নরসিংদীন প্রতিনিধি,নরসিংদীর শিবপুরে নিখোঁজের দুই দিন পর সাবিনা আক্তার (২১) নামের এক তরুণীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় সাইফুল ইসলাম (২৮) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১। ধর্ষণে বাধা দেওয়ায় পরনের শার্ট খুলে তা দিয়ে সাবিনাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর সাইফুল তাঁকে ধর্ষণ করেন বলে জানিয়েছে র্যাব।
আজ বুধবার দুপুরে নরসিংদী প্রেসক্লাবে র্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কাজী শামসের উদ্দিন সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গতকাল মঙ্গলবার রাতে র্যাব-১১-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল শিবপুরের কলেজ গেট এলাকা থেকে সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। পরে সাইফুলের দেওয়া তথ্য মতে তাঁর বাড়ির একটি নর্দমা থেকে সাবিনার ভ্যানিটি ব্যাগ, বাথরুমের ভেতর থেকে সাবিনার মুঠোফোন ও শ্বাসরোধে হত্যায় ব্যবহৃত শার্টটি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার সাইফুলের বাড়ি শিবপুর উপজেলার দুলালপুরের খালপাড় গ্রামে। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর শাহিনুর বেগম নামের এক নারীকে বিয়ে করেন সাইফুল। ৫ বছর ও ১০ মাস বয়সী দুই সন্তান আছে তাঁর। অন্যদিকে নিহত সাবিনা একই উপজেলার মাছিমপুর মধ্যপাড়া গ্রামের আফিয়া আক্তারের মেয়ে। মা-মেয়ে একটি বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সাবিনার মুঠোফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে সাইফুল ইসলামকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিন মাস আগে সাইফুলের সঙ্গে পরিচয় হয় সাবিনার। সাইফুল তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানদের তথ্য গোপন করে সাবিনার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এর সূত্র ধরে সাবিনাকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে গিয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন সাইফুল। সাইফুল গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে সাবিনাকে বিয়ের কথা বলে বাড়ি থেকে বের করে নেন।
র্যাব বলছে, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল জানিয়েছেন যে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি ও সাবিনা বিয়ে করার জন্য ৬ জুন বিকেলে একত্রিত হন। পরে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে সাইফুলের এক চাচাতো বোনের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন তাঁরা। পথে রাত নয়টার দিকে অটোরিকশা থেকে নেমে নির্জন স্থানে নিয়ে সাইফুল সাবিনার সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক করতে চান। এতে বাধা দিলে সাবিনাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করেন সাইফুল। ওই সময় সাবিনা চিৎকার করতে থাকলে সাইফুল তাঁর পরনের শার্ট খুলে তা গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে মৃত সাবিনাকে ধর্ষণ করে ফেলে যান তিনি। সাবিনার ব্যবহৃত মুঠোফোন ও ভ্যানিটি ব্যাগ নিজ বাড়িতে নিয়ে লুকিয়ে ফেলেন। এরপর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।
নিহত সাবিনার মা আফিয়া আক্তারের ভাষ্য, ৬ জুন বিকেলে এক বান্ধবীর বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল সাবিনা। ওই বান্ধবীর বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও মেয়েকে পাওয়া যায়নি। দুই দিন পর নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে মেয়ের লাশ শনাক্ত করা হয়। পরের দিন তিনি বাদী হয়ে শিবপুর থানায় মামলা করেন বলে জানালেন। তিনি মেয়ে হত্যার সর্বোচ্চ বিচার দাবি করেন।
র্যাব-১১-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিন বলেন, নিখোঁজের দুই দিন পর ৮ জুন শিবপুরের কাজীরচর গ্রামের একটি কলাখেত থেকে সাবিনার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের মাত্র তিন দিনের মাথায় এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে।