‘কীভাবে বলি ওর মা নেই, মা মারা গেছেন? ও জানে মা বাসায়, আর সে হাসপাতালে। অথচ মায়ের লাশ নিয়ে স্বজনরা বরিশালের মুলাদির গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। দুর্ঘটনার সময় সে নিজেই রিকশা থেকে ছিটকে পড়ে যায়। তারপর সে আর কিছু বলতে পারে নাই। তাই সে জানেও না, মা পাশেই পড়েছিলেন। আমরা গিয়ে দেখেছি ততক্ষণে মা মারা গেছেন।’
এভাবেই কথাগুলো বললেন দুর্ঘটনায় আহত জিসান ইসলামের (১০) ফুপাতো ভাই তারেকুল ইসলাম। তিনি বলেন, জিসান এত ছোট এবং তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় এই মুহূর্তে তাকে কিছুই জানানো যাচ্ছে না। একটু সুস্থ হলে বলতে হবে।
রাজধানীর কাকরাইলে রোববার সকালে পিকআপভ্যানের ধাক্কায় মারা গেছেন জিসানের মা মাসুদা বেগম। এতে আহত হয় জিসান। তার বাঁহাত ভেঙেছে। পায়ে অনেকগুলো সেলাই লেগেছে। এখন ভর্তি আছে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল নামে পরিচিত)।
তারেকুল ইসলাম জানান, মাসুদা বেগম ও জিসান বরিশাল থেকে সকালে ঢাকায় ফেরেন। সদরঘাট থেকে রিকশা করে মধুবাগের বাসায় যাচ্ছিলেন তারা। রিকশায় মা ও ছেলে ছিলেন। পরে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তিনিসহ অন্যরা সকাল আটটার দিকে ঘটনাস্থলে যান। তখন মাসুদা বেগমকে রাস্তায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া জিসানকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়, সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। আর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাসুদা বেগমের লাশের ময়নাতদন্তের পর প্রথমে মধুবাগে একটি নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে লাশ নিয়ে স্বজনরা বরিশালের মুলাদি রওনা হন।
স্বজনদের কয়েকজন এখন পঙ্গু হাসপাতালে জিসানকে সামলাচ্ছেন। একজন স্বজন রিপন হোসেন বলেন, জিসানকে রক্ত দেওয়া হচ্ছে। একটু পর পর যন্ত্রণায় চিৎকার করছে সে। মায়ের কথা সে কয়েকবার জানতে চেয়েছে। তাকে জানানো হয়েছে, মা ভালো আছেন।
তারেকুল ইসলাম বলেন, মাহিনের বড় ভাই মাসুমের বয়স ১৪ থেকে ১৫ বছর। সে তার বাবা মোফাজ্জল হাওলাদারের সঙ্গে বাসায় ছিল। তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের মুলাদি থানার চরলক্ষ্মীপুর গ্রামে। মাসুদা বেগমের বাড়িও বরিশালে।