ইরানের কাছে সৌদি জাহাজে হামলা, উত্তেজনা

আমেরিকা ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে আরও জটিল হল পারস্য উপসাগরের পরিস্থিতি। সৌদি আরবের দাবি, অজ্ঞাত জাহাজ থেকে তাদের দু’টি তেল বোঝাই ট্যাঙ্কার জাহাজে হামলা চালানো হয়েছে। জাহাজগুলো তেল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছিলো। মার্কিন প্রশাসন প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, হামলার পেছনে ইরান দায়ী থাকতে পারে। আল-জাজিরা, ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল।

সৌদির অভিযোগ, সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর ফুজাইরা শহরের কাছে পারস্য উপসাগরের উপর সোমবার রাতে এই হামলা চালানো হয়। সৌদি তেল বোঝাই জাহাজে বড় কোনও জলযান জোরাল ধাক্কা মারার পর বিস্ফোরণ ঘটায় দুটি। এর জেরে জাহাজ দু’টির বড় অংশ ভেঙে তুবড়ে গিয়েছে।

তেল বোঝাই ট্যাঙ্কার দু’টি নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই হামলায় কেউ হতাহত হননি। সৌদি আরবের দাবি, পারস্য উপসাগরে উত্তেজনা বাড়াতেই এবং তাদের তেল নির্ভর অর্থনীতির ক্ষতি করতে পরিকল্পিতভাবে এই নাশকতা তথা হামলা চালানো হয়েছে।

তাদের দাবি, ট্যাঙ্কারে ধাক্কা মারা হয়েছিল যাতে বিস্ফোরণে তেল ট্যাঙ্কারবাহী জাহাজের কনভয়টাই উড়ে যায়। সেটা হলে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারত এবং শতাধিক নাবিক ও জাহাজকর্মীর মৃত্যু হতে পারত। পারস্য উপসাগর জাহাজ চলাচলের অযোগ্য হয়ে যেত। সার্বিকভাবে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলির অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতি হত।

সৌদি আরবের ইঙ্গিত ছিল শত্রু দেশ ইরানের দিকে। তবে ব্রিটেন ও রাশিয়া উপসাগরীয় দেশগুলিকে সতর্ক করে দিয়েছে বলেছে, ‘এই গাফিলতি বা দুর্ঘটনা থেকে সব দেশকে সাবধান থাকতে হবে। যাতে সংঘাত বা যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’

এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে কাতার, বাহরিন, ইরাক, ইরান, কুয়েত, ওমান, আমিরশাহী, জর্ডন। কারণ এই দেশগুলির যাবতীয় তেল ব্যবসা, আমদানি, রপ্তানি চলে পারস্য উপসাগর ও হরমুজ প্রণালী দিয়ে।

আমেরিকা ও ইরানের মধ্যে পরমাণু চুক্তি নিয়ে তীব্র সংঘাত চলছে। এই সংঘাতের মধ্যেই সৌদি তেল ট্যাঙ্কারে নাশকতার ঘটনা উত্তেজনাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

তবে ইরানের জড়িত থাকার দাবি উড়িয়ে দিয়ে সেদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্বাস মৌসভি বলেছেন, ‘এই ঘটনা নাশকতা বা দুর্ঘটনা যাই হোক, খুবই নিন্দনীয়, দুঃখজনক। ইরান তদন্তে সব রকমভাবে সহযোগিতা করবে। উপসাগরীয় এলাকায় সংঘাত বাড়াতেই এই ঘটনা ঘটানো হয়ে থাকতে পারে। আমাদের সবাইকে আঞ্চলিক নজরদারি আরওবাড়াতে হবে। কারণ হরমুজ প্রণালী ও উপসাগর দিয়ে দৈনিক দেড় কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল বোঝাই জাহাজ যাতায়াত করে। সেই জাহাজের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।’

এদিকে, ইরান ইস্যুতে আলোচনার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও তাঁর পূর্বনির্ধারিত রাশিয়া সফর বাতিল করে ব্রাসেলসে পৌঁছেছেন। সেখানে ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করার কথা তার। কিন্তু জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা পম্পেও’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রাজি হননি। আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা ফেডেরিকা মোঘেরিনি বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে কোন সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক থাকা উচিত।

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ