বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। মুহূর্তেই কথা বললে তো আন্দোলন হয় না। আন্দোলনের জন্য তার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হয়, সংগঠন তৈরি করতে হয়। আমরা সেভাবে মানুষকে তৈরি করার চেষ্টা করছি। আমরা সেভাবেই কাজ করছি।
মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক স্মরণসভায় তিনি এ সব কথা বলেন। কাজী জাফর আহমদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সভার আয়োজন করে জাতীয় পার্টি (জাফর)।
ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, যারা মনে করেন একা একাই পারব, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। কখনোই এই সমস্ত ফ্যাসিস্ট গভর্মেন্টকে তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কোনো আন্দোলন সফল হবে না, যদি জাতিকে আমরা ঐক্যবদ্ধ না করতে পারি। এটাই আমাদের দায়িত্ব। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে এটাই- আমরা মানুষগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করব। যারা গণতন্ত্র চান তাদের ঐক্যবদ্ধ করব।
নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এখন গ্রামে গ্রামে বন্দরে বন্দরে মানুষের কাছে ছড়িয়ে যেতে হবে, মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। যে কথা আমি বার বার বলি- এই কাজটা হচ্ছে তরুণদের, এই কাজটা হচ্ছে যুবকদের। শুধু ফেসবুকে থাকলে আন্দোলন হবে না, একটা ছবি ফেসবুকে দিলে আন্দোলন হবে না। আন্দোলনে মানুষকে সংগঠিত করে রাজপথে নেমে আসতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই- দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্রের মুক্তি এক। এটাকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। দেশনেত্রীর মুক্তি হলেই গণতন্ত্রের মুক্তি হবে। এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার সরকারের কাছে প্লট চাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ছোটখাটো কোনো বিষয় নিয়ে পাগলের মতো ফেসবুকে দেয়ার কোনো বিষয় নেই। আপনাকে দেখতে হবে মূল লক্ষ্যে আমরা যাচ্ছি কিনা। আমি কার কথা বলছি আপনার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। পত্র-পত্রিকাতেও ড্রাম বাজিয়ে শুরু করেছে রুমিনের বিরুদ্ধে একটি অবস্থান তৈরি করার জন্য। রুমিন কোনো অন্যায় করেনি। হতে পারে বিষয়টি তার জন্য আনইথিক্যাল হয়েছে। কিন্তু রুমিন জোরালোভাবে পার্লামেন্টে ভেতরে-বাইরে সব খানেই এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে। সব খানেই গণতন্ত্রের জন্য কথা বলে। খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলে। সুতরাং আমাদের এই চিন্তা-ভাবনার লোক যারা আছেন তাদের অনুরোধ করব, দয়া করে আপনারা তার বিরুদ্ধে বা অন্য কারো বিরুদ্ধে কোনো কমেন্ট করবেন না। এতে ক্ষতি হবে আন্দোলনের। বরং তাকে পরামর্শ দেন কী কী তার করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের বিচারকদের শক্তি নেই যে সরকারের বাইরে গিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার। বিচার ব্যবস্থাকে তারা পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে। বিশেষ করে চিফ জাস্টিস সিনহা সাহেবকে দেশ থেকে বের করে দেয়ার পরে। এই অবস্থাগুলো আগে কখনই দেখেনি। এমনকি পাকিস্তান আমলেও এ সব দেখিনি। এখন কঠিন এক সময়। এই সময় ধৈর্য ধরে সঠিকভাবে সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে আমাদের এগোতে হবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, আজকের প্রেক্ষাপটে যারা ২৯ তারিখে ভোট ডাকাতি করেছে, দিনের পরিবর্তে রাতে ভোট চুরি করেছে। যত বড় দলই হোক এককভাবে কোনো আন্দোলন করে এই স্বৈরাচারকে সরানো যাবে না। এককভাবে আন্দোলন করে স্বৈরাচারের আয়ু বাড়িয়ে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, আমার অনুরোধ থাকবে জাতীয় ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। এটা জাতীয় ভোট, ১৬ কোটি মানুষের ভোট ডাকাতি করেছে। কোনো এককভাবে দলের পক্ষে সেই ডাকাতদের ভোট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। আমি বলতে চাই, সারা দেশে যদি একজনও বেঁচে থাকে স্বৈরাচার পরিবর্তনের জন্য এককভাবে হোক জাতীয় ঐক্যের পতাকাকে আমি তুলে ধরে রাখব।
আব্দুর রব বলেন, আজকে ক্ষমতার লোভ, বিদেশে টাকা-পয়সা, পারিবারিককরণ সবকিছুর জন্য দেশকে নরকে পরিণত করা হয়েছে। কোনো জবাবদিহিতা নেই, নীতিনৈতিকতা নেই, এই যে নারী নির্যাতন প্রতিদিন খবরের কাগজে দেখছি। আমাদের বাপ-দাদার সময়ে কখনও শুনি এভাবে নারী নির্যাতন হতে। সমস্ত প্রশাসন, সংবিধান, বিচার বিভাগ সবকিছু কুক্ষিগত করে বেহায়া-নির্লজ্জের মতো মিথ্যা কথা বলে রাষ্ট্র পরিচালনা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এই রাষ্ট্রটা একচ্ছত্র এক ব্যক্তির দখলে চলে গেছে। জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে হলে এই স্বৈরাচার, মিথ্যাবাদী, ভোট ডাকাতের বিরুদ্ধে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হবে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম-মহাসচিব এ এস এম শামীমের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন- গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, জাতীয় পার্টির মহাসচিব জাফরউল্লাহ খান চৌধুরী লাহরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য নওয়াব আলী আব্বাস খান, মজিবুর রহমান, মাওলানা রুহুল আমিন, সফিউদ্দিন ভূইয়া, সেলিম মাস্টার, কাজী জাফর আহমদের বড় মেয়ে কাজী জয়া কবির, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার লুৎফর রহমান প্রমুখ।