ক্যাসিনো ক্লাবে অ্যাকশন শুরু গুলশানের বাড়ি থেকে যুবলীগ নেতা খালিদ ও ফকিরাপুল থেকে আটক ১৪২

জিরো টলারেন্স অবস্থান থেকে রাজধানী ঢাকায় অভিযান শুরু হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার গুলশানের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এ সময় ওই বাসা থেকে একটি অবৈধ ও দুটি মেয়াদোত্তীর্ণ অস্ত্র এবং ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। প্রায় একই সময়ে ক্যাসিনো ক্লাবের সন্ধানে ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব, শাহজাহানপুরের মুক্তিযোদ্ধা চিত্তবিনোদন ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব ও বনানীর আহমেদ টাওয়ারের একটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। জব্দ করা হয় বিপুল পরিমাণ মাদক ও অর্থ। তিনটি ক্লাব থেকে অন্তত ১৪২ জনকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন তরুণীও রয়েছেন। অন্যদিকে বনানীর একটি আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ছাড়া রাত ৮টার দিকে বনানীর আহমেদ টাওয়ারের গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ নামের একটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র‌্যাব-১। পরে ক্যাসিনোটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। যুবলীগের শীর্ষ পর্যায়ের আরও একাধিক নেতাকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানা গেছে। এই তালিকায় ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক অনেক নেতার নাম রয়েছে।

জানা গেছে, গতকাল বেলা ২টা থেকে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার গুলশান-২-এর ৫৯ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাসার (প্রিমরোজ) আশপাশে অবস্থান নেয় র‌্যাব-১ ও র‌্যাব-৩-এর সদস্যরা। ওই ভবনে কিছু একটা হতে চলেছে এমনটাই ধারণা করেছিলেন ভবনের বাসিন্দা ও আশপাশের মানুষ। বিকাল থেকে ওই বাড়ির সামনে অবস্থান নেয় র‌্যাবের কয়েকটি গাড়ি। বাড়তে থাকে র‌্যাব সদস্যের সংখ্যা। র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম ও র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শফিউল্লাহ বুলবুলের নেত্বত্বে র‌্যাব সদস্যরা সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ছয়তলা ভবনের চতুর্থ তলায় ‘এ-৩’ নম্বর ফ্ল্যাটে র‌্যাব সদস্যরা প্রবেশ করেন। ওই ফ্ল্যাটে দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন খালেদ। র‌্যাবের আইন ও গণামাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নানা অভিযোগের ভিত্তিতে খালেদের বাসায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় ওই বাসায় একটি অবৈধ অস্ত্র, দুটি মেয়াদোত্তীর্ণ অস্ত্র, নগদ ১০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, ৫ লাখ টাকার সমপরিমাণ ডলার এবং ৪০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া খালেদের মালিকানাধীন ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। পরে শাহজাহানপুর, বনানী এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ কাওসারের মালিকানাধীন ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র‌্যাব। খালেদের বনানীর বাড়ির ম্যানেজার আরিফ হোসেন বলেন, ‘খালেদ চার বছর ধরে এ বাসায় বসবাস করে আসছেন। তিনি অর্ক ও অর্পণ নামের দুই ছেলে এবং স্ত্রীকে নিয়ে এ বাসায় থাকছেন। গত দুই দিন খালেদ বাসায়ই ছিলেন। গতকাল বেলা ৩টা দিকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে খালেদের ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন। এক ঘণ্টা পর পোশাক পরিহিত র‌্যাব সদস্যরা আসেন। তারা পুরো বাসা তল্লাশি করে অস্ত্র, ইয়াবা ও নগদ টাকা উদ্ধার করেন। পরে খালেদকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে একটি হায়েস মাইক্রোতে করে নিয়ে যান র‌্যাব সদস্যরা।’ দুই দিন ধরে আলোচনা ছিল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কঠোর অবস্থান নিচ্ছে চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ সেপ্টেম্বর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে কয়েকজন নেতাকে নিয়ে কথা বলেছিলেন। এদিকে বিকালে দুদকের একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোল্ডেন টিউলিপ হোটেলে অভিযান চালায়। দুদকের কাছে তথ্য ছিলো অপরাধ কর্মকা-ের পাশাপাশি অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে ওই হোটেলে। এদিকে রাজধানীর ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব ও শাহজাহানপুর মুক্তিযোদ্ধা চিত্তবিনোদন ক্লাবে যুবলীগের কিছু নেতার পরিচালিত ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব। এ সময় ইয়ংমেন্স ক্লাব থেকে নারী-পুরুষসহ ১৪২ জন এবং ২৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। তবে ওয়ান্ডারার্স ও চিত্তবিনোদন ক্লাব থেকে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। কারণ খবর পেয়ে আগেই সটকে পড়েন সেখানে উপস্থিত লোকজন। এ প্রতিবেদন তৈরি পর্যন্ত ওয়ান্ডারার্স ও চিত্তবিনোদন ক্লাবে অভিযান চলছিল। র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলম বলেন, ‘আমরা ক্লাবগুলোতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালাচ্ছি। সবগুলো ক্লাবের ভেতরে বিপুল পরিমাণ টাকা জব্দ করা হয়েছে। জব্দ করা টাকাগুলো গোনা হচ্ছে। এ ছাড়া ইয়ংমেন্স ক্লাব থেকে নারী-পুরুষসহ গ্রেফতার ১৪২ জনের মধ্যে ৩১ জনকে এক বছর এবং বাকিদের ছয় মাস করে কারাদ- দেওয়া হয়েছে।’ অভিযোগ রয়েছে, যুবলীগের নেতৃত্বে থাকা কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতার তত্ত্বাবধানে এসব ক্লাবে বানানো ক্যাসিনোতে নিয়মিত জুয়ার আসর বসে। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আগে কয়েক দফা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলেও সম্প্রতি টনক নড়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার। জানা গেছে, মতিঝিল থানার পাশেই অবস্থিত ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবটি ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলার জন্য ক্রীড়ামোদীদের কাছে পরিচিত হলেও এ ক্লাবে ক্যাসিনোর আদলে জুয়ার আসর চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই ক্লাবের কমিটিতে যুবলীগের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা অন্তর্ভুক্ত হন। এরপর ক্লাবে তাদের প্রভাব বাড়তেই থাকে। অভিযোগ রয়েছে, ক্লাবের ভেতর নিয়মিত মদ্যপানের আসর বসানোর পাশাপাশি হাউজি খেলা চালু করেন তারা। এরপর এখানে জুয়ার আসর অব্যাহতভাবে বাড়তেই থাকে। উল্লেখ্য, শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ‘মনস্টার’ সম্বোধন করে তাদের পদ থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন। একই সভায় যুবলীগের কিছু নেতার কর্মকা-ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এর পর থেকেই যুবলীগের এসব নেতার ব্যাপারে খোঁজখবর শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
খালেদের টর্চার সেল : রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশনের উল্টো দিকে ইস্টার্ন কমলাপুর টাওয়ারে যুবলীগ নেতা খালেদের টর্চার সেলের সন্ধান পেয়েছে র‌্যাবের একটি দল। গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে টর্চার সেলের সন্ধান মেলে। র‌্যাব জানায়, টর্চার সেলে নির্যাতনের অনেক ধরনের যন্ত্রপাতি রয়েছে। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে টর্চার সেলে নিয়ে নির্মম নির্যাতন চালানো হতো।

ক্রীড়াচক্রের ক্যাসিনোতে অভিযান : গুলিস্তানের পীর ইয়ামেনী মার্কেটের কাছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রের ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব। ক্যাসিনো সিলগালাসহ ৪০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। মাদক, নগদ অর্থ, কষ্টিপাথরের মূর্তি ও ক্যাসিনো সামগ্রী জব্দ করা হয়েছে।

Others জাতীয় শীর্ষ সংবাদ