বাজারে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, চিনি, আটা, আদা, রসুন, এলাচ, শুকনা মরিচ, ভোজ্যতেলসহ ১০টি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। মৌসুমে সব ধরনের সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও দাম চাড়া।
এতে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস বাড়ছেই। তারা বলছেন, বাজারে খাদ্যপণ্যের কোনো সংকট নেই। চাহিদার সবটুকু পাওয়া যাচ্ছে, তারপরও দাম বেশি। কারণ বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর তৎপরতা নেই। আর এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা ভোক্তার পকেট কাটছে।
সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নয়াবাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার ও মালিবাগ বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এদিন মোটা চালের মধ্যে প্রতি কেজি স্বর্ণা বিক্রি হয় ৩৫-৩৬ টাকা। যা তিন সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ৩০-৩২ টাকা।
নাজিরশাল বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা কেজি। যা তিন সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ৫০-৫২ টাকা। মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা কেজি। যা তিন সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ৪৬-৪৮ টাকা।
মালিবাগ বাজারের খালেক রাইস এজেন্সির মালিক ও খুচরা চাল বিক্রেতা মো. দিদার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, মিলাররা এখনও চালের সংকট দেখিয়ে বাড়তি দরে বিক্রি করছেন। যে কারণে পাইকারি ও খুচরা বাজারে বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চাল।
এতে ভোক্তাদের বাড়তি দরে চাল কিনতে হচ্ছে। বাজারে চাল বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৩০-১৪০ টাকা। যা গত মাসের বুধবার বিক্রি হয় ৯০-১১০ টাকা। এ ছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৭০-১২৫ টাকা। যা বুধবার বিক্রি হয়েছে ৬০-৯০ টাকা।
নয়াবাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা মো. সুমন বলেন, আর কতদিন বেশি দরে পেঁয়াজ কিনতে হবে? চালের দামই বা কেন কমছে না? সরকার কি আমাদের মানুষ মনে করে না? নাকি পশু মনে করে? পশু মনে করলেও জীবের প্রতি দয়া থাকা দরকার।
এখনও এই পণ্যটি বাড়তি দরেই কিনতে হচ্ছে। আর বাজার মনিটরিং টিম কি করছে? তাদেরও দেখা যায় না। তারা যদি ভালোভাবে তদারকি করত, তাহলে দাম কমে আসত। নিত্যপণ্যের দামে খুব অসহায় লাগছে। দেখার যেন কেউ নেই।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবি জানিয়েছে, গত এক মাসের ব্যবধানে সরু চাল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি দরে।
এ ছাড়া দেশি পেঁয়াজ সপ্তাহের ব্যবধানে ২৫-৩০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা পেঁয়াজ কেজিতে ১৫-২০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারের মুদি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৪-৬৫ টাকা। যা একদিন আগে রোববার বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা। মসুর ডাল (বড়দানা) বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি। যা একদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৬৫-৭০ টাকা। শুকনা মরিচ মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০-৪০০ টাকা।
যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ২৩০-৩৫০ টাকা। আদা মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৮০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১১০-১৬০ টাকা কেজি। প্রতি কেজি রসুন মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৮০ টাকা।
যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১৩০-১৫০ টাকা। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন কোম্পানিভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪৮০-৫২০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৪৭০-৫১০ টাকা।
কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি শসা আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ২০-৩০ টাকা। প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ৫০-৭০ টাকা। প্রতি কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকা।
দেশি পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকা। ভালো মানের শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা। ফুলকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে বাঁধাকপি। এ ছাড়া প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজি। মাঝারি আকারের প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৯০ টাকায়।
শান্তিনগর কাঁচাবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসেন রোকসানা বেগম। তিনি যুগান্তরকে বলেন, বাজারের প্রত্যেকটি পণ্যের দামে আগুন। সব নিত্যপণ্য বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। তদারকি সংস্থাগুলোও যেন নিশ্চুপ। সংশ্লিষ্টরা দেখেও যেন টিনের চশমা পরে আছে।
কেন তারা দাম কমাতে পদক্ষেপ নিচ্ছে না? কেনই বা তারা দর্শকের ভূমিকা পালন করছে? সংসারের যে মাসিক আয় তা দিয়ে পুরো মাসের ব্যয় বহন করতে হয়। বাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ, সঙ্গে খাবারের খরচ তো আছেই।
প্রতিদিন খাবার কিনতে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। এতে অন্যান্য ব্যয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই সরকারের এ বিষয়ে নজর দিতে হবে।
জানতে চাইলে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। বিভিন্ন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছে, যা কাম্য নয়। এতে ভোক্তারা প্রতিনিয়ত অসহায় হয়ে পড়ছেন। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি রোধে সংশ্লিষ্টদের জোরালো ভূমিকা দরকার।
জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সরকারি পরিচালক আবদুল জব্বার মণ্ডল বলেন, অধিদফতরের পক্ষ থেকে প্রতিদিন দুটি টিম বাজার তদারকি করছে। কোনো অনিয়ম পেলে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, যে কটি পণ্যের দাম বেড়েছে, তা কেন বেড়েছে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সঙ্গে পণ্যের দাম ভোক্তা সহনীয় করতে কাজ চলমান আছে।