একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম বাজেট অধিবেশন ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় সংসদ সচিবালয়। আসন্ন ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষেই ১১ জুন অধিবেশন শুরু হবে। এ কারণে ঈদের আগেই সব প্রস্তুতি শেষ করার লক্ষ্যে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সংসদ ভবন এবং এর আশপাশের এলাকার সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। একইসাথে অধিবেশন কক্ষকে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির পাশাপাশি বাজেট বক্তৃতার জন্য সাউন্ড সিস্টেম, প্রজেক্টর স্থাপনসহ ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এবার রাজস্ব আয়ে ইতিহাস সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাজেটের আকার হচ্ছে ৫ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এক বছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক- দুই দিকই পাচ্ছে সমান গুরুত্ব। প্রবৃদ্ধির সুষম বণ্টনে বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে। তবে বাজেটে কর বাড়বে না; বাড়ানো হবে করের আওতা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নয়া সরকারের প্রথম এই বাজেট ইতিহাস সৃষ্টিকারী আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আসছে। দীর্ঘদিন পর বিএনপির অংশগ্রহণে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসা এই সংসদে এবার প্রায় ৫ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার মেগাবাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তাফা কামাল। এই বাজেটে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুই দিককে সমান গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নির্বাচনী ইশতেহার আর অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আয়-ব্যয় তথা প্রবৃদ্ধির সুষম বণ্টনে বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন দেয়ার আগে এর আকারেও পরিবর্তন আসতে পারে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তাফা কামালের প্রথম বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ইতিহাস সৃষ্টিকারী। এর পরিমাণ তিন লাখ ৭২ হাজার কোটি টাকা; যা চলতি অর্থ বছরে ছিল তিন লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। আয়-ব্যয়ের বিশাল লক্ষ্যমাত্রায় ঘাটতিও হবে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড়। এর পরিমাণ দেড় লাখ কোটি টাকারও বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেট চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ ও সহায়তার ওপর নির্ভর না করে ধীরে ধীরে নিজস্ব অর্থায়নে বাজেট প্রণয়নের কথা ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই আগামী বাজেটে আয়কর ও ভ্যাটের আওতা বাড়ানো হচ্ছে। অর্থমন্ত্রীও ইতোমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, বাজেটে এবার কর বাড়বে না, সরকারি ব্যয় সংস্থানে করের আওতা বাড়ানো হবে। তবে এসব বিষয়ে এখনই বিস্তারিত কিছু না বলে বাজেটের ‘মজা পাওয়ার জন্য’ অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সংসদ সচিবালয় জানায়, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গত সোমবার এই অধিবেশন আহ্বান করেছেন। এটি চলমান একাদশ সংসদের তৃতীয় অধিবেশন। সংবিধান অনুযায়ী একটি অধিবেশন শেষ হওয়ার পর ৬০ দিনের মধ্যে আরেকটি অধিবেশন আহ্বানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর আগে দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়েছিল ২৪ এপ্রিল। মাত্র পাঁচ কার্যদিবস চলা এই অধিবেশন শেষ হয় ৩০ এপ্রিল।
এবার প্রেসিডেন্ট প্লাজা দিয়ে রাষ্ট্রপতির প্রবেশের সম্ভাবনা রয়েছে। সংসদ কক্ষে রাষ্ট্রপতির প্রবেশের জন্য সংসদ ভবনের উত্তর দিকে অবস্থিত এই প্লাজা নির্মাণের জন্য নকশায় উল্লেখ করেন বিশ্বখ্যাত স্থপতি লুই আই কান। প্রায় ৬৫ হাজার বর্গফুটের শ্বেত পাথরে নির্মিত এই প্লাজা দিয়ে প্রবেশ করে তিনতলায় সংসদের অধিবেশন কক্ষ পর্যন্ত হেঁটে যেতে হয়। তবে দীর্ঘদিন এই প্লাজা ব্যবহার করতেন না রাষ্ট্রপতিরা। এর পরিবর্তে সংসদের ড্রাইভওয়ে দিয়ে প্রবেশ করে বিশেষ লিফটে সংসদ কক্ষে যেতেন তারা। ফলে ওই প্লাজা সারা বছরই অব্যবহৃত থাকত। সর্বশেষ বিএনপি সরকারের আমলে ২০০২ সালের জানুয়ারি মাসে বছরের প্রথম অধিবেশন শুরুর দিন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এই প্রেসিডেন্ট প্লাজা ব্যবহার করেন। এরপর লুই কানের নকশার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দশম সংসদে প্রবেশের ক্ষেত্রে ওই প্লাজা ব্যবহার করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
সংসদ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট প্লাজা পরিচ্ছন্ন করার কাজ শুরু হবে। সেখানে বাসানো হয়েছে বিশেষ সিসি ক্যামেরা। সেখানে অতিরিক্ত নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করা হবে। অধিবেশনকে সামনে রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এজন্য সংসদের ট্যানেল ও ড্রাইভওয়েতে গাড়ি রাখা নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে সংসদ সচিবালয়। নিরাপত্তার স্বার্থে দর্শনার্থীদের মোবাইল বাইরে রেখে প্রবেশ করতে হবে। সংসদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একটির বেশি মোবাইল নিয়ে ভবনে প্রবেশ করতে পারবে না। এছাড়া সংসদের অধিবেশন কক্ষে সংসদ সদস্যদের বসার চেয়ার ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা ও অধিবেশন চলাকালীন সব লিফট ত্রুটিমুক্ত রাখার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সদস্যদের মাইক্রোফোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। সংসদ ভবন ফুলসহ বিভিন্ন গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে এবং হচ্ছে। অধিবেশন চলাকালে অক্সিজেন সুবিধাসহ সার্বক্ষণিক একটি অ্যাম্বুলেন্স থাকবে। সংসদ লবিতে একজন ডাক্তারসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী থাকবে।