রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) এবং মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোমের (মার্স) পর এবার নতুন করোনাভাইরাস আতঙ্কিত করে তুলেছে বিশ্বকে। চীনের এই ভাইরাসে আজ বুধবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৯২ জনে। আর আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ২৪ হাজার ৩২৪ জনে। চীনের বাইরে ফিলিপাইন ও হংকংয়ে এই ভাইরাসে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
২০১৯-এনসিওভি ভাইরাসটি করোনাভাইরাস পরিবারেরই। কিন্তু এর নাম করোনাভাইরাস কেন রাখা হলো?
জানা গেছে, নতুন বছরের শুরু থেকেই ‘করোনা বিয়ার ভাইরাস’ নিয়ে সার্চ বেড়ে চলেছে গুগলে। মানুষের হয়তো ধারণা হয়েছিল জনপ্রিয় মেক্সিকান বিয়ার ‘করোনা এক্সট্রা বিয়ার’ থেকেই ছড়িয়েছে এই ভাইরাস, আর সে কারণেই এমন নামকরণ।
গুগল ট্রেন্ড অনুযায়ী, গত ১৮ জানুয়ারি থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ‘করোনা বিয়ার ভাইরাস’ নিয়ে খোঁজ বেড়ে যায় ২ হাজার ৩০০ শতাংশ। ‘বিয়ার ভাইরাস’ লিখে খোঁজ বেড়ে যায় ৭৪৪ শতাংশ। আর ‘বিয়ার করোনাভাইরাস’ লিখে খুঁজেছিলেন ৩ হাজার ২৩৩ শতাংশ উৎসুক মানুষ।
এই পরিস্থিতিতে ওই বিয়ার কোম্পানি থেকে জানানো হয়, ওই ভাইরাসের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই।
মেক্সিকোর কোম্পানি সের্ভেসেরিয়া মোদেলোর তৈরি এই বিয়ার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে কনস্টেলেশন ব্র্যান্ড। এক সাক্ষাৎকারে এই ব্র্যান্ডের পরিচালক ম্যাগি বোমান বলেন, ‘আমরা ভীষণভাবে বিশ্বাস করি, গ্রাহকরা ভালো করেই বোঝেন- আমাদের ব্যবসা এবং ওই ভাইরাসের মধ্যে কোনো যোগসূত্র নেই।’
জানা গেছে, করোনা একটি লাতিন শব্দ। স্প্যানিশ ভাষাতেও শব্দটি রয়েছে। আর করোনা বিয়ারের উৎস মেক্সিকো বলেই মানুষের এ বিভ্রান্তি।
গ্রাচীন গ্রিক শব্দ করোন (পুষ্পমাল্য বা পুষ্পমুকুট) থেকে সপ্তদশ শতকের দিকে লাতিনে আসে করোনা শব্দটি। সূর্যের চারপাশে উজ্জ্বল যে আলোর বলয় (সাধারণভাবে পূর্ণগ্রাস গ্রহণের সময়ই কেবল দেখা যায়) রয়েছে, তা ওই মুকুটের মতো দেখায় বলে জ্যোতির্বিদরা একেও করোনা বলেন।
আবার ড্যাফোডিলের পাপড়ি বেস্টনের মাঝে যে অংশটি ট্রাম্পেটের মতো বেরিয়ে থাকে, সেটাকেও উদ্ভিদবিজ্ঞানে করোনা বলে।
ইলেকট্রন অনুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখলে করোনাভাইরাস পরিবারের সব সদস্যের মূল কাঠামো ঘিরে সেই রকম ট্রাম্পেট বা ফানেলের মতো অসংখ্য কাঁটা দেখা যায়, যেন রাজমুকুটের ওপর থরে থরে সাজানো দণ্ড। আর এ সব মিলেই এর নাম হয়েছে করোনাভাইরাস, যার সন্ধান মেলে ১৯৩০ এর দশকে।
বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল সায়েন্সডাইরেক্ট ডটকমে ২০১২ সালের এক নিবন্ধে বলা হয়, মুরগির ‘অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন‘ দেখা দিলে জানা যায় ইনফেকশাস ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস (আইবিভি) এর মূল কারণ। আর মানুষের দেহে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস সংক্রমণের তথ্য পাওয়া যায় ষাটের দশকে।