সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি;
বহুল আলোচিত গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য (এমপি) মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলার রায় আজ বৃহস্পতিবার। ঘটনার প্রায় তিন বছর পর রায় ঘোষণা করবেন গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ দিলীপ কুমার ভৌমিক।
গত ১৯ নভেম্বর বিকেলে মামলার সাক্ষী ও আসামিদের উপস্থিতিতে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে ২৮ নভেম্বর রায়ের দিন ধার্য করেন বিচারক। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও তা দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন লিটনের পরিবার ও দলের নেতাকর্মীরা।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গার মাস্টারপাড়ার নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন তৎকালীন এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। এ ঘটনায় ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করেন লিটনের বড় বোন ফাহমিদা কাকলী বুলবুল। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল জাতীয় পার্টির (জাপা) সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) আব্দুল কাদের খানসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০১৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার বাসা থেকে কাদের খানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ অক্টোবর। আদালতে মামলার বাদী, নিহতের স্ত্রী, তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৫৯ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। লিটন হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্র মামলায় গত ১১ এপ্রিল কাদের খানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।
হত্যা মামলার অন্য আসামিরা হলেন-কাদের খানের পিএস শামছুজ্জোহা, গাড়িচালক হান্নান, ভাতিজা মেহেদি, শাহীন ও রানা, চন্দন কুমার রায়। চন্দন পলাতক, অন্যরা জেলা কারাগারে আছেন। আরেক আসামি কসাই সুবল কারাগারে অসুস্থ অবস্থায় মারা যান।
সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি : নিহতের স্ত্রী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ভেবে কাদের খান আমার স্বামীকে মেরে ফেলার নকশা করেন। সে অনুযায়ী আসামিরা আমার স্বামীকে বাড়িতে ঢুকে গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যায়। এ জঘন্য অপরাধের জন্য আমি প্রত্যেক আসামির মৃত্যুদণ্ড দাবি করছি।’
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক টি আই এম মকবুল হোসেন বলেন, ‘জামায়াত অধ্যুষিত এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রাণ ছিলেন লিটন। তাঁকে ক্ষমতার লোভে মেরে ফেলার নকশা করেন জাপার সাবেক এমপি কাদের খান। আওয়ামী লীগের সাহসী যোদ্ধা লিটন বরাবর স্বাধীনতাবিরোধীদের জন্য আতঙ্ক ছিলেন। তাঁকে হত্যার পরিকল্পনাকারী কাদের খানসহ প্রত্যেক আসামির ফাঁসির দাবি করছি।’
জেলা দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, ‘চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, বাদী ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে পেরেছি। সে অনুযায়ী আদালত প্রত্যেক আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেবেন আশা করছি।’ আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ বলেন, এমপি লিটনকে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছে। এ মামলায় আসামি কাদের খানসহ সবাইকে ফাঁসানো হয়েছে। আসামিদের নির্দোষ দাবি করে আদালতে বিস্তারিত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়েছে।
যেভাবে রহস্য উদ্ঘাটন : ২০১৬ সালের ২ ডিসেম্বর সুন্দরগঞ্জে একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারীদের ফেলে যাওয়া ম্যাগাজিনের গুলির সঙ্গে লিটনের শরীরে পাওয়া গুলির মিল পাওয়া যায়। সেই সূত্র ধরে তিন ছিনতাইকারী মেহেদি, শাহীন ও হান্নানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁরা তিনজন পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কাদের খানের নির্দেশে লিটন হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। পরে তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাদের খানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।