রাজধানীর এক সময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সহযোগী মাজহারুল ইসলাম ওরফে শাকিলকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। র্যাব জানায়, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পরপরই রাজধানী ঢাকার স্থবির হওয়া আন্ডারওয়ার্ল্ডে রাজত্ব করতেই দুবাই থেকে দেশে ফিরেছিল শাকিল। আর তার গুরু শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে দুবাই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সেখান থেকে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলন এ তথ্য জানান র্যাবের গোয়েন্দা, আইন ও লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম। এর আগে, গতকাল ভোর ৫টা ১০ মিনিটে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী শাকিলকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে ২টি বিদেশি পিস্তল ও ২টি ম্যাগজিন ও ৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, শাকিল চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুবাই থেকে বাংলাদেশে আসে। তার দেশে আসার উদ্দেশ্য ছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের নির্দেশ ও সহযোগিতায় বাংলাদেশে তার সন্ত্রাসী কার্যক্রম নতুন করে প্রতিষ্ঠা করা, ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের নেতৃত্ব নেয়া। র্যাব কর্মকর্তা বলেন, দেশে ফিরে শাকিল রাজধানীর একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়। ভর্তির উদ্দেশ্য ছিল হাসপাতালে কোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়া। র্যাবের এই গোয়েন্দা শাখার পরিচালক বলেন, শনিবার ভোর পাঁচটার দিকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে শাকিলকে গ্রেফতার করা হয়। শাকিল একটি সিএনজিতে করে যাচ্ছিল। চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তি হিসেবে তাকে তল্লাশি করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগজিন ৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে দেখা যায় সে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সহযোগী শাকিল। ২০১৬ সালের জুন মাসে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সম্পাদক রাজীব হত্যার এজাহারে নাম আসার চারদিন পরে সে চীনে চলে যায়। ২০১৭ সাল পর্যন্ত সে চীনে বসবাস করে এবং কার্গো সার্ভিসে কাজ করে। ২০১৮ সালে চীন থেকে দুবাই যায়। গত জানুয়ারি পর্যন্ত দুবাইয়ে ছিল সে। আর সেখানেই জিসানের সঙ্গে তার পরিচয়।
শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান গ্রেফতার হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, আমরা ইন্টারপোলের মাধ্যমে জানতে পেরেছি জিসানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য যে প্রক্রিয়াগুলো রয়েছে তা চলমান। এদিকে শাকিলকে মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করার কথা র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হলেও তার পরিবারের অভিযোগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে শাকিলকে ধরে নিয়ে যান র্যাব সদস্যরা। শাকিলের চাচাতো ভাই ফাহিম মাহমুদ বলেন, পাঁচ বছর ধরে দুবাই ছিল শাকিল। ১৫ দিন হলো সে দেশে ফিরেছে। শাকিলের হার্টের সমস্যা রয়েছে এবং ব্লাড প্রেসারও বেশি। মাথা ঘুরে পড়ে গেলে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তাকে প্রথমে ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে ২০ ফেব্রুয়ারি সকালে নেয়া হয় বিএসএমএমইউতে। ওইদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে শাকিল ও তার দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা শাওনকে কে বা কারা তুলে নিয়ে যায়। এরপর আমরা হাসপাতালের কোন সহযোগিতা না পেয়ে শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। জিডি নম্বর-১৪৮০। পরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তাদের পাওয়া যায়নি। গতকাল দুপুরে টেলিভিশনে দেখতে পাই, মোহাম্মদপুর থেকে র্যাব শাকিলকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে। তবে শাওনের কোনও খোঁজ এখনও পাইনি। তিনি বলেন, আমরা প্রথমে ধারণা করেছিলাম, যেহেতু শাকিল দুবাই থাকতো হয় তো মুক্তিপণের জন্য কোন চক্র তাকে অপহরণ করেছে। এর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজও চেয়েছিলাম।