জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে দেশজুড়ে ৬৮ হাজার ৩৮টি গ্রামে একটি করে দরিদ্র পরিবারকে দুর্যোগ সহনীয় ঘর এবং ২০০টি মুজিব কিল্লা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ উদ্যোগসহ ২০ দফা কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ২৩টি কমিটি গঠন করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জানায়, প্রতিটি বাড়ি নির্মাণে দুই লাখ ৯৯ হাজার ৮৬০ টাকা ব্যয় হবে। এ বছরের মার্চ থেকে ২০২১ সালের মার্চের মধ্যে এ ঘর নির্মাণ প্রকল্প শেষ হবে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২০০টি মুজিব কিল্লা উদ্বোধন করা হবে। ‘পরিচ্ছন্ন গ্রাম পরিচ্ছন্ন শহর’ কর্মসূচির আওতায় এ বছর মার্চ থেকে সারা দেশে ৯ লাখ ৬৭ হাজার শ্রমিককে দিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার রাস্তা, ড্রেন ও বাজার-ঘাট ইত্যাদি পরিচ্ছন্ন করা হবে।
কর্মপরিকল্পনার মধ্যে আরও রয়েছে- এ বছরের ১৭ মার্চ সিপিপি কর্মসূচি উদ্বোধন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট জাতির পিতার বিভিন্ন ছবি বা অন্য সব প্রামাণ্য চিত্র সমন্বয়ে ১০ মিনিটের ডকুমেন্টারি ভিডিও চিত্র প্রস্তুত করা; ১৯৭৩ সালের ১ জুলাই বঙ্গবন্ধু কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সিপিপি স্বেচ্ছাসেবকসহ অন্য স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে বাণিজ্য মেলার মাঠে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ বছর ১ জুলাই এক লাখ স্বেচ্ছাসেবকের মহাসম্মেলন আয়োজন; ২ জুলাই ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে বঙ্গবন্ধু’।
শিরোনামে দিনব্যাপী আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হবে; ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসবিষয়ক কার্যক্রমে বঙ্গবন্ধুর অংশগ্রহণ সংবলিত ছবি নিয়ে স্মারক গ্রন্থ ১৩ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসে প্রকাশ করা হবে। মুজিব শতবর্ষ লেখা সংবলিত কলম, গেঞ্জি, ক্যাপ, নোটপ্যাড, কোটপিন ইত্যাদি তৈরি ও বিতরণ করা হবে। ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধুর জীবনীভিত্তিক গীতিনাট্য তৈরি করা হবে।
বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’-এর আওতায় গ্রাম এলাকায় পাঁচ হাজার ব্রিজ তৈরি ও তিন হাজার কিলোমিটার এইচবিবিকরণ রাস্তা উদ্বোধন করা হবে। এ বছরের জুনে ‘প্রতিবন্ধিকতাবান্ধব দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা’ বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হবে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সারা দেশে অতিদরিদ্র ৫০ হাজার গৃহহীন পরিবারকে দুই বান্ডিল ঢেউটিন ও নগদ টাকা প্রদান, দেশের প্রতিটি গ্রামে একটি করে অতিদরিদ্র পরিবারের জন্য দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি নির্মাণ করা হবে। একই বছরের মার্চে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে শীতবস্ত্র দেয়া হবে।
বছরব্যাপী গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণে টেস্ট রিলিফ (টিআর), কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা), খাদ্যশস্যের পরিবর্তে টাকা (কাবিটা) কর্মসূচিতে অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থানে কী পরিমাণ দরিদ্রতার হার কমেছে এবং কী ধরনের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে তা মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতীয়, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নাটিকা প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রচার ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা হবে। আর জাতীয় কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত কর্মসূচিতে জেলা, উপজেলা ও জাতীয় পর্যায়ে এ মন্ত্রণালয়ের ও অধিদফতরের এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ৬৮ হাজার ৩৮টি গ্রামে একটি করে দুস্থ ও দরিদ্র পরিবারকে পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেবে সরকার। আগামী মার্চ থেকে ২০২১ সালের মার্চের মধ্যে এ বাড়ি নির্মাণ প্রকল্প শেষ হবে। এজন্য দুই বছরে বরাদ্দ দুই হাজার ৪০ কোটি ১৮ লাখ ৭৪ হাজার ৬৮০ টাকা। এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে আরও ৫০ হাজার ঘর তৈরির প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।