আশ্বস্ত করল বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিং অবসায়নে অর্থ ফেরত পাবেন আমানতকারীরা

বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ধুঁকতে থাকা নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেসকে (পিএলএফএসএল) অবসায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে বন্ধ হয়ে যাবে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের সিদ্ধান্ত এটাই প্রথম। হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে এ অবসায়নের প্রক্রিয়া কার্যকর হবে। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি অবসায়ন হলেও আইন ও বিধি অনুযায়ী সব আমানতকারীর অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তাই আমানতকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। গতকাল বুধবার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলম এবং মহাব্যবস্থাপক মো. শহিদুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশে অবসায়নে যাচ্ছি। আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় এটি করা হচ্ছে। আর অবসায়নের পর আদালতের নির্দেশনার আলোকেই আমানতকারীর অর্থ বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তিনি জানান, পিপলস লিজিংয়ের আমানতের চেয়ে সম্পদের পরিমাণ বেশি আছে। প্রতিষ্ঠানটির আমানতের পরিমাণ দুই হাজার ৩৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে সম্পদের পরিমাণ তিন হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। এ কারণে আমানতকারীদের শঙ্কার কিছু নেই।

তিনি আরো বলেন, ‘২০১৪ সালে তদন্ত করে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য আমরা জানতে পারি। যেখানে পরিচালনা বোর্ডের অনেক সদস্যের অনিয়ম পাওয়া যায়। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠি দিয়ে পরিচালনা বোর্ড ভেঙে দিয়ে নতুন বোর্ড গঠন করে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর অনেক চেষ্টার পরও প্রতিষ্ঠানটি উন্নতি করতে পারেনি। তাই আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় প্রতিষ্ঠানটি অবসায়ন করার জন্য আমরা গত ২১ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিই। গত ২৬ জুন মন্ত্রণালয় অবসায়ন করতে অনুমতি দেয়। এরপর প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নের জন্য আদালতে যাওয়ার উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’

পিপলস লিজিংয়ের মতো অন্যান্য যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সংকট রয়েছে তাদের অবসায়ন করা হবে কি না জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম বলেন, ‘আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের। এ জন্য যা যা করা দরকার আইন অনুযায়ী সে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা আমানতকারী ও শেয়ারহোল্ডারদের আশ্বস্ত করতে চাই, তারা যেন কোনো বিপদে না পড়ে সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সজাগ রয়েছে।’

পিপলস লিজিং অবসায়ন করা হলে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত পেতে কত সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর থেকেই আমরা কাজ শুরু করেছি। এরই মধ্যে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা এই কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারব। তবে যেহেতু আমরা আদালতে গিয়েছি তাই এখন এটা আদালতের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা আমানতকারীর অর্থ যত দ্রুত সম্ভব ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করব।’

আমানতকারীর শতভাগ অর্থ ফেরত দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটার সিদ্ধান্তও দেবেন আদালত। বিকল্প উপায়ে বা প্রশাসক বসিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ঠিক করা যেত কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শাহ আলম বলেন, অবসায়ন হচ্ছে সর্বশেষ ধাপ। অবসায়নের আগে অন্য যেসব উপায় আছে তার সবই প্রয়োগের চেষ্টা করা হয়েছে; কিন্তু কাজ হয়নি। অবসায়নপ্রক্রিয়ার মধ্যে শেয়ারহোল্ডারদের ফান্ড সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা নিয়ে তিনি বলেন, এ রকম কোনো আশঙ্কা নেই। প্রতিষ্ঠানটিতে এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, অবসায়ন হওয়া প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীর অর্থ কোন উপায়ে ফেরত দেওয়া হবে সে বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনে কিছু বলা নেই। এ ক্ষেত্রে আদালত যে উপায়ে অর্থ পরিশোধ করতে বলবেন তা কার্যকর হবে। তবে সাধারণভাবে সম্পদ বিক্রি এবং সরকারের সহায়তার আলোকে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হয়।

অর্থ বাণিজ্য শীর্ষ সংবাদ