শরবত ভাবলে ভুল করবেন; আসলে ওয়াসার পানি!

ছবি দেখে আপনার কি মনে হয়? বেলের শরবতের ছবি? নাকি কমলার শরবত? নাকি বলবেন পেঁপের শরবত?

না। এটা কোনো শরবতই না। এটা ঢাকা ওয়াসার পানি।

রাজধানীর কদমতলীর পাটেরবাগ এলাকার প্রায় সব বাড়িতেই ওয়াসার পানি মিলছে এই রঙের।

ছবিটি গতকালের। তুলেছেন কালের কণ্ঠের প্রধান ফটো সাংবাদিক শেখ হাসান।

কালের কণ্ঠের আজকের প্রিন্ট ভার্সনে ‘হাইকোর্টকে হাইকোর্ট দেখাচ্ছে ওয়াসা’ সংবাদে এই ছবিটি প্রকাশের পর তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।

১৭ এপ্রিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গবেষণা উপস্থাপন করে জানায়, ঢাকা ওয়াসার পানির নিম্নমানের কারণে ৯৩ শতাংশ গ্রাহক বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানি পানের উপযোগী করেন। এর মধ্যে ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে পান করেন। তবে টিআইবির এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান বলেন, ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়। তাঁর এ বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন রাজধানীর কয়েক এলাকার বাসিন্দারা।

গত ২৩ এপ্রিল ঢাকা ওয়াসার পানি কেমন, তা প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) পান করানোর জন্য কাচের জগ ও বোতলে ওয়াসার পানি, গ্লাস, লেবু ও চিনির প্যাকেট নিয়ে ওয়াসা ভবনের সামনে যান জুরাইন ও পূর্ব রামপুরার কয়েকজন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত এমডি বা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের কারও সঙ্গে তাঁরা দেখা করতে পারেননি। ওয়াসা ভবনের সামনে পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়। প্রতিবাদ করতে আসা ব্যক্তিদের দেড় ঘণ্টা ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে অবশ্য তাঁদের ভেতরে যেতে দেওয়া হয়।

গতকাল সোমবার রাজধানীর কোন কোন এলাকায় ঢাকা ওয়াসার পানি দূষিত ও অনিরাপদ তা পরীক্ষা করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল না করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষায় কত টাকা খরচ হবে তা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামীকাল বুধবারের মধ্যে এ তথ্য আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালত আগামীকাল বুধবার পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন।

বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল সোমবার এ আদেশ দেন। এই আদেশের আগে আদালত বলেছেন, ঢাকা ওয়াসার ১১টি পানির জোন রয়েছে। প্রতিটি থেকে দুই বোতল পানি নিয়েই তো পরীক্ষা করা যায়। কিন্তু তারা (স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়) তা করছে না। তারা বলছে, পানি পরীক্ষার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু কত টাকা লাগবে তা বলছে না। তারা হাইকোর্টকে হাইকোর্ট দেখাচ্ছে। এ সময় রিট আবেদনকারী মো. তানভীর আহমেদ ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে রিট আবেদনকারী আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ আদালতকে জানিয়েছেন, ঢাকার ১৬টি এলাকার পানি ব্যবহারের অনুপযোগী। এসব এলাকা হলো—জুরাইন, দনিয়া, শ্যামপুর, উত্তরা সেক্টর-৪, মিরপুর, পল্লবী, লালবাগ, রাজার দেউড়ি, মালিবাগ, বনশ্রী, মাদারটেক, গোড়ান, রায়সাহেব বাজার, মোহাম্মদপুরের বসিলা, কাজিপাড়া ও সদরঘাট।

গত বছর ৬ নভেম্বর হাইকোর্টের দেওয়া এক আদেশে ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং আইসিডিডিআরবি’র প্রতিনিধির সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির নামের তালিকা গত ১৮ এপ্রিল অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে পাঠায় মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মাদ সাঈদ-উদ-রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নমুনা সংগ্রহ করে তার নির্দিষ্ট পরীক্ষার পর বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করতে একটি তহবিলের পাশাপাশি ল্যাবরেটরিসহ ঢাকা ওয়াসার সামগ্রিক প্রচেষ্টা দরকার। এসব কাজের জন্য যদি তহবিল গঠনও করা হয় এবং বিরতিহীনভাবে ওয়াসার তিনটি ল্যাবরেটরিতে একযোগে কাজ করলে এ প্রতিবেদন তৈরি করতে কমপক্ষে চার মাস সময় প্রয়োজন। এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী

আদালতকে জানান, কমিটি একটি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করেছে। তা আদালতে উপস্থাপনের জন্য সময় দরকার। আদালত ৭ মে আদেশের দিন নির্ধারণ করেন। তবে ৮ মে আদালত কোন এলাকার পানি দূষিত ও অনিরাপদ তা রিট আবেদনকারী আইনজীবীর কাছে জানতে চান। এ অবস্থায় গতকাল ১৬টি এলাকার নামের তালিকা দাখিল করে আইনজীবী তানভীর আহমেদ আদালতকে বলেন, সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এসব এলাকার নাম জানতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আবারও এক সপ্তাহ সময় আবেদন করা হয়। এই সময় আবেদনে আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ