প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রধানমন্ত্রী লী কেকিয়াং’র আমন্ত্রণে পাঁচদিনের সরকারি সফরে আজ চীনের দালিয়ানের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
সফরকালে তিনি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিবেন এবং বেইজিং এ চীনের প্রধানমন্ত্রী লী কেকিয়াংও প্রেসিডেন্ট শি জিংপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
আজ চীনের দালিয়ানে তিন দিনব্যাপী ‘ডব্লিইএফ অ্যানুয়েল মিটিং অব দ্যা নিউ চ্যাম্পিয়নস-২০১৯’ শুরু হবে। যা ডব্লিউইএফ সামার দাভোস নামেও পরিচিত।
সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘লিডারশীপ ৪.০- সাকসিডিং ইন এ নিউ এরা অব গ্লোবালাইজেশন।’
লিয়াওডং রাজ্যের দালিয়ান উত্তর পূর্ব এশিয়ার ব্যবসা এবং অর্থনৈতিক কেন্দ্র এবং উত্তর চীনের হংকং হিসেবেও সুপরিচিত।
প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট (বিজি১৭২০) আজ সোমবার বিকেলে দালিয়ানের উদ্দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবে।
বিমানটি ২ জুলাই স্থানীয় সময় সকাল ১২টা ২৫ মিনিটে লিয়াওনিং প্রদেশের দালিয়ানের দালিয়ান ঝৌশুজি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা শেষে আনুষ্ঠানিক মোটর শোভাযাত্রা সহকারে প্রধানমন্ত্রীকে শাংগ্রি-লা হোটেলে নিয়ে যাওয়া হবে। দালিয়ান সফরকালে তিনি এ হোটেলেই অবস্থান করবেন।
২ জুলাই সকালে প্রধানমন্ত্রী দালিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে অনুষ্ঠেয় ডব্লিউইএফ সামার দাভোস সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দিবেন।
শেখ হাসিনা দালিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে বিশ্ব অথনৈতিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লস শোয়াবের কার্যালয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং বিকেলে ‘কো-অপারেশন ইন দ্যা প্যাসিফিক রিম’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবেন।
বিকেলে দালিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে শোয়াবের দপ্তরে অনুষ্ঠেয় ‘কো-অপারেশন ইন দ্যা প্যাসিফিক রিম’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
আগামী ৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রী চীন সরকারের সরবরাহকৃত একটি বিশেষ ভাড়া করা বিমানে স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় বেইজিংয়ের উদ্দেশে দালিয়ান ত্যাগ করবেন। একই দিন বিমানটি স্থানীয় সময় বেলা ১২টা ২৫ মিনিটে বেইজিং ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে পৌঁছবে।
বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রীকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে দিয়ায়োতাই স্টেট গেস্ট হাইজে নিয়ে যাওয়া হবে। চীনের রাজধানীতে সফরকালে শেখ হাসিনা এই হোটেলেই অবস্থান করবেন।
বিকেলে তিনি বেইজিংয়ের লিজেনডাল হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের এক সংবর্ধনা ও নৈশভোজে যোগ দিবেন।
৪ জুলাই সকালে শেখ হাসিনা স্বাগত অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন এবং গ্রেট হল অব দ্য পিপলে বীরদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
পরে তিনি চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন এবং গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
প্রধানমন্ত্রী গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত এক ভোজসভায় অংশ নিবেন।
একই দিন বিকেলে শেখ হাসিনার সিসিপিআইটিতে চীনা ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে একটি বিজনেস গোল টেবিল বৈঠকে অংশ নিবেন।
৫ জুলাই সকালে প্রধানমন্ত্রীর চাইনিজ থিংক ট্যাংক ‘পাঙ্গোয়াল ইনস্টিটিউশন’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ব্যক্তব্য রাখার কথা রয়েছে।
চীনের বিভিন্ন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাগণ শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর হোটেল স্যুটে দেখা করার কথা রয়েছে এবং এনপিসি’র চেয়ারম্যান লি ঝাংশুর সাথে প্রধানমন্ত্রীর একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বিকেলে শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দিয়াওইয়ুতাই রাষ্ট্রীয় অতিথিশালায় এক বৈঠকে মিলিত হবেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একই স্থানে চীনা প্রেসিডেন্টের আয়োজিত একটি ভোজ সভায় অংশ নেবেন।
চীন সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী বেইজিং ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় ৬ জুলাই সকাল ১১টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবেন এবং একই দিন বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টা ৩৫ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (এইচএসআইএ) পৌঁছবেন।
‘ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম’স অ্যানুয়াল মিটিং অব দ্য নিউ চ্যাম্পিয়নস ২০১৯-এ অংশ নিতে ডালিয়ানে আগামী সপ্তাহে বিভিন্ন দেশ থেকে ১ হাজার ৮শ’র বেশি প্রতিনিধি অংশ নেবেন। এদের মধ্যে সরকার প্রধান, রাষ্ট্র প্রধান, ব্যবসায়ী নেতা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ ও বিভিন্ন অঙ্গনের শিল্পীরাও থাকবেন।
সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বিশ্বের পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ, আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও কারিগরী সংকটের সঙ্গে কিভাবে খাপ খাওয়ানো যায় তার একটি নতুন কৌশলগত উপায় সম্পর্কে নিজ নিজ মতামত ব্যক্ত করবেন।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) সুইজারল্যান্ডের জেনেভা ভিত্তিক একটি সংগঠন এবং ১৯৭১ সালে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর জন্ম। এটি ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে সুইস ফেডারেল সরকারের আইনে অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বীকৃতি পায়।
ডব্লিউইএফ’র লক্ষ্যে বলা হয়েছে এটি বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহকে ব্যবসায়িক, রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং সমাজের অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে বৈশ্বিক, আঞ্চলিক এবং শিল্প খাতকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে গঠিত হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন গত শুক্রবার বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর আগামী ২ থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত ৫ দিনের সরকারী চীন সফরে রোহিঙ্গা সমস্যাটিই আলোচনার মুখ্য বিষয়বস্তু হবে এবং এই সময়ে ঢাকা এবং বেইজিং এর মধ্যে আটটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
তিনি বলেন,‘প্রধানমন্ত্রীর সফরকালিন রোহিঙ্গা ইস্যুটি আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হবে। আমরা বিশ্বাস করি, এররপরে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে (তাদের প্রত্যাবাসনে) বেইজিং একটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
শুক্রবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রধানমন্ত্রী লী কেকিয়াং’র আমন্ত্রণে চীন সফর এবং সেখানে তিনি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিবেন এবং সফরকালে শেখ হাসিনা বেইজিং এ চীনের প্রধানমন্ত্রী লী কেকিয়াং এবং প্রেসিডেন্ট শি জিংপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, চীনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনায় ঢাকা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে চীনের কাছে জোর দাবি পেশ করবে যাতে করে চীন এ বিষয়ে তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে।
মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে চরমপহ্না ছড়িয়ে দিতে পারে মর্মে বাংলাদেশ বিষয়টি চীন সরকারের কাছে তুলে ধরার পরিকল্পনা করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এবং চীন অর্থনৈতিক, বিদ্যুৎ, তথ্য প্রযুক্তিএবং পর্যটন সহ বিভিন্ন খাতে এই সময়ে ৮টি চুক্তি স্বাক্ষর করবে।
এগুলো হচ্ছে-১. ডিপিডিসি এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহের সম্প্রসারণ এবং শক্তিশালীকরণে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি।
২. গভমেন্ট কনসেশনাল লোন এগ্রিমেন্ট অব এক্সপানশন এন্ড ষ্ট্রেন্দেনিং অব পাওয়ার সিষ্টেম টেওয়ার্ক আন্ডার ডিডিডিসি এরিয়া প্রোজেক্ট।
৩. প্রেফারেন্সিয়াল বাইয়ার্স ক্রেডিট লোন এগ্রিমেন্ট অব এক্সপানশন এন্ড স্ট্রেন্দেনিং অব পাওয়ার সিষ্টেম আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া প্রজেক্ট।
৪. ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট অব পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক ষ্ট্রেন্দেনিং প্রজেক্ট আন্ডার পিজিসিবি প্রোজেক্ট।
৫.এগ্রিমেন্ট অন ইকোনমিক এন্ড টেকনিক্যাল কোঅপারেশন বিটউইন দি গভার্নমেন্ট অব দি পিপল’স রিপাবলিক অব বাংলাদেশ এন্ড গভার্নমেন্ট অব দি পিপল’স রিপাবলিক অব চায়না।
৬. মেমোর্যান্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং (এমওইউ) অন দি এশট্যাবলিশমেন্ট অব ইনভেষ্টমেন্ট কোঅপারেশন ওয়ার্কিং গ্রুপ।
৭. এমওইউ এন্ড ইঁস ইমপ্লিমেন্টেশন প্ল্যান অন হাইড্রোলজিক্যাল ইনফর্মেশন শেয়ারিং অব ইয়ালু জাংবো/ব্রন্মাপুত্রা রিভার।
৮. সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং পর্যটন সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক।