা দেড় কোটি কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলেছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ বিনিয়োগের জন্য আসছেন। সারা দেশে দুই ডজনের বেশি হাইটেক পার্ক এবং আইটি ভিলেজ নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। কৃষি, মত্স্য, পশুপালন, পর্যটন, সেবা খাতসহ অন্যান্য খাতে প্রাতিষ্ঠানিক এবং আত্ম-কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের প্রতিটি গ্রামে শহরের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে। ছেলে-মেয়েদের উন্নত পরিবেশে লেখাপড়ার সুযোগ তৈরি করা হবে। সুপেয় পানি এবং উন্নতমানের পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। সুস্থ বিনোদন এবং খেলাধুলার জন্য অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। ইন্টারনেট/তথ্য-প্রযুক্তি সর্বত্র পৌঁছে যাবে।’
বিরোধী দলকে সংসদে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারি সেবা খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় জীবনের সর্বত্র আইনের শাসন সমুন্নত রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করব। জাতীয় সংসদ হবে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রবিন্দু। একাদশ সংসদে বিরোধী দলের সদস্য সংখ্যা নিতান্তই কম। তবে সংখ্যা দিয়ে আমরা তাঁদের বিবেচনা করব না। সংখ্যা যত কমই হোক, সংসদে যেকোনো সদস্যের ন্যায্য ও যৌক্তিক প্রস্তাব/আলোচনা/সমালোচনার যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে। আমি বিরোধী দলের নির্বাচিত সদস্যদের শপথ নিয়ে সংসদে যোগদানের আহ্বান জানাচ্ছি।’
দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিজের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি, দুর্নীতি নিয়ে সমাজের সর্বস্তরে অস্বস্তি রয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের নিজেদের শোধরানোর আহ্বান জানাচ্ছি। আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্নীতি উচ্ছেদ করা হবে। আমরা তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি নির্মূল করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। দুর্নীতি বন্ধে জনগণের অংশগ্রহণ জরুরি। তাই, গণমাধ্যমের সহায়তায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরির কাজ অব্যাহত থাকবে। আপনারা দেখেছেন আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে ইতিমধ্যেই মাদক, জঙ্গি তত্পরতা এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে সফলতা অর্জন করেছি। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যেখানে হিংসা-বিদ্বেষ হানাহানি থাকবে না। সকল ধর্ম-বর্ণ এবং সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন। সকলে নিজ নিজ ধর্ম যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন করতে পারবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধর্মীয় শিক্ষার প্রসারে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছি। মাদরাসা শিক্ষাকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে উত্পাদনমুখী করা হচ্ছে। কওমি মাদরাসার দাওয়ারে হাদিস ডিগ্রিকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমানের করা হয়েছে। সারা দেশে ৫৬০টি মসজিদ-কাম-ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিল। আর ২০১৮ সালে আরেক বিজয়ের মাসে এ দেশের ভোটারগণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে, আমাদের দেশ সেবার সুযোগ করে দিয়েছে। আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি, আমার ব্যক্তিগত কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। বাবা-মা-ভাই, আত্মীয়-পরিজনকে হারিয়ে আমি রাজনীতি করছি শুধু জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য, এ দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। এ দেশের সাধারণ মানুষ যাতে ভালোভাবে বাঁচতে পারেন, উন্নত-সমৃদ্ধ জীবনের অধিকারী হতে পারেন, তা বাস্তবায়ন করাই আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নবীন-প্রবীণের সংমিশ্রণে আমি আমার মন্ত্রিসভা গঠন করেছি। প্রবীণদের অভিজ্ঞতা আর নবীনদের উদ্যম—এই দুইয়ের সমন্বয়ে আমরা আমাদের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। আপনারা আমার ওপর আস্থা রেখে যে রায় দিয়েছেন, কথা দিচ্ছি আমি প্রাণপণ চেষ্টা করব সে আস্থার প্রতিদান দিতে। এ জন্য দল-মত-নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিকের সমর্থন এবং সহযোগিতা চাই। আপনাদের সহযোগিতায় আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করব।’
বক্তব্যের শেষে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা থেকে উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ/প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল/এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি/নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।নিজস্ব প্রতিবেদক