ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে বিয়ে করাই তার পেশা

শাহনুর রহমান সিক্ত। পড়াশোনা করেছেন মাত্র ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত। তবে সব সময় নিজেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্রী পরিচয় দিতেন তিনি। শুধু তাই নয়, নিজেকে ৩৬তম বিসিএস ক্যাডারের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবেও পরিচয় দিয়ে বেড়াতেন। তবে শেষ পর্যন্ত প্রতারণা মামলায় কারাগারে যেতে হয়েছে তাকে। 
সাবেক স্বামী লুৎফর রহমানের দায়ের করা একটি প্রতারণার মামলায় শাহনুর রহমান সিক্তকে গত ২ ফেব্রুয়ারি উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।  মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জান্নাত খান দৈনিক আমাদের সময় অনলাইনকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 
এসআই জান্নাত খান বলেন, ‘তার (সিক্ত) সাবেক স্বামীর দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এরপর আদালতের নির্দেশে তাকে জেলেহাজতে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তারের সময় সিক্ত নিজেকে অন্তঃসত্ত্বা বলে দাবি করেছিলেন। তার বর্তমান স্বামীও জানান, সিক্ত তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তাই মানবিক দিক বিবেচনায় তার রিমান্ড আবেদন করা হয়নি।’ 
এসআই আরও বলেন, ‘এই নারী ভয়ানক প্রতারক। তার নামে এখন পর্যন্ত দুই সাবেক স্বামী মামলা দায়ের করেছেন। আরও পাঁচটি বিয়ে সম্পর্কে আমার কাছে তথ্য আছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তবে তার নামে আরও প্রতারণার মামলা হবে।’   
       
পুলিশ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়া সিক্ত বড় হয়েছেন বিপিএটিসির কোয়ার্টারে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তিনি নিজেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে এক ডজন বিয়ে করেছেন। আর বিয়ের পরে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।
সিক্ত অন্যদের কাছে বলে বেড়াতেন, তার মা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় ব্যাচের ছাত্রী ও বিপিএটিসি’র ট্রেনিং ডিরেক্টর। বড় ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক ছাত্র ও বিপিএটিসি’র ফিজিকাল ইন্সট্রাক্টার। বড়বোন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি বিভাগের অধ্যাপক। দুলাভাই প্রকৌশলী, একমাত্র চাচা সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবং মামা একজন মন্ত্রী।
এসব পরিচয় দিয়েই অনেক ব্যক্তিকে তার প্রেমের জালে ফাঁসিয়েছেন শাহনুর রহমান সিক্ত। তার মধ্যে ১২ জনকে বিয়েও করেছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। বিয়ের পরে স্বামীর পরিচিত ব্যক্তিদের চাকরি দেওয়ার প্রলোভন ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নাম করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সিক্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিক্তর বাবা বিপিএটিসি’র একজন গাড়িচালক ছিলেন। বাবার অকাল মৃত্যুর পর তার মা বিপিএটিসি’র আয়ার চাকরি পেয়েছেন। সেই সুবাদে সিক্ত তার মায়ের সঙ্গে বিপিএটিসি’র কর্মচারী কোয়ার্টারে বড় হয়েছেন। আর বিসিএস ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ নিতে হয় বিপিএটিসিতে।  এ কারণে সিক্ত প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরির পদ, পদমর্যাদাসহ বিভিন্ন বিষয় আয়ত্ব করে ফেলেন। অপরদিকে বিপিএটিসি’র কাছেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হওয়ায় সিক্ত সেখানকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মেলামেশা করতেন। এমনকি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন তিনি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সিক্তর এই ধরনের কাজে পরিবারের সদস্যরা তাকে সহায়তা করতেন। এ কারণে একটি প্রতারণার মামলায় সিক্তর দুলাভাই আফতাব উদ্দিনকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তিনিও এখন কারাগারে রয়েছেন।

Others শীর্ষ সংবাদ