যুবলীগের ৭ম জাতীয় কংগ্রেস ২৩ নভেম্বর। কংগ্রেস সামনে রেখে সংগঠনটির নেতাদের সঙ্গে বসছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৩ অক্টোবর বিকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করবেন যুবলীগের শীর্ষ নেতারা। তবে এ বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন না সংগঠনটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। যুবলীগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংগঠনটির একাধিক নেতা জানান, ক্যাসিনোকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠায় যুবলীগ চেয়ারম্যানের গণভবনে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বৈঠকের শিডিউল আনতে যাওয়া এক নেতাকে সরকার প্রধান সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যুবলীগের বিতর্কিতরা যেন গণভবনের অনুষ্ঠেয় ওই বৈঠকে না থাকে। এ কারণে যুবলীগের শীর্ষ নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলেও যেতে পারছেন না ওমর ফারুক চৌধুরী।
গণভবনে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে কারা উপস্থিত থাকবেন, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বুধবার বৈঠকে বসেছিলেন যুবলীগের শীর্ষ নেতারা। এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যুবলীগের যাদের বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী তাদেরকে ছাড়াই কংগ্রেসের আগে অনুষ্ঠেয় এই জরুরি বৈঠক হবে। যুবলীগের চেয়ারম্যান ছাড়াও সংগঠনের একজন প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য ( যিনি ভোলার সংসদ সদস্য) বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু হওয়ায় তাকেও বৈঠক থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে যুবলীগের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সম্প্রতি যুবলীগের বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা ও টেন্ডারবাজির অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের পর থেকে সংগঠনটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর নামও উঠে আসে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার করা হয় যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুবলীগ নেতা জি কে শামীমসহ অনেকেই। যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সম্পৃক্ততাও বেরিয়ে আসে। তার আলোকে ইতিমধ্যেই ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব করা ছাড়াও তার বিদেশে যাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর পর থেকেই আড়ালে চলে যান ওমর ফারুক। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাকে ছাড়াই সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন সংগঠনটি। গত শুক্রবার তাকে ছাড়াই হয়েছে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সভা।
ওই সভায় সম্মেলনের আয়োজন নিয়ে আলোচনা করা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করা নিয়েও আলোচনা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, যুবলীগের সম্মেলন সামনে রেখে এ সংক্রান্ত দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকেই নেয়া হবে। সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ‘আবেদন’ জানায় নেতারা।
বুধবার গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কণফারেন্সে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ওই অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে কথা বলেন হারুনুর রশীদ। প্রথমে আগামী শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার দিনক্ষণ ঠিক হয়। কিন্তু ওই দিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শেখ রাসেলের জন্মদিন হওয়ায় যুবলীগ নেতাদের সাক্ষাতের দিন রোববার ঠিক করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ বুধবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের রোববার দেখা করার সময় দিয়েছেন। তবে ওমর ফারুক চৌধুরী ও নুরুন্নবী শাওনকে না রাখার বিষয়ে কোনো নির্দেশনার কথা আমাকে বলেননি। তবে আমার ধারণা চেয়ারম্যান মহোদয় সম্ভবত যাবেন না। কারণ বেশ কিছু দিন হল তিনি সংগঠনের কার্যক্রম থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন। এ বিষয়ে জানতে ওমর ফারুক চৌধুরীকে তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।