কিডনির অসুখে কী করবেন : ডায়ালিসিস না কিডনি প্রতিস্থাপন?

কিডনির অসুখ সাধারণত দু’ধরনের। অ্যাকিউট এবং ক্রনিক। অ্যাকিউট কিডনির অসুখ হয় সাধারণত কোনো সংক্রমণ, ডায়েরিয়া বা কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে। অ্যাকিউট কিডনির অসুখে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা গেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগী সুস্থ হয়ে যান। অন্যদিকে, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ একেবারেই সাইলেন্ট কিলার। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যার কোনো আগাম উপসর্গ থাকে না। ফলে অসুখটা এমন পর্যায়ে গিয়ে ধরা পড়ে যে, তখন আর নিয়ন্ত্রণ করার কোনো উপায় থাকে না। হয়তো অসুখের বেড়ে যাওয়াকে একটু ধীর করা যেতে পারে, কিন্তু সম্পূর্ণ সারানো যায় না।

কখন রেনাল রিপ্লেসমেন্ট?
যখন দুটি কিডনিই আস্তে আস্তে কাজ করা বন্ধ করে দেয়, অর্থাৎ কিডনির স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ১৫ শতাংশ নেমে গিয়ে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়, তখন রেনাল রিপ্লেসমেন্টের দিকে যেতে হয়। রেনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি দু’ ধরনের— ১) ডায়ালিসিস এবং ২) কিডনি প্রতিস্থাপন।

ডায়ালিসিস বনাম প্রতিস্থাপন
অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন আসে, এই দুটির মধ্যে কোনটা ভালো? নিশ্চিতভাবেই কিডনি প্রতিস্থাপনই ভালো। কারণ, এখন আমরা যতই বলি ডায়ালিসিসে অনেক আধুনিক প্রযুক্তি এসেছে, জটিলতা খুব একটা নেই, ব্যথাহীন, কিন্তু ডায়ালিসিস সপ্তাহে এক থেকে তিন দিন করতে হতে পারে। ফলে একজন রোগীকে তার স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে বেরিয়ে এসে ডায়ালিসিসে অনেকটা সময় দিতে হয়। হাতে সুচ ফুটিয়ে যন্ত্রের সামনে শুয়ে থাকায় একটা মানসিক প্রভাবও পড়তে পারে রোগীর ওপর। অন্যদিকে, একবার কিডনি প্রতিস্থাপন হয়ে গেলে রোগীর জীবনযাত্রার মান একেবারেই স্বাভাবিক হয়ে যায়। ডায়ালিসিসে খাবারদাবারে কিছু নিয়ন্ত্রণ থাকে, কিন্তু প্রতিস্থাপনের পর সেরকম কোনো বিধিনিষেধ নেই। আর থাকলে সেটা খুবই কম।

কীভাবে প্রতিস্থাপন?
কিডনি প্রতিস্থাপনে শরীরের দুটি কিডনিকে রেখেই নিচের দিকে ইলিয়াক আর্টারিতে তৃতীয় কিডনি লাগানো হয়। আর ইউরেটারকে নর্মাল ব্লাডারের সঙ্গে লাগিয়ে দেয়া হয়। এরপর এই তৃতীয় কিডনি স্বাভাবিক কিডনির মতো আচরণ করতে শুরু করে।

প্রতিস্থাপনের পর কি কোনো জটিলতা দেখা দিতে পারে?
শরীর নতুন কিডনিকে ফরেন বডি হিসেবে দেখে। ফলে শরীর তার সঙ্গে লড়াই শুরু করে দেয়। ফলে নতুন কিডনি রিজেক্ট বা শরীরের সঙ্গে খাপ না খাওয়ার একটা আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। এজন্য কিডনি প্রতিস্থাপনের পর রোগীকে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট ইউনিটে একজন নেফ্রোলজিস্টের অধীনে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। যেখানে নেফ্রোলজিস্ট ও তার দলের কাজ রোগীকে এমন ওষুধ (ইমিউনো সাপ্রেসো মেডিকেশন) দেয়া যাতে শরীরের ইমিউনিটি কমে যায়। নতুন কিডনির সঙ্গে যাতে শরীরের ইমিউন সিস্টেম লড়াই করতে না পারে।

তবে এতেও সমস্যা আছে। শরীরের স্বাভাবিক ইমিউনিটিও কমে যায়। শরীরের বাইরের সংক্রমণ ঢোকার প্রবণতা বাড়ে। এজন্য হাসপাতালে এবং রোগী বাড়ি ফেরার পর অন্তত প্রথম ছয় মাস বিশেষ সতর্কতা দরকার, যাতে রোগীর শরীরে কোনও সংক্রমণ বাসা বাঁধতে না পারে। কোনও ফাঙ্গাল ইনফেকশন, সিএমভি বা নিউমোসিস্টিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এগুলো খুব জটিল অসুখ। ওই সময় তাই আগে থেকেই ওইসব রোগের প্রতিরোধে ওষুধ দিয়ে রাখা হয়। শরীরের সঙ্গে নতুন কিডনি মানিয়ে নিতে শুরু করলে আস্তে আস্তে ইমিউনো সাপ্রেসো মেডিসিনের ডোজটা কমানো হয়। আগে প্রতিস্থাপনের পর ৩০ শতাংশ রিজেক্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকলে, এক বছর পর সেটা কমতে কমতে ৫ শতাংশ এসে দাঁড়াবে।

কিডনির ডোনার কে?
এক, লিভিং কিডনি ডোনার এবং দুই, ডিজিসড কিডনি ডোনার (ব্রেন ডেথ, হার্ট ও বাকি অঙ্গ সচল)।
লিভিং কিডনি ডোনার : যেহেতু আমাদের দুটি কিডনি, তাই একটা কিডনি দিলে খুব একটা অসুবিধা হয় না। যিনি কিডনি দেবেন কিডনি নেয়ার আগে তার বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। রক্ত, ইউরিন, আলট্রাসাউন্ড, এক্স-রে ইত্যাদি। দেখা হয় কিডনি দেয়ার পর তার যাতে কোনো শারীরিক ক্ষতি না হয়। যদি দেখা যায় কিডনি দেয়ার পরও তিনি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন, তার আয়ু এক দিনও কমবে না, তখনই তার কিডনি নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ট্রান্সপ্ল্যান্ট অ্যাক্টে বলা আছে, পরিবারের খুব আপনজনেরা কিডনি দিলেই সবচেয়ে ভালো।

প্রতিস্থাপনের পর জীবনযাপন
 প্রতিস্থাপনের পর বাইরে বেরোলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে
 নেফ্রোলজিস্টের পরামর্শমতো ঠিক সময় ওষুধ খাওয়া এবং ফলোআপে থাকা খুব জরুরি।
আমাদের দেশে যেহেতু পানিবাহিত অসুখ খুব বেশি হয়, তাই পানি ফুটিয়ে খান। আর ওজন বাড়তে দেয়া চলবে না।

Others