ভলিউম ও দলিল জালিয়াতি করে নর্দান ইউনিভার্সিটি গড়ে তোলেন আবু ইউসুফ

  • ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ভয়ঙ্কর জামায়াতি
  • ভূমি মালিকের সই-সিল জাল
  • সুষ্ঠু তদন্তে বেরিয়ে আসবে ভয়ঙ্কর তথ্য
  • দক্ষিণখানে অন্যের জমি জবর-দখলের পাঁয়তারা
  • শিক্ষামন্ত্রীর কর্মসূচি বাতিল দাবি এলাকাবাসীর
  • উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ভবন নির্মাণ
  • ক্যাডার বাহিনীকে ছাত্ররূপে সাজানো হয়
  • বহিরাগত ছাত্রদের হামলায় পুলিশসহ কয়েকজন আহত

বেসরকারি নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এনইউবি) বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ মো. আবদুলল্লাহ। সদা হাস্যোজ্জ্বল থাকেন তিনি। মুখের মিষ্টি কথায় চিড়ে ভিজিয়ে দিতে যেন জুড়ি নেই এই কথিত শিক্ষানুরাগীর। বাহ্যিকভাবে নুরানি ও ভালো মানুষি চেহারার আড়ালে এক ভয়ঙ্কর চরিত্র। বহু বছর ধরে গোপনে দেশবিরোধী জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত। পাকিস্তানপন্থি দলটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে রয়েছে তার দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক। শিক্ষানুরাগী সেজে আবু ইউসুফ মো. আবদুলল্লাহ গড়ে তুলেছেন বেসরকারি নর্দান ইউনিভার্সিটি।

ভূমি মালিকের সই-সিল, জমির দলিল ও রেজিস্ট্রেশন ভলিউম জালিয়াতি করে রাজধানীর দক্ষিণখানের কাওলায় গড়ে তোলা হয়েছে বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্যাম্পাস। সেখানেও নিরীহ ও সহজ-সরল ছাত্রদের গোপন কৌশলে পড়াশোনার আড়ালে শেখানো হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের মন্ত্র। একাধিক ছাত্র, শিক্ষক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ করে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তারা জানান, সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, শিক্ষামন্ত্রী মন্ত্রণালয়সহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও নির্মোহ তদন্ত করলে নর্দান ইউনিভার্সিটি ও এর চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে এমন ভয়ঙ্কর অভিযোগের সত্যতা মিলবে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করার অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে কথিত এই শিক্ষানুরাগীর। তিনি তার ভাড়াটে ক্যাডার বাহিনীকে প্রশাসনের সামনে ছাত্র বানিয়ে ফেলেন। দেশ ও জাতির স্বার্থে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি শাখার কর্মকাণ্ডের নিবিড় তদন্তের জোর দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি নর্দান ইউনিভার্সিটির কাওলা ক্যাম্পাসে শিক্ষামন্ত্রীর সম্ভাব্য কর্মসূচি বাতিল দাবি করেন বেশকিছু শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। তারা মনে করেন, এমন কলুষিত ও জামায়াতের আখড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা উচিত হবে না শিক্ষামন্ত্রীর। কারণ তিনি মহান স্বাধীনতার চেতনায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী ও ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি। মূলত বিতর্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান অপকৌশলের অংশ হিসেবে শিক্ষামন্ত্রীকে ব্যবহার করে ফায়দা লোটার অপচেষ্টায় লিপ্ত।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দক্ষিণখানের কাওলায় গড়ে তোলা নর্দান ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসের জমির কোনো বৈধ রেজিস্ট্রেশন নেই। সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সম্পূর্ণ অবৈধ পন্থায় নির্মাণ করা হয়েছে বহুতল ভবন। চেয়ারম্যান ও এমডির সই-সিল জালিয়াতি করে তেজগাঁও জমি রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জমির ভুয়া রেজিস্ট্রি দলিল বানানো হয়েছে। জমি দখলসহ বিভিন্ন অন্যায় ও অবৈধ কাজে ঢাল হিসেবে নিরীহ ছাত্রদের ব্যবহার করছে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আর অবৈধ জমির ওপর রাজউক কীভাবে সাততলা ভবন নির্মাণের অনুমতি দিল সেটিও জানতে চায় এলাকাবাসী।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নর্দান ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ ভালো মানুষের চেহারার আড়ালে এমন অপকর্ম করেছেন। ভেতরে তিনি যে কতটা ভয়ঙ্কর, ভণ্ড ও প্রতারক তা বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই। সরকারের সংশি­ষ্ট প্রশাসনের সঠিক তদন্তে আবু ইউসুফ ও নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের জামায়াত-শিবির সম্পৃক্ততা ও অন্যের জমি জবর-দখলসহ আরো অনেক অপকর্মের তথ্য বেরিয়ে আসবে।

সূত্র বলছে, বেসরকারি নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটা পূরণ করছে না। অতীতে বিভিন্ন সময় গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়টি ছাত্র ভর্তি ও সনদ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে আসে। কাওলা শাখাসহ বিশ্ববিদ্যালয়টি বিভিন্ন শাখায় বেশকিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধেও জামায়াত সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। চেয়ারম্যানের গোপন নির্দেশে এসব শিক্ষক নিরীহ ছাত্রদের ছাত্রশিবিরের দীক্ষা দিচ্ছেন।

এদিকে রাজধানীর দক্ষিণখানের কাওলায় অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহত্তম আবাসন প্রকল্প আশিয়ান গ্রুপ কর্তৃপক্ষ গতকাল বুধবার দুপুরে তাদের জায়গায় নির্মাণ কাজ করতে গেলে কর্মীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অন্যের জমি দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান।

নির্মাণ কাজে বাধা দিচ্ছে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা
নির্মাণ কাজে বাধা দিচ্ছে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা                                                                                     ছবি: মানবকণ্ঠ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল দুপুরে আশিয়ান গ্রুপ কর্তৃপক্ষ কাওলায় তাদের বিশাল আবাসন প্রকল্পের মুখে গেট নির্মাণ করতে যায়। এ সময় বহিরাগত যুবকের সহায়তায় আশিয়ান গ্রুপের কর্মীদের ওপর হামলা চালায় নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের কাওলা শাখার দুই শতাধিক ছাত্র। ভাড়াটে দুর্বৃত্ত সবুজ ও বাবলুর নেতৃত্বে লোহার রড ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালানো হয়। তাদের হাত থেকে রেহাই পাননি দক্ষিণখান থানার পুলিশ সদস্য মহসিনও। জামায়াতপন্থি কয়েক শিক্ষক ছাত্রদের লেলিয়ে দেন। নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নামধারী দুর্বৃত্তদের হামলায় আশিয়ান গ্রুপের বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হন। গত তিনদিন ধরেই একইভাবে আশিয়ানের কাজে বাধা সৃষ্টি করা হয়।

পুলিশ সদস্যসহ আশিয়ান গ্রুপের কর্মীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা ও জমি দখলের অপচেষ্টা সম্পর্কে জানতে চাইলে দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার মো. শামীম জানান, ঘটনাটি আমি শুনেছি। এ ঘটনায় জড়িত ছাত্র নামধারী দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে। পুলিশ সদস্যের ওপর হামলাসহ পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ