সাজিদা ইসলাম; পারুলরাজধানীতে বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এখনও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্ধারিত ডেঙ্গু টেস্ট ফি মানছে না। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে সুস্থ করে তুলতে অতিরিক্ত ফি দিয়েই ডেঙ্গু পরীক্ষা করাচ্ছেন অভিভাবকরা। এদিকে সরকার নির্ধারিত ডেঙ্গু শনাক্তকরণ ফির চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ায় ধানমণ্ডির ল্যাবএইড
স্পেশালাইজড হাসপাতালকে ৫০ হাজার টাকা ও ইবনে সিনা হাসপাতালকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এ ছাড়া, গ্রিন লাইফ মেডিকেল হাসপাতালসহ ধানমণ্ডির চারটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ডেঙ্গু শনাক্তকরণ ফি বেশি নিচ্ছে বলে এই চারটি হাসপাতালকে তলব করা হয়েছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের উপপরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মাদ শাহরিয়ার বলেন, ভোক্তাদের পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে শুনানি শেষে এই জরিমানা করা হয়। ঢাকা মেডিকেল ও বিএসএমএমইউতে ডেঙ্গু পরীক্ষায় ২০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
গত সোমবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ তাদের ফেসবুক পেজ থেকে ভোক্তাদের কাছ থেকে ডেঙ্গু রোগের অতিরিক্ত ফি নেওয়া হলে অভিযোগ দায়ের করার অনুরোধ করে। ই-মেইল ও মুঠোফোনের মাধ্যমে একদিনে ১৭টি অভিযোগ জমা হয়। সেসব অভিযোগের ভিত্তিতে অধিদপ্তর ব্যবস্থা নিচ্ছে।
গত রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য সর্বোচ্চ ফি নির্ধারণ করে দেয় ৫০০ টাকা। এদিন ‘ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা’ সংক্রান্ত জরুরি সভায় এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশনায় বলা হয়, ডেঙ্গুর মূল পরীক্ষা এনএসওয়ান এর জন্য সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা, সিবিসির জন্য ৪০০ টাকা এবং আইজিজি ও আইজিজিএম পরীক্ষার জন্য ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরের দিন ২৮ জুলাই থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। অথচ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকাশিত নতুন নির্ধারিত ডেঙ্গু শনাক্তকরণ এনএসওয়ান ফি সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা হওয়া সত্ত্বেও ওই হাসপাতালগুলোতে নেওয়া হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। আইজিজি ও আইজিজিএমের ফি ৫০০ টাকা এবং সিবিসি ফি ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও এক হাজারের বেশি টাকা ফি নেওয়া হচ্ছে প্রতিটি টেস্টে।
ধানমণ্ডির সাতমসজিদ রোডের উইমেন’স চিলড্রেন অ্যান্ড জেনারেল হসপিটালে দেখা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত তারা মানছেন না। ডেঙ্গু আক্রান্তদের কাছ থেকে অতিরিক্ত চার্জ নিচ্ছেন। ৫০০ টাকার পরিবের্তে নেওয়া হচ্ছে ১২০০ টাকা। ভুক্তভোগী এক অভিভাবক জানান, ডেঙ্গু পরীক্ষার টেস্ট ফি যেখানে ৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার, সেখানে তারা ১২০০ টাকা চার্জ নিচ্ছে। পরে অভিযোগ করলে ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। আসলে অনেক অভিভাবক ডেঙ্গু নিয়ে ভীত থাকায় অতিরিক্ত চার্জেই রক্ত পরীক্ষা করাচ্ছেন।
একই পরিস্থিতি দেখা যায় বনশ্রীর অ্যাডভ্যান্স হাসপাতালে। এ হাসপাতালে সিবিসি ও এনএসওয়ান পরীক্ষার জন্য নেওয়া হচ্ছে সাড়ে ১৫শ’ টাকা। অথচ সরকার এ দুই পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে ৯০০ টাকা। এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের ব্যবস্থাপক ফরিদ নেওয়াজ খান জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে ডেঙ্গু রোগীর তথ্য সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন তারা এখনও পাননি। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সব নির্দেশনা মেনেই পরীক্ষা করানো হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘৩০ শয্যার এই হাসপাতালে ২০ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। তবে রোগীদের নিয়ে হিমশিম খাওয়ায় অধিদপ্তরের কাছে এখনও প্রতিবেদন দিতে পারেননি বলে তিনি জানান।
রাজধানীর দশটি হাসপাতালে সরকারের ডেঙ্গু শনাক্তকরণ ফি তালিকা টানানো হয়েছে। এগুলো হলো- আদ-দ্বীন হাসপাতাল, আল রাজী হাসপাতাল, খিদমাহ হাসপাতাল, ধানমণ্ডি ক্লিনিক (প্রাইভেট) লিমিটেড, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার, স্কয়ার হাসপাতাল, হেলথ অ্যান্ড হোপ হসপিটাল, মিরপুরের আল হেলাল স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেলাইজড হাসপাতাল। বেশ কয়েকজন রোগীর স্বজন জানান, সরকারের নির্ধারিত ফিতেই ডেঙ্গু রোগ পরীক্ষা করা হচ্ছে।
বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, খিদমাহ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষার জন্য তারা সরকারের নির্ধারিত ফি মানছে। ফরাজী হাসপাতালে সরকার নির্ধারিত ফি মানা হলেও পরীক্ষায় ব্যবহূত টিউবের দাম রোগীদের কাছ থেকে রাখা হচ্ছে। আল হেলাল স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল দুটির প্রবেশমুখেই ক্যাশ কাউন্টারের সামনে সরকারের নির্ধারিত ডেঙ্গু রোগ শনাক্তের পরীক্ষার ফির তালিকা টানানো আছে। এমনকি সরকারের নির্ধারিত দামও নেওয়া হচ্ছে।