শফিকুল ইসলাম সোহাগ;৯ বছরের প্রতাপশালী রাষ্ট্রনায়ক, বিরোধীদলীয় নেতা, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এখন অনেকটা নিঃসঙ্গ। পরিজন বলতে পাশে থাকার মতো কেউই নেই। পরিচর্চা করেন স্টাফরা। অধিকাংশ সময় কাটে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। দলের নেতা-কর্মীরা এখন আর ভিড় করেন না বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে। দলের কোনো কর্মসূচিতে তিনি আর অংশ নেন না। ৯০ বছরের শরীর আর সায় দেয় না। সব মিলিয়ে জীবনসায়াহ্নে এসে একাকী জীবন কাটাচ্ছেন সাবেক এই সেনাপ্রধান। দীর্ঘদিনের কর্মচারী আবদুল ওহাব, আবদুস সাত্তার, বাদশা, নিপা ও রুবির তত্ত্বাবধানে কাটছে এরশাদের দিনকাল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এইচ এম এরশাদের ছোট ভাই পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের প্রায় সারা দিনই বাসায় কাটে। শরীরটা খারাপ বোধ করলে ডাক্তারের কাছে যান। শারীরিক পরিচর্যা কারা করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাজের লোক আছে। তারাই পরিচর্চা করেন। আমরা প্রায়ই দেখা করতে যাই।’
এইচ এম এরশাদ, যিনি ক্ষমতা ছাড়ার পরও নব্বইয়ের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ রোল প্লে করে চলেছেন, সেই প্রতাপশালী সাবেক সেনাশাসক এইচ এম এরশাদ আজ জীবনসায়াহ্নে একা। স্ত্রীসহ নিকটাত্মীয় কেউ থাকেন না পাশে। মৃত্যু ভয়ে প্রায়ই রাত-বিরাতে ছুটে যান সিএমএইচে। আধা কিলোমিটারের মধ্যে গুলশানে স্ত্রী ও পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ বসবাস করলেও তিনি বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে এইচ এম এরশাদের খোঁজ নিতে সশরীরে আসেন না। গত পাঁচ বছরে ১৭ বার এইচ এম এরশাদ সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিতে গেলেও স্ত্রী রওশন এরশাদ একবারও সঙ্গে যাননি। এরশাদ সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় সর্বক্ষণ তার সঙ্গে ছিলেন আমেরিকা প্রবাসী এরশাদের আরেক ভাই মঞ্জুর মুর্শেদ ও তার সহধর্মিণী রোকসানা মুর্শেদ। গত জাতীয় নির্বাচনের আগে এরশাদের শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ হলে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেশে সুস্থতা কামনায় জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে একাধিক মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হলেও কোনো দোয়া মাহফিলে অংশ নেননি রওশন এরশাদ। ছোট ভাই জি এম কাদের প্রায়ই আসেন বারিধারার বাসায়। কথা বলেন, ভাইয়ের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন। জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক বিষয় নিয়েও আলাপ করেন। রওশন এরশাদ জাপা চেয়ারম্যান এরশাদকে দেখতে প্রেসিডেন্ট পার্কে আসেন কি না জানতে চাইলে এরশাদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিগত সহকারী আবদুল ওহাব প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আমাদের পিতার মতো। অসুস্থ পিতাকে সন্তান যেমন সেবা-যত্ন করে, আমরা আমাদের পিতার সেবা করে যাচ্ছি।’ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই অসুস্থ হয়ে পড়েন সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ। মনোনয়নপত্র জমাদানের পরপরই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। নির্বাচনের কয়েক দিন আগে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তবে তখনো তিনি পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন না। সিঙ্গাপুর থেকে এসেই পুনরায় তিনি ঢাকার সিএমএইচে ভর্তি হন। নির্বাচনের পর তিনি আবার সিঙ্গাপুরে গিয়ে চিকিৎসা নেন। এরশাদের ব্যক্তিগত সচিব মেজর খালেদ আখতার বলেন, ‘চিকিৎসার বিষয়টি আমি নিজে দেখাশোনা করি। আর স্টাফরা তার পরিচর্যা ও দেখাশোনা করেন।’ সারা দিন শুয়ে-বসেই এরশাদের দিন কাটে বলে তিনি জানান।