ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে সবাইকে নিজ নিজ ঘরবাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ডেঙ্গু মোকাবেলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতাকর্মী তাদের নিজ নিজ এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করবেন। এর পাশাপাশি দেশবাসীকেও দায়িত্বশীল হতে হবে।
বৃহস্পতিবার লন্ডন থেকে মোবাইল ফোনে ঢাকার ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে কৃষক লীগ আয়োজিত রক্তদান ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে জাতির পিতা রক্ত দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘প্রয়োজনে জীবনে রক্ত দেবো’। তিনি ঠিকই রক্ত দিয়ে গেছেন। বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই তার রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে। তিনি মানুষের জন্য কষ্ট করে গেছেন। তার সেই মহান ত্যাগ কখনো বৃথা যেতে পারে না।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে নেতাকর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ইদানিং দেশে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। ডেঙ্গুর প্রভাব এর একটি।
ডেঙ্গুর প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ইতোমধ্যে তিনি কতগুলো নির্দেশনা দিয়েছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দলের প্রতিটি নেতাকর্মী সেটা মেনে নিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঠিক রাখবেন। এই মশার বংশবিস্তার যাতে হতে না পারে সেজন্য যথাযথভাবে ব্যবস্থা নেবেন। যেন নিজের ও পরিবারসহ ঘরবাড়িও সুরক্ষিত করা যায়।
স্বেচ্ছায় রক্তদান ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানস্থল থেকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মোবাইলে সংযুক্ত করেন তিনি। এরপর সেখান থেকেই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তার বক্তব্য মাইকে নেতাকর্মীদের শোনানো হয়।
পঁচাত্তরে সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার স্মৃতিবাহী শোকাবহ আগস্ট মাসের শুরুতে লন্ডন থেকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে গিয়ে এক পর্যায়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। এক সময় বিয়োগান্তক ওই হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন স্মৃতিচারণ ও বাবার স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকারের কথা বলতে বলতে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন তিনি। এক পর্যায়ে মোবাইল ফোনের অপর পাশে তার কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে ওঠে। এতে এক শোকাবহ আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয় উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে।
কৃষক লীগের মাধ্যমে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করার পটভূমি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, পরিবেশ রক্ষা এবং মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আসা ও উন্নত করবার জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রক্তদান কর্মসূচিও পালন করা হচ্ছে। রক্ত মানুষের জীবন বাঁচাতে সহযোগিতা করে। রক্ত দিলে পরে কিন্তু কমে না, রক্ত কিন্তু বাড়ে। আর একজন মুমূর্ষু রোগীর জীবন রক্ষা পাওয়ার জন্য একটু ত্যাগ স্বীকার যেকোনো মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা মানবতার জন্য দরকার।
দেশের প্রতিটি নাগরিককে তিনটি করে গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বৃক্ষরোপণ করা দরকার। প্রত্যেককে তিনটি করে গাছ লাগানোর আহ্বান জানাচ্ছি। এতে একটি পরিবারের আয়ের উৎসও তৈরি হয়। জলোচ্ছ্বাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে উপকূলে সবুজ বেষ্টনী একান্ত দরকার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ আজ সার্বিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলাই সরকারের লক্ষ্য। আজ বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। প্রবৃদ্ধি অর্জনেও বিশ্বের অন্যতম অবস্থানে রয়েছে। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের শ্রমিক অর্থনীতি অত্যন্ত শক্তিশালী। দেশ সবচেয়ে বৃহৎ বাজেট দিয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ দেশ সবদিকেই বেশ এগিয়েছে। সরকার তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা এবং সবার পড়ালেখা ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে, পুষ্টি নিরাপত্তার জন্যও পদক্ষেপ নিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমার কেবল একটা কথাই মনে হয়– যেন একটি ভালো কাজ হয়, দেশের মানুষ ভাল থাকে। আমার মনে হয়, বাবার আত্মা শান্তি পান। তখন আমি চিন্তা করি নিশ্চয়ই তিনি বেহেশত থেকে দেখেন, তার দেশের মানুষ আজে ক্ষুধায় কাতর হয় না। কষ্ট পায় না। এ কথা চিন্তা করে তার আদর্শকে ধারণ করেই জীবনের সবকিছু ত্যাগ করে দেশের মানুষের সেবা করে যাচ্ছি। আমি দেশের মানুষেরও দোয়া চাই।’
দল ও সহযোগী সংগঠন নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আত্মমানবতার সেবা ও মানুষের জন্য আত্মত্যাগ করা প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। এর থেকে যে তৃপ্তি ও আনন্দ পাওয়া যায়– সেটা ভোগে পাওয়া যায় না, ত্যাগেই পাওয়া যায়। মহৎ অর্জনের জন্য মহৎ ত্যাগের প্রয়োজন হয়– এটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘কাজেই দেশকে আমরা গড়ে তুলবো। আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। দারিদ্রের হার আমরা কমিয়েছি, আরও কমাব। এদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর অনুষ্ঠানমঞ্চে কৃষক লীগের প্রকাশনা ‘কৃষকের কণ্ঠ’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এরপরই রক্তদান কর্মসূচি শুরু করার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ডেঙ্গু রোগীদের রক্ত সরবরাহের লক্ষ্যে এই কর্মসূচি থেকে ২০০ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করা হবে বলে জানান কৃষক লীগের নেতারা।
কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সমীর চন্দ দে। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।