রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পে ‘বালিশ-কাণ্ড’: নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদসহ ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ

পাবনার রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পে ‘বালিশ-কাণ্ড’ দুর্নীতি অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে প্রধান অভিযুক্ত মাসুদুর রহমান মাসুদসহ সাত প্রকৌশলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার সকালে ঢাকায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদকের উপ-পরিচালক নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল।

এ ব্যাপারে দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য যুগান্তরকে জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২৯ জন প্রকৌশলীকে তলব করে চিঠি দেয়া হয়েছে। বক্তব্য দিতে তাদের দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে।

বুধবার মাসুদ ছাড়া গণপূর্তের তিন উপবিভাগীয় প্রকোশলী মো. তারেক, তাহাজ্জুদ হোসেন ও মোস্তফা কামাল এবং তিন উপসহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান, আবু সাইদ ও ফজলে হককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী একেএম জিল্লুর রহমান, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আহমেদ সাজ্জাদ খান, সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম এবং উপসহকারী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম, সুমন কুমার নন্দী, শাহীন উদ্দিন ও জাহিদুল করিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

১১ নভেম্বর সোমবার সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) শফিকুর রহমান, বর্তমান অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নজিবর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেবাশীষ চন্দ্র সাহা, সহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম ও রওশন আলী, দুই উপসহকারী প্রকৌশলী আহসানুল হক ও খোরশেদা ইয়াছরিবাকে হাজির হতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া ১২ নভেম্বর মঙ্গলবার সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম, বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম, সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মকলেছুর রহমান, পাঁচ উপসহকারী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন, শাহনাজ আখতার, শফিউজ্জামান, রওশন আলী ও রফিকুজ্জামানকে তলব করা হয়েছে। এ ঘটনা সম্পর্কে বক্তব্য দিতে ১৩ নভেম্বর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর, উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. হাসিনুর রহমান, উপসহকারী পরিচালক মাহবুব রহমান ও মেহেদি হাসানকে দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে।

পাবনা গণপূর্ত বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ ও অন্য প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ- ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে তারা প্রকল্পের আসবাব ও অন্য সামগ্রী অস্বাভাবিক দামে কিনে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ অভিযোগের অনুসন্ধান করছে দুদক।

জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আবাসিক ভবনের জন্য ১৬৯ কোটি টাকার কেনাকাটায় পদে পদে দুর্নীতি হয়েছে। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গণপূর্ত অধিদফতরে কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন জোনভিত্তিক যে কেনাকাটা হয়ে থাকে সেটির বার্ষিক একটি পরিকল্পনা থাকে।

এ ক্ষেত্রে ৩০ কোটি টাকার নিচে কেনাকাটা হলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অনুমোদন লাগে না, স্থানীয় পর্যায়েই করা যায়। এর সুযোগ নিয়ে ১৬৯ কোটি টাকার কাজ ছয়টি প্যাকেজে ভাগ করা হয়। ফলে প্রতিটি কাজের মূল্য ৩০ কোটি টাকার নিচে হওয়ায় মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন পড়েনি।

সেখানে প্রতিটি বালিশ কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৫৭ টাকা। আর প্রতিটি বালিশ আবাসিক ভবনের খাটে তোলার মজুরি দেখানো হয়েছে ৭৬০ টাকা। কভারসহ কমফোর্টারের (লেপ বা কম্বলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত) দাম ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৮০০ টাকা। যদিও এর বাজারমূল্য সাড়ে চার হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ১৩ হাজার টাকা। একইভাবে বিদেশি বিছানার চাদর কেনা হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৩৬ টাকায়।

এর বাজারমূল্য অবশ্য তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে আসবাব কেনার ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম খতিয়ে দেখার জন্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি ৩৪ জন কর্মকর্তার দুর্নীতি ও অনিয়মের সম্পৃক্ততা পেয়েছে।

২৭ জুলাই এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি জানান, এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করে ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ টাকা ফেরত নেয়া হবে। তাদের এখনও অনেক বিল পাওনা আছে, সেখান থেকে এ টাকা কেটে রাখা হবে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ সারাদেশ