পত্রিকা বিক্রেতা থেকে বিশ্বের কনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী

সাধারণত যে বয়সে মূলধারার রাজনীতি শুরু হয় ঠিক সেই বয়সেই সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন ফিনল্যান্ডের সানা মারিন। ২০১৫ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদে আসা সানা সর্বশেষ দেশটির পরিবহনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনিই বর্তমান বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নারী প্রধানমন্ত্রী। ৩৪ বছর বয়সী তারুণ্যের প্রতীক সানার ছোটবেলা অতটা সুখের ছিল না। স্কুলজীবনে পত্রিকা বিক্রি করে সংসার চালাতেন সানা মারিন। ১৫ বছর বয়সে একটি বেকারিতে চাকরি নেন তিনি। চাকরিজীবনে ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন। আর বর্তমানে ৫৫ লাখ মানুষের দেশ ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তিনি। ফিনল্যান্ডের ক্ষমতাসীন দল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট পার্টি থেকে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন অ্যান্তি রিনে। গত ৩ ডিসেম্বর এক আস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এরপর ভোটাভুটির মাধ্যমে দলটির প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন সানা মারিন। নতুন প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে দল থেকে তার নাম প্রস্তাব করা হয়। চলতি মাসের শুরুর দিকে বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন তিনি। সানার আগে মাত্র দুজন নারী দেশটির প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছিলেন। সেটিও প্রায় ১০০ বছর পেরিয়ে গেছে। ওই দুই নারী প্রধানমন্ত্রীর কেউই অবশ্য এক বছরের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। তাই ইউরোপীয় কাউন্সিলসহ পুরো বিশ্বের নজর ছিল সানার ওপর।

এদিকে চাকরিজীবনে ক্যাশিয়ার হিসেবে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করায় তাকে নিয়ে বিদ্রুপ করেছেন এস্তোনিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সানা মারিনকে ‘সেলস গার্ল বলে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, একজন সেলস গার্ল দেশ পরিচালনা করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে আমার সংশয় রয়েছে। অবশ্য পরবর্তীতে এমন বিব্রতকর মন্তব্যের কারণে ফিনল্যান্ডের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছে এস্তোনিয়া সরকার। তবে এস্তোনিয়ার মন্ত্রীর ওই মন্তব্যের জবাবে টুইটারে সানা মারিন লেখেন, ফিনল্যান্ডে জন্ম নিয়েছি বলেই আজ আমি প্রধানমন্ত্রী হয়েছি। এ জন্য আমি অত্যন্ত গর্বিত। এই একজন দরিদ্র পরিবারের শিশু নিজেকে শিক্ষিত করতে পারে এবং তার জীবনের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। এমনকি একজন ক্যাশিয়ার দেশের প্রধানমন্ত্রীও হতে পারে। সানা মারিন ফিনল্যান্ডের পরিবহন মন্ত্রী ছিলেন। তার রাজনৈতিক দল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রধান পদত্যাগ করলে দলের প্রধানের দায়িত্ব পান সানা। বর্তমানে তিনি ফিনল্যান্ডের ক্ষমতাসীন পাঁচ দলীয় জোট সরকারের প্রধান। নিজের দরিদ্র জীবনের কথা গর্বের সঙ্গেই স্বীকার করেন সানা। ২০১৬ সালে লেখা এক ব্লগ পোস্টে মারিন লেখেন, আমি যখন ছোট্ট শিশু, তখন মাদক সমস্যার কারণে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ ঘটে। মা আমাকে নিয়ে উত্তর হেলসিঙ্কির পীরকালা অঞ্চলে একটি সমকামী পরিবারে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেখানেই বড় হয়েছি। সেই পরিবারে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকলেও ভালোবাসা ছিল প্রচুর। সানা জানিয়েছেন, অর্থাভাবে পড়াশোনার খরচ চালাতে ১৫ বছর বয়সে একটি বেকারিতে চাকরি নেন তিনি। শুধু তাই নয়; সংসারের রুটি-রুজির অর্থ উপার্জনের জন্য স্কুলজীবনে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। এর পর স্নাতক শেষে একটি প্রতিষ্ঠানে ক্যাশিয়ার পদে যোগ দেন। সানার সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ছাড়াও বামপন্থি জোটের নেতৃত্বে রয়েছেন ৩২ বছর বয়সী লি অ্যান্ডারসন, মধ্যপন্থি জোটের নেতৃত্বে ৩২ বছর বয়সী কাট্রি কুলমুনি, গ্রিন লিগের নেতৃত্বে ৩৪ বছর বয়সী মারিয়া ওহিসালো এবং সুইডিশ পিপলস পার্টি অব ফিনল্যান্ডের নেতৃত্বে আছেন ৫৫ বছর বয়সী অ্যানা-মাজা হেনরিকসন। বয়স নিয়ে প্রশ্নের জবাবে সানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আমার বয়স বা লিঙ্গ সম্পর্কে কখনো ভাবিনি, রাজনীতিতে যে কারণে এসেছি সে বিষয়গুলোর কথা ভাবী, যার জন্য আমরা ভোটারদের আস্থা জিতেছি।’ তিনি একত্রিত হয়ে আরও বেশি কাজ করার আশ্বাস দেন। ৩৪ বছর বয়সী সানার আগে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ওলেসি হংচারুক ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে কনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে তার বয়স ৩৫ বছর। চলতি বছরের আগস্টে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। ৩৫ বছর বয়সে দেশের নেতৃত্বের ভার তুলে নেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনও।

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ