প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনের সময়ই ‘সিক্রেট ডকুমেন্ট অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’র পুরো ১৪টি খন্ড প্রকাশ করা হবে। একই সঙ্গে জাতির পিতার লেখা ‘স্মৃতিকথা,’ এবং চীন সফরের ওপর রচিত একটি ভ্রমণ বর্ননামূলক গ্রন্থও প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘স্বাধীনতা সংগ্রামসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরই অবদান এবং তিনিই অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো তাঁর নামটা আমাদের দেশে সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলার অপচেষ্টা করা হয়েছিল। তাই ইতিহাসের সত্য ঘটনা উদ্ভাসিত করার জন্যই এটি প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আজ জাতীয় সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে একথা বলেন। এ সময় ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, ‘জাতির পিতা যখন জেলে ছিলেন তখন আমার মা তাঁকে খাতা দিয়ে আসতেন ও লিখতে প্রেরণা দিতেন । সেই অনুপ্রেরণাতেই তিনি লিখতে শুরু করেন। তাঁর জীবনে অনেক কিছু তিনি লেখেন।’
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তাঁর মা (বঙ্গমাতা বেগম মুজিব) সবসময় খুব সচেতন ছিলেন। তিনি লেখার জন্য খাতা দেয়ার পাশাপাশি পড়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর দেয়া তালিকা থেকে কারাগারে বইও কিনে দিতেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন কারাগার থেকে মুক্তি পেতেন তখন তাঁর মা’ জেল গেটে গিয়ে তাঁর বাবার কাছ থেকে ঐ আত্মজীবনী লেখা খাতা এবং বইগুলো সংগ্রহ করতেন। এমনকি একাত্তর সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে জাতির পিতা ধানমন্ডী ৩২ নম্বর থেকে গ্রেফতারের পরদিন ঐ ৩২ নম্বরের বাড়ি লুট হলেও ঐ খাতাগুলো কিন্তু সংরক্ষণ করা ছিল।
তিনি বলেন, আমার মা’র নির্দেশে তিনি যেখানে খাতাগুলো রেখেছিলেন সেখান থেকে পরে আমরা তা উদ্ধার করেছিলাম। এরপর ’৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পর আমি যখন দেশে ফিরে আসি তখনকার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আমাদের ঐ বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। রাস্তার ওপর বসেই আমরা দোয়া-দরুদ পাঠ করেছি। এরপর প্রথম যখন ঐ বাড়িতে ঢোকার সুযোগ পেলাম তখন আমার মায়ের বলে দেওয়া জায়গা থেকেই সর্বপ্রথম খাতাগুলো উদ্ধার করলাম। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই খাতাগুলোর মধ্য থেকেই অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’ আমরা প্রকাশ করেছি।
তিনি বলেন, অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে ’৫৪ সাল পর্যন্ত বিষয়গুলো লেখা। আর কারগারের রোজনামচা হচ্ছে ’৬৬ থেকে ’৬৮ সালের ঘটনাপঞ্জি নিয়ে রচিত। তিনি যখন ৬ দফা দিলেন সে সময়কার ঘটনা এটি।
শেখ হাসিনা বলেন, এর বাইরেও আরো কিছু লেখা আছে যার বঙ্গবন্ধু নিজেই নাম রেখে গিয়েছিলেন ‘স্মৃতিকথা’। সেটা অনেকটা অসমাপ্ত আত্মজীবনীর মতই। এটি আরো অনেক বেশি তথ্য সম্বলিত। সেটা ইতোমধ্যেই তৈরী করেছি। সেটা আমরা ছাপাব। সেটার বাংলার কাজ হয়ে গেছে। ইংরেজির অনুবাদও হয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী নিজেই প্রতিটি লাইন অনুবাদের সঙ্গে মিলিয়ে দেখছেন উল্লেখ করে বলেন, এই কাজে তাঁর বান্ধবী প্রয়াত সংসদ সদস্য বেবী মওদুদ তাঁকে সহায়তা করতেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৫২ সালে তদানিন্তন পাকিস্তান থেকে জাতির পিতা চীন সফরে যান। সেখানে সেময় একটি শান্তি সম্মেলন হয়েছিল। তিনি ’৫২ সালে তাঁর ঐ চীন ভ্রমণ এবং অভিজ্ঞতা সম্পকের্ লিখেছিলেন। সেই বইটাও মোটামুটি তৈরী হয়ে গেছে এবং ইতোমধ্যেই প্রকাশনার জন্য দিয়ে দেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার জীবনীর কথা গাফ্ফার চৌধুরী, মাহবুব তালুকদার, তৎকালিন সাংবাদিক জাওয়াদুল করিম সহ কয়েকজন জাতির পিতার কাছ থেকে রেকর্ড করে নিতেন। সে ধরনের ৪টি টেপ আমি গণভবন থেকে উদ্ধার করি।
তিনি বলেন, একটি টেপ’র স্ক্রিপ্ট আমি ও বেবী মিলে তৈরী করি। সেখানে দেখলাম অনেক জায়গায় জাতির পিতার ‘স্মৃতিকথার’ সঙ্গে সেটা মিলে যায়। কাজেই সেগুলো ‘স্মৃতিকথার’ সঙ্গে সংযুক্ত করে আমরা সেটা তৈরী করে রেখেছি।এটি আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমরা ছাপতে দেব।
সিক্রেটস ডকুমেন্ট সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ’৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার ৪৮টি ফাইল উদ্ধার করি। যা ’৪৮ সাল থেকে ’৭১ সাল পর্যন্ত সময়ে জাতির পিতার বিরুদ্ধে লেখা। প্রায় ৪০ হাজার পাতার মত। ৯ থেকে ১০হাজার পাতার মত সম্পাদনা করে সেটি আমরা ‘সিক্রেট ডকুমেন্ট’ হিসেবে ১৪টি খন্ডে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি।
হাক্কানী পাবলিশার্স এটি প্রকাশ শুরু করেছে এবং ইতোমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশিত হয়েছে। তৃতীয় খন্ডটিও ছাপা খানায় চলে গেছে।আর ৪র্থ খন্ডটি বর্তমানে আমার কাছে আছে। এটা আমি এখন দেখছি। সেটা প্রয়োজনীয় সম্পাদনা আমি করবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই গোয়েন্দা রিপোর্টে একটা জিনিস পেয়েছিলাম। জাতির পিতার দুইখানা লেখা খাতাও পাকিস্তান সরকার বাজেয়াপ্ত করেছিল।
তিনি বলেন, সেখানে একটি খাতা আমরা উদ্ধার করেছি এবং আরেকটি তাঁর হাতের লেখা পেয়েছি। অষ্ট্রেলিয়ার একজন প্রবাসী বাঙালি বিজ্ঞানি গোপালগঞ্জ সমিতির এক সভায় জাতির পিতার সেই লেখনির একটি ফটোকপি এনে আমাকে দেখান। সেখান থেকে ঐ খাতাটি উদ্ধার করে ‘স্মৃতিকথা’র সঙ্গেই একসঙ্গে আমরা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘আমরা আশা করছি, জাতির পিতার জন্ম শতবর্ষ উদযাপনের মধ্যেই এই ১৪ খন্ড প্রকাশ করতে পারবো।’
২০২০ সালের ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীরতার সুবর্ণ জয়ন্তী পর্যন্ত সময়কে ইতোমধ্যেই ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।