নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, বিশেষত সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অধিভুক্ত কলেজে র্যাগিংবিরোধী কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। র্যাগিংয়ে আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের জরুরি সাহায্য ও দ্রুত প্রতিকার দিতে এই কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ রোববার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। শিক্ষাসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের প্রতি ওই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে কমিটি গঠন করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিংবিরোধী কমিটি এবং র্যাগিং পর্যবেক্ষণে স্কোয়াড গঠনের নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান ওই রিট করেন। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
রুলে শিক্ষার্থীদের জীবন ও মর্যাদা রক্ষায় র্যাগিং কার্যক্রম রোধে নীতিমালা প্রণয়নে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। র্যাগিং থেকে শিক্ষার্থীদের জীবন ও মর্যাদা রক্ষায় কার্যকর পদ্ধতি প্রবর্তনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। স্বরাষ্ট্রসচিব, শিক্ষাসচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে নীতিমালা তৈরি, র্যাগিংবিরোধী কমিটি গঠন ও তদারকির জন্য অ্যান্টির্যাগিং স্কোয়াড গঠন ও এ কাজে সার্বক্ষণিক একজন প্রতিনিধি রাখার নির্দেশনা চেয়ে গত ৯ অক্টোবর আইনি নোটিশ পাঠান রিট আবেদনকারী। এ জন্য সাত দিন সময় দেওয়া হয়। এর জবাব না পেয়ে ৮ জানুয়ারি ওই রিট করেন তিনি।
পরে আইনজীবী ইশরাত হাসান প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত, প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীই সিনিয়রদের মাধ্যমে র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে থাকেন। আর প্রথম বর্ষের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরই বয়স আঠারোর কম, যা মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি শিশু আইনেরও পরিপন্থী। দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীর তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের নির্দেশে ক্ষেত্র বিশেষে র্যাগিংয়ে যুক্ত হয়ে পড়েন। একসময় তিনি নিজেও র্যাগিংয়ের অপসংস্কৃতির ফলে ভুক্তভোগী হন। এতে অনেক শিক্ষার্থী মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত (ট্রমাটাইজড) হয়ে পড়েন—এসব যুক্তিতে রিটটি করা হয়।
রিট আবেদনকারীর ভাষ্য, র্যাগিংয়ে মাধ্যমে জুনিয়র শিক্ষার্থীরা, তথা নতুন শিক্ষার্থীরা অবমাননা ও হয়রানির শিকার হন। জুনিয়র শিক্ষার্থীরা ক্ষেত্রবিশেষ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন, যা শুধু মানবাধিকারের লঙ্ঘনই নয়, বরং মৌলিক অধিকারেরও পরিপন্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে আসেন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও অনেক তরুণ শিক্ষার্থী তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ভাই ও বোনদের কাছ থেকে নেতিবাচক ও করুণ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন, যা তাঁদের মানসিকভাবে আহত করে। র্যাগিংয়ের নামে দেশে ভয়ংকর, অমানবিক ও বিয়োগান্ত ঘটনাও ঘটেছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও দেশে র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আইনি বিধান নেই।