কাল বিকেলে টিম হোটেলের নিচে আকরাম খান আর খালেদ মাহমুদকে বারবার খোঁজ নিতে দেখা গেল ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচের। ভারত যখন ৪ উইকেট হারিয়েছে, মাহমুদ বড় আশা নিয়ে বললেন, ‘ধোনি আর পান্ডিয়া যদি খেলে দেয়…!’
ভারতীয় দুই ব্যাটসম্যান বাংলাদেশের প্রত্যাশা অনুযায়ী আর খেলতে পারলেন কই! আকরাম-মাহমুদসহ সব বাংলাদেশি সমর্থককে হতাশ করে হেরে গেল ভারত। নিজেদের সেমিফাইনাল স্বার্থে বাংলাদেশ যে কত দলকেই ‘সমর্থন’ দিল এ কদিনে! পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড ম্যাচে কিউইদের, পাকিস্তান-আফগানিস্তান ম্যাচে আফগানদের, ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচে কোহলিদের সমর্থন দিয়েও কাজ হলো না! বাংলাদেশ যাদের জয় আশা করেছে, তারাই হেরেছে! ফেসবুকে তাই ট্রল হচ্ছে—‘একটা মন প্রতিদিন আর কতজনকে দেব?’
কাল এজবাস্টনে বাংলাদেশ ভারতের কাছে হেরে গেলে আর মন দিতে হবে না! বিশ্বকাপ-স্বপ্ন মিলিয়ে যাবে বার্মিংহামের হাওয়ায়। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বলছেন, চাপ নয়, কঠিন পরিস্থিতিকে তাঁরা নিচ্ছেন ইতিবাচকভাবেই, ‘অন্যদের দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। আমরা এ পর্যন্ত এসেছি তিনটা ম্যাচে ৬ পয়েন্ট আর একটিতে বৃষ্টির কারণে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে। যে ম্যাচ জিতেছি ভালো খেলেই জিতেছি। কালকের ম্যাচও জিততে হলে ভালো খেলে জিততে হবে। অন্যদের দিকে তাকিয়ে থেকে মনে হয় না বিশেষ কোনো লাভ আছে। ভারতের কাছে হারলে আমাদের বিশ্বকাপ শেষ। হয়তো কাল ভারত (ইংল্যান্ডের বিপক্ষে) জিতলে দৃশ্যটা অন্যরকম থাকত। আমরা এটা ইতিবাচকভাবে নিচ্ছি। কাল আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। ভালো খেলে জিততে পারলে এটা আরও আনন্দের হবে। শুধু বিশ্বকাপ নয়, দলকে সামনে এগিয়ে যেতে হলে এই কঠিন পরিস্থিতি পেরিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।’
কদিন আগে মাশরাফিই বলছিলেন, এখন বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ মানেই ‘ব্লকবাস্টার’! ভারত-পাকিস্তানের পুরোনো উত্তাপটা এখন চলে এসেছে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে। আর এতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের। এখন ভারতের বিপক্ষে জিততে দেখে বাংলাদেশের দর্শকেরা যত আনন্দ খুঁজে পান, আর কোনো দলের বিপক্ষে জিতে এত আনন্দ পান কি না সন্দেহ! ভারতকে হারানো নিয়ে গত কদিনে তাই কত ধরনের ট্রল হলো। মাশরাফি অবশ্য দেখে এসব অযাচিত চাপ নিতে চান না। তবে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে একটা মানসিক বাধা যে কাজ করে, সেটি কি অস্বীকার করবেন?
কাল ভারতের বিপক্ষে জিততেই হবে বাংলাদেশকে। ছবি: প্রথম আলোকাল ভারতের বিপক্ষে জিততেই হবে বাংলাদেশকে। ছবি: প্রথম আলো
আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম খেলে ২০০৭ বিশ্বকাপে। প্রথম সাক্ষাতেই দুর্দান্ত জয়। পোর্ট অব স্পেনে ঐতিহাসিক সেই জয়টার পর আর কখনো বড় মঞ্চে ভারতকে হারাতেই পারল না বাংলাদেশ। এর সঙ্গে যোগ করুন গত বছর নিদাহাস ট্রফি আর এশিয়া কাপের ফাইনাল। গত তিন বছরে বাংলাদেশ বেশির ভাগ ম্যাচই ভারতের কাছে হেরেছে খুব কাছে গিয়ে।
এবার কি মানসিক বাধাটা উতরে যাবে বাংলাদেশ? মাশরাফি সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য এ বাধাকে বড় করে দেখতে চাইলেন না, ‘মনে করি না এটা মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। স্কিলই এখানে সব। অবশ্যই ক্রিকেট মনস্তাত্ত্বিক খেলা। দর্শকেরা অনেক কিছু করতে পারে। তবে মাঠে যখন খেলি এসব নিয়ে ভাবি না। অবশ্যই মাঠে চাপ থাকবে। এটা ভালো, দর্শকেরা আমাদের সমর্থন দিচ্ছে। ভারতীয় দর্শক ভারত দলকে একইভাবে সমর্থন দেবে। তারাও জিততে চায়, এটাই স্বাভাবিক। তবে মনে করি না এটা আমাদের কাছে অনেক বড় চাপ।’