সরকারি কাজের টেণ্ডার বাগিয়ে নেন ধন কুবের এই বশির আহমেদ

ঢাকা ঃ বর্তমান সরকার টানা তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতায় এসেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। দুর্নীতি বন্ধে দল মত নির্বিশেষে সকল দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে দুদককে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনার পরপরই দুর্নীতিবাজদের ধরতে মাঠে নেমে পড়ে দুদক, তদন্ত শুরু করে দেশের বিভিন্ন কোম্পানির কর্মকাণ্ড নিয়ে। এরই ধারাবাহিকতায় অবৈধভাবে কাওরানবাজারে টিসিবি ভবনে এক বিশাল জায়গা দখল করে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড নামক কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগে কোম্পানি এবং এর এমডি বশির আহমেদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে দুদক। তদন্ত শুরুর পরপরই বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। জানা গেছে দেশের এহেন কোনো টেন্ডার এর কাজ নেই যা ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং এর হস্তগত হয়না। বর্তমান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম সহ একাধিক সরকারদলীয় নেতার নাম বিক্রি করে তাদের ৬ থেকে ১০% কমিশন প্রদানের বিনিময়ে অসংখ্য সরকারি কাজের টেণ্ডার বাগিয়ে নেন এই ধন কুবের বশির আহমেদ। কিন্তু হাজার কোটি টাকা আয়ের পরেও বশির আহমেদে এবং তার কোম্পানির নেই কোনো কর প্রদানের হিসাব।

প্রতিনিয়ত সেনাবাহিনীর ১ ষ্টার ও ২ ষ্টার প্রাপ্ত জেনারেলদের বিচরণ হয় তার অফিসে। তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ হাতিয়ে নেওয়ার বিনিময়ে এসব সেনাকর্মকর্তাদের কমিশন প্রদান এবং তাদের বিদেশ ভ্রমণের অর্থ সরবরাহ করে থাকে অল্প সময়ে টাকার পাহাড় গড়ে তোলা ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড এর এমডি বশির আহমেদ। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন অফিসের চীফ ইঞ্জিনিয়ারদের ঘুষ হিসেবে দামী ফ্ল্যাট এবং অর্থ প্রদানের মাধ্যমে অসংখ্য কাজের টেণ্ডার নিজের কোম্পানির নামে পাশ করিয়ে নিচ্ছেন এই টাকার কুমির। পাশাপাশি বশির আহমেদ নিজেও বেশিরভাগ সময় বিদেশে একাধিক নারী নিয়ে আমোদ ফুর্তি করে বেড়ান বলে তার এক ঘনিষ্ঠ সূত্রের মাধ্যমে জানা গেছে। ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি দূর্নীতি আর কর ফাকির এক আখড়া। কোম্পানির ওয়েবসাইটে এক জায়গায় লেখা ৬৬টি প্রজেক্ট সম্পন্ন আরেক জায়গায় ৩১টি প্রজেক্ট সম্পন্ন। সংখ্যা যাই হোক কোম্পানির আয় রহস্যজনকভাবে প্রজেক্ট বাজেটের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। এই অতিরিক্ত আয়ের উৎস কি? গোপনে বড় মাদক বা চোরাকারবারের সিন্ডিকেট নয়তো? সেই পেছনের আয়ের উৎস খুঁজতেই মরিয়া তদন্তকারী সংস্থা সকল টেন্ডার কিভাবে শুধু এই এক কোম্পানি বাগিয়ে নিচ্ছে সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট এক তদন্তকারী দুদক কর্মকর্তার মাধ্যমে জানা গেছে সেনাবাহিনীর সাবেক ইঞ্জিনিয়ার চীফ ইন জেনারেল সিদ্দিকের সাথে বশির আহমেদের অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ টাকার লেনদেনের প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া জানা গেছে তদন্তের স্বার্থে তারই প্রতিষ্ঠানের অসন্তোষ কিছু কর্মকর্তার জবানবন্দি রেকর্ড করছে তদন্তকারী দল। তার নাম বেনামে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক একাউন্ট, পরিবারের সদস্যদের ব্যাঙ্ক একাউন্ট, তার মেয়ে জামাতার ব্যাঙ্ক একাউন্ট সহ তার সকল ঘনিষ্ঠজনদের প্রয়োজনীয় তথ্য এবং প্রমাণাদি সংকলন সাপেক্ষে শীঘ্রই বশির আহমেদকে দুদক অফিসে তলব করার কথা জানিয়েছেন উক্ত কর্মকর্তা।

স্ত্রীসহ পরিবারের অনান্য সদস্যদের নামে বেনামে কিনেছেন শত কোটি টাকার সম্পত্তি। নির্বাচনের আগে লন্ডনে বেশ কিছু অর্থ প্রেরণের কারণও খতিয়ে দেখা হচ্ছ। বশির আহমেদ এক রহস্যঘেরা চরিত্র। তার উত্থান যদিও ঘটে বিএনপি এর সময়ে জিয়াউর রহমান এর হাত ধরে কিন্তু সব সরকারের সময়েই সে নিজের কাজ উদ্ধার করে নিতে সক্ষম হয়েছে চতুরতার মাধ্যমে। জিয়াউর রহমানের সৃষ্টি স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ”গ্রাম পরিষদ” প্রধানের(নিজ গ্রামে) পদে দায়িত্বরত ছিলেন বশির আহমেদ। জিয়াউর রহমানের সাথে সুসম্পর্কের খাতিরেই উক্ত পদ লাভ করেছিলেন তিনি। কুস্টিয়ার চর আমলা এলাকায় আমলা সরকারী কলেজে পড়াশুনা করে কিভাবে বশির আহমেদ এত বড় কোম্পানি শুরু করেন তা এখনো স্থানীয়দের কাছে রহস্য । মাদক এবং জঙ্গি মুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের পর এবার শেখ হাসিনা দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার অভিযানে নেমেছেন। আর এই অভিযানে বশির আহমেদের মতো রাঘব বোয়ালারা অচিরেই দুদকের আইনের জালে আটকা পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অর্থ বাণিজ্য জাতীয় শীর্ষ সংবাদ