প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিউ ইয়র্ক যাওয়ার আগে গণভবনে দলের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তৈরি করা একটি প্রতিবেদন পড়ে শোনান। প্রধানমন্ত্রী ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা সরকারি দলের নেতাদের সম্পর্কে অভিযোগগুলো বর্ণনা করে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা জানতে চান। তখন সেখানে উপস্থিত আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘অ্যাকশনে’ যাওয়ার পরামর্শ দেন।
শেখ হাসিনা নিজেও ওই নেতাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। এর মাধ্যমে বিচ্ছিন্নভাবে নয়, বড় ধরনের দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবিরোধী সমন্বিত অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে চায় সরকার। সে জন্য এনবিআরের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনকে এ কাজে সক্রিয় করা হবে। এরপরই র্যাব ‘অ্যাকশনে’ যায়। মতিঝিল ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালায়। গ্রেপ্তার করা হয় যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ ভূঁইয়াসহ তাঁর সহযোগীদের। পরে দেহরক্ষীসহ গ্রেপ্তার হন যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা জি কে শামীম।
সূত্র জানায়, দলের নেতাদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবনে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর আরেকটি বৈঠকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ এবং বিতর্কিত নেতাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, একজন তো ক্রসফায়ারের (ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট) হাত থেকে বেঁচেছে। আরেকজন (খালেদ) প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে চলাফেরা করে। অথচ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার সময় কাউকে পাওয়া যায়নি। তাঁর সরকারের শাসনামলে এমন কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউ ইয়র্কে পৌঁছেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে অভিযানের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন। এ সময় তিনি র্যাবের সঙ্গে অন্যান্য সংস্থা সমন্বিত অভিযানে না নামায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলমান দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানকে আরো দীর্ঘায়িত করার নির্দেশ দেন।
গত মঙ্গলবার সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন এটা অত্যন্ত পজিটিভ। দুর্নীতি বা অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর যে কঠোর অবস্থান এ অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এতে অনেক ক্রাইম কমে যাবে। তাই এটাকে আমি স্বাগত জানাই।’
দলের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল বুধবার কালের কণ্ঠকে জানান, কিছুদিন আগে তিনিসহ আওয়ামী লীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম গণভবনে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে যান। এ সময় ক্ষুব্ধ দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ নেতা নানক ও আজমকে যুবলীগের সাবেক শীর্ষ নেতা হওয়ায় সংগঠনটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বর্তমান সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে আসা চাঁদাবাজির অভিযোগ সম্পর্কে অবহিত করেন। শেখ হাসিনা বলেন, তার কত সাহস যে আঞ্জুমান মুফিদুলের কাছে পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা চেয়েছে। এ সময় মির্জা আজম বলেন, নেত্রী যা শুনেছেন তা ঠিক নাও হতে পারে। তখন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা তাঁদের জানান, তাঁর কাছে সঠিক তথ্য রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ও রেহানা আমাদের জাকাতের টাকা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামকে দিই। আর সেখানে সম্রাট চাঁদা দাবি করে! তার কত সাহস। সে কি মরবে না?’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম ও ছাত্রলীগের সাবেক ওই কেন্দ্রীয় নেতা চুপ করে শোনেন। তাঁরা এ নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করেননি বলে জানা গেছে।