ডব্লিউটিওর সদস্য হয়ে সবচেয়ে বেশি লাভবান যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও জার্মানি
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সদস্য হওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি লাভ উঠিয়েছে বিশ্বের তিন শীর্ষ রফতানিকারক দেশ জার্মানি, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। বার্তেলসম্যান ফাউন্ডেশন প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। খবর ডয়েচে ভেলে। প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ডব্লিউটিওর সদস্য হওয়ার সুবাদে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক মুনাফা হয়েছে ৮ হাজার ৭০০ কোটি ডলার, চীন ৮ হাজার ৬০০ কোটি ডলার এবং জার্মানির ৬ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। ডব্লিউটিওর সদস্য দেশ ১৬৪টি। সংস্থাটির সদস্য হওয়ার দরুন এ দেশগুলো আর্থিকভাবে কতটা লাভবান হয়েছে, তা নিয়ে একদল গবেষক পর্যালোচনা করে দেখেছেন। এ হিসাবে বাণিজ্যের অন্তঃ ও বহিঃপ্রবাহ উভয়কেই ধরা হয়েছে। এ গবেষণার ফলাফলই প্রকাশ করেছে বার্তেলসম্যান ফাউন্ডেশন। বার্তেলসম্যান ফাউন্ডেশনের গবেষণা অনুযায়ী, ১৯৮০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ডব্লিউটিওর সদস্য দেশগুলোয় গড়ে রফতানি বেড়েছে ১৪ শতাংশ। আর একই সময় এ সংস্থার বাইরে থাকা দেশগুলোয় রফতানি কমেছে গড়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৬ সালে ডব্লিউটিওর সদস্যদের বিশ্বজুড়ে সম্পদ বেড়েছে ৮৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলার, যা বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় ১ শতাংশ। বার্তেলসম্যান ফাউন্ডেশনের বাণিজ্য বিশ্লেষক খ্রিস্টিয়ান ব্লাথ বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতির অপারেটিং সিস্টেম হলো ডব্লিউটিও। একটি নিয়মভিত্তিক পরিবেশে পণ্য ও সেবা কার্যক্রম যেন সঠিকভাবে চলে, এটা নিশ্চিত করে ডব্লিউটিও। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, যেসব দেশের শক্তিশালী রফতানি ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাত রয়েছে, সেসব দেশ ডব্লিউটিওর সদস্য হওয়ার জন্য বেশি সুবিধা পেয়েছে। যেমন মেক্সিকো লাভবান হয়েছে ৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার এবং দক্ষিণ কোরিয়া ৩ হাজার ১০০ কোটি ডলার। আজ, অর্থাৎ ১ জানুয়ারি ডব্লিউটিওর ২৫তম বার্ষিকী। এর আগে বার্তেলসম্যান ফাউন্ডেশন এ প্রতিবেদন প্রকাশ করল। তবে ওয়াশিংটনের কাছ থেকে বড় চাপের মুখে রয়েছে জেনেভাভিত্তিক ডব্লিউটিও। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার অন্যতম কাজ নিজ সদস্যদের মধ্যকার বিরোধ মেটানো। আর কোনো বিবাদের চূড়ান্ত রায় দেন সংস্থাটির আপিল আদালত। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার কারণে আদালতটি নিজ কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যর্থ হচ্ছে। এমনকি এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ডব্লিউটিওর আইন অনুসারে, প্রতিটি কেস বা মামলা আপিল বিভাগের তিনজন বিচারক শুনবেন। কিন্তু ১০ ডিসেম্বর থেকে বিচারকের সংখ্যা কমে গেছে। তিন বিচারকের মধ্যে দুজনের মেয়াদ শেষ হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত ঠিক হয়নি তাদের জায়গায় কারা আসবেন। এমনকি দুই বিচারক খোঁজার কার্যক্রমও শুরু হয়নি। এর পেছনের কারণ নতুন বিচারক নিয়োগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের অস্বীকৃতি। ডব্লিউটিওর অন্য সদস্য দেশগুলো বারবার নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করার কথা বলে আসছে। নভেম্বরের শেষ দিকে একশর বেশি সদস্য দেশ বিচারক খোঁজার কাজ শুরুর পক্ষে মত দিয়েছিল। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই ভেটো দেয়। এ দেশটি বিচারক নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে বাগড়া দিয়ে আসছে। এর আগেও আপিল বিভাগের বিচারক নিয়োগ নিয়ে মার্কিন প্রশাসন বাধা দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় এক দক্ষিণ কোরীয় বিচারককে দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ দেয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল দেশটি। অথচ এ বিচারককে নিয়োগ দিয়েছিল আগের মার্কিন প্রশাসন। অবশ্য এসব ঘটনার আগে নতুন বিচারক নিয়োগে বাধা দেয়নি দেশটি। সমালোচকরা বলছেন, ওই সময় ডব্লিউটিওর আপিল বিভাগের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও এর কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করেনি। তবে এটাও সত্য যে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো আরো বেশকিছু দেশ আপিল বিভাগ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তবে তাদের কেউই এ ব্যবস্থা বন্ধ করাকে সঠিক পথ বলে মনে করে না। সমালোচকরা বলছেন, ডব্লিউটিওর বাণিজ্য বিরোধ মেটানোর বেশকিছু পদ্ধতিগত সমস্যা রয়েছে। যেমন যতটা তাড়াতাড়ি দেয়ার কথা, ততটা দ্রত সংস্থাটির আপিল বিভাগ রায় দেন না এবং নিজেদের মেয়াদ শেষ হলেও যে মামলাগুলো শুরু করেছিলেন বিচারকরা, সেগুলোর শুনানি চালিয়ে যান। এছাড়া চীনা অর্থনীতি পুঁজিবাদ ও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের এক অপ্রচলিত মিশ্রণ এবং এটি যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে, তা মোকাবেলার মতো নিয়মনীতি ও পদক্ষেপও ডব্লিউটিওর নেই বলে দাবি সমালোচকদের।