ভেজালমিশ্রিত খাদ্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা জরুরি

মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি অন্যতম। কিন্তু প্রতিদিনের খাদ্য গ্রহণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভেজাল খাদ্যের কারণে বাড়ছে রোগব্যাধিসহ নানা রকম দুর্ভোগ।

বর্তমানে বিভিন্ন খাদ্যে রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণে সংশ্লিষ্ট খাবারটি আপাতত সতেজ, সজীব মনে হলেও তা কোনভাবেই স্বাস্থ্যকর নয়। এ ক্ষেত্রে খাদ্যকে সুরক্ষার নামে যেসব দ্রব্য মেশানো হয় তা যেমন শারীরিক সুস্থতার প্রতিপক্ষ শক্তি হয়ে দাঁড়ায় একইভাবে নীরব ঘাতকের মতো ভেতরে তার কার্যক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়।

 

ফলে ভোক্তাশ্রেণি পড়ে চরম ঝুঁকিতে। মানুষের শরীরের মূল যন্ত্র যেমন কিডনি, হার্ট, ফুসফুস এবং লিভারে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। খাদ্যপণ্যে মেশানো রাসায়নিক উপাদানে সৃষ্ট রোগগুলো সংক্রামক ব্যাধি নয়।

তারপরও প্রতিনিয়ত এর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সারাদেশের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য তা অশনি সঙ্কেত। দেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা এ ব্যাপারে সতর্ক এবং সাবধান থাকতে বিশেষ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। ভয়ঙ্কর এসব রোগে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো শঙ্কিত এবং উদ্বিগ্ন প্রতি বছর রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে।

শুধু তাই নয়, এসব রোগ বৃদ্ধির যথার্থ কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় খাদ্যে মিশ্রিত রাসায়নিক সীসা, যা মানবদেহে পুষ্টির যোগান দেয়ার বিপরীতে তৈরি করছে ক্যান্সারসহ নানা রকম মরণব্যাধি।

কিডনি, হূদযন্ত্র, ফুসফুস এবং পাকস্থলী মানুষের শরীরের চিরস্থায়ী মূল উপাদান, যা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অনিবার্য প্রক্রিয়াও বটে। কিডনি ফাউন্ডেশন জানাচ্ছে এই মুহূর্তে দেশে ২ কোটিরও বেশি লোক কিডনি সমস্যায় ভুগছে। জাতীয় হূদরোগ ফাউন্ডেশনও শঙ্কিত বার্তা দিচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা হার্টের রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ায়।

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনেও উঠে আসে এ রোগের ভয়ঙ্কর সমপ্রসারণ। খাদ্যে ভেজালের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির আশঙ্কাও প্রতি বছরই বাড়ার দিকে। স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছে ভেজাল মিশ্রিত খাবার শরীরের মূল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে দিচ্ছে বলে।

সুতরাং ভেজালমুক্ত খাবার সরবরাহ করতে পারলে রোগীর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসতে সময় নিত না। পরিবেশ দূষণের সঙ্গে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় সুস্থ ও নিরাময় জীবন এখন আর কারও নিয়ন্ত্রণে নেই। চিকিৎসকদেরও নয়। প্রয়োজন খাদ্য নিরাপত্তায় আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে দেশের নতুন প্রজন্ম, হুমকির মুখে অনাগত শিশুরা।

বিশেষ করে গর্ভবতী মা যখন এমন সব অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন তখন অনাগত শিশুটির ভবিষ্যত কোন সুরক্ষায় এগিয়ে যাবে? আমরা জানি, স্বাস্থ্য মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ।

স্বাস্থ্যহীন মানুষের প্রতিদিনের সুস্থ জাতির জন্যও হুমকি। এছাড়া কোনো মা যদি পুষ্টিকর খাবার নিতে ব্যর্থ হন তাহলে তার জঠরে বড় হওয়া শিশুটি বিকলাঙ্গ, স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন এবং প্রতিবন্ধী হওয়ার আশঙ্কা বাড়তে থাকে।

সরকার টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সুদৃঢ় অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যথার্থ খাদ্য সরবরাহ এবং নিরাপত্তার বলয়কে জোরালো করে পুষ্টিকর ও বিষমুক্ত খাবার জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

সময়োপযোগী এ সিদ্ধান্ত আগামীর বাংলাদেশকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকে জোরালোভাবে এগিয়ে দিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। খাদ্যকে নিরাপদ করতে গেলে দুর্নীতি ও জীবন সংশয়যুক্ত কার্যক্রমকে প্রতিহত করে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া অত্যন্ত জরুরি।

টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রায়ও মানুষের মূল্যবান জীবন ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য। সরকার সেই মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে জনগণের পাশে সব সময় থাকবে বলেই প্রত্যাশা।

Others জাতীয় শীর্ষ সংবাদ