বঙ্গোপসাগরে ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ ৫ জেলের স্বজনদের আহাজারি

রাঙ্গাবালী প্রতিনিধি‘সাগরে যাওয়ার সময়ই কইছিলাম- সাগরের কামাই (রোজগার) আমার লাগবে না বাবা। তুই সাগরে যাইস না বাবা। তুই নদীতে মাছ ধর। এই কামাইতেই আমাগো চলবো, আমাগো বেশি কামাই লাগবে না।’

এভাবে স্মৃতিচারণ করে কান্নাজাড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন বঙ্গোপসাগরে ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ ১৭ বছরের কিশোর মো. হাসানের মা বিউটি বেগম। হাসানের বাড়ি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামে। মা বিউটি বেগম ও বোন পলি আক্তারসহ তিন সদস্যের সংসারে হাসানই একমাত্র উপার্জন করত। তার পেশা ছিল মাছ শিকার করা।

কিন্তু বেশকিছু দিন ধরে নদীতে তেমন মাছ ধরা পড়ছে না। তাই সংসারের খরচ মেটাতে মায়ের বাঁধা উপেক্ষা করে স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী রাতুল মিয়ার মালিকানাধীন ট্রলারে প্রথমবারের মতো সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিল হাসান। কিন্তু প্রথম যাত্রায়ই যে এমন অমঙ্গল হবে, তা কারও জানা ছিল না।

হাসানের সঙ্গে ওই ট্রলারে থাকা আরেক জেলে কাউখালী গ্রামের মিজানও (২৫) নিখোঁজ রয়েছে। বৈরী আবহাওয়ায় গত শুক্রবার রাতে ও শনিবার ভোরে গভীর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানকালে দমকা বাতাসের সঙ্গে প্রচণ্ড ঢেউয়ের তোড়ে তিনটি ট্রলারডুবির ঘটনায় হাসান ও মিজানসহ পাঁচ জেলে নিখোঁজ রয়েছে।

তারা হলেন, চরমোন্তাজ ইউনিয়নের মধ্য চরমোন্তাজ গ্রামের সোহরাব প্যাদার মালিকানাধীন ট্রলারের জেলে নয়ারচর গ্রামের রবিন হোসেন (২০), চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের চরলতা গ্রামের নিজাম ফকিরের মালিকানাধীন ট্রলারের জেলে চরলতা গ্রামের মনির (৪০) ও মধ্য চালিতাবুনিয়া গ্রামের ইউসূব (৩৭)।

এই পাঁচ জেলের সন্ধান এখনও মেলেনি। তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা এখনও কেউ জানে না।

নিখোঁজ কয়েক জেলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রিয়জনের সন্ধান না পাওয়ায় স্বজনদের কান্না আর বুকফাটা আহাজারি। স্বজনদের কেউ হয়েছেন নির্বাক। কেউ আবার শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে প্রিয়জনের ফিরে আসার প্রতিক্ষায় পথচেয়ে আছেন। তবে সময় যতই যাচ্ছে, আবেগ-উৎকণ্ঠা ততই বাড়ছে।

এদিকে জানা গেছে, গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সাগরে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কিন্তু এই আইন অমান্য করে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে ডুবে যাওয়া ওই তিন ট্রলারের মালিক (মহাজোন) মাছ শিকার করতে ৩৮ জন জেলেকে সাগরে পাঠান। পরে সাগরে গিয়ে ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটলে ৩৩ জন জেলেকে অন্য ট্রলারের সাহায্যে উদ্ধার করা হলেও বাকি জেলেদের সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় জেলেরা জানান, বৈরী আবহাওয়ায় সাগরে বেশি ইলিশ মাছ ধরা পড়ে। তাই ওইসময় অতিলোভে পড়ে ট্রলার মালিক কিংবা মহাজোনরা জেলেদেরকে উৎসাহিত করে সাগরে পাঠিয়ে থাকেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার করতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য জেলে বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জায়েদুল ইসলাম বলেন, ‘৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার আইন রয়েছে। আমি শিগগিরই অভিযান করব। আর জেলেদেরকে সাগরে পাঠাতে উৎসাহিত করা ট্রলার মালিকদের বিষয়ে আমি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা স্যারের সঙ্গে আলাপ করব।’

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, ‘নিখোঁজ জেলেদের এখনো সন্ধান পাওয়ার খবর পাইনি। আমরা এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছি। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সাগরে গেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

শীর্ষ সংবাদ সারাদেশ