উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে বানভাসি মানুষ

ভারি বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, করতোয়া, সুরমা, কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদনদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এ ছাড়া মধ্যাঞ্চলের জেলা শেরপুর ও নেত্রকোনার নতুন নতুন এলাকা বন্যাকবলিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ। এসব জেলার নদনদীতে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’-এর মতো দ্বিতীয় দফা বন্যায় এসব এলাকার মানুষ এখন দিশেহারা। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার খবর শুনে পানিবন্দি মানুষ গবাদি পশু নিয়ে ছুটছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোলা আশ্রয়কেন্দ্রে। পরপর দুই দফা বন্যায় ভেসে গেছে লাখ লাখ পুকুর ও মাছের খামার। পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের ক্ষেত ও বীজতলা। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় অনেক এলাকায় বন্ধ হয়ে গেছে সড়ক যোগাযোগ। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। অথচ বানভাসি মানুষের নেই পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
কুড়িগ্রাম :কুড়িগ্রামে আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। প্রথম দফায় ১০ দিন পর বন্যার পানি সরে যাওয়ার চার দিনের মাথায় দ্বিতীয় দফা বন্যা আঘাত হেনেছে। ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ ১৬ নদীতে হু-হু করে পানি বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তা নদীর চারটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এসব নদীর অভ্যন্তরের দ্বীপচর, তীরবর্তী চর এবং অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের গ্রামের পর গ্রাম আবারও প্লাবিত হয়েছে। অনেক স্থানে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর ও গ্রামীণ সড়কসহ ফসলের ক্ষেত। পানিবন্দি হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা জানান, প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, জেলার ৯ উপজেলার ৫৬ ইউনিয়নের ৩৫০টির মতো গ্রামে বন্যার পানি ঢুকেছে। এসব গ্রামে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ১৫ হাজার পরিবারের ৬০ হাজার মানুষ। এই পরিস্থিতিতে বন্যার ক্ষতি কমাতে শনিবার জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা করা হয়েছে। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, রোববার দুপুরে ধরলা নদীর ফেরিঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার এবং তিস্তা কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) :চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে অষ্টমীরচর, চিলমারী ও নয়ারহাট ইউনিয়নে কিছু কিছু এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, উপজেলার অষ্টমীরচর ইউনিয়নের খোর্দ বাশপাতার, খারুভাজ, খামারবাশপাতার, ছালিপাড়া, চরমুদাফৎ কালিকাপুর ও নটারকান্দি এলাকার প্রায় দুই হাজার মানুষ, নয়ারহাট ইউনিয়নের বজরা দিয়ারখাতা, নাইয়ারচর, উত্তর খাউরিয়া পশ্চিমপাড়া ও খেরল্ফম্নয়া নতুনগ্রাম এলাকার প্রায় এক হাজার মানুষ এবং রানীগঞ্জ ইউনিয়নের প্রায় দেড় হাজারসহ প্রায় সাত হাজার মানুষ নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়াও চরাঞ্চলগুলোর হাজার হাজার একর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
লালমনিরহাট :লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলার নদনদীর পানি হু-হু করে বাড়ছে। তিস্তার পর এবার ধরলার পানি অস্বাভাবিক হারে বাড়তে শুরু করছে। সদর উপজেলার মোগলহাটের শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে লালমনিরহাট শহর ও শহরতলির লোকজন। ধরলার এমন অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধিতে সদর উপজেলার মোগলহাট ও কুলাঘাট ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এদিকে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজ থেকে ধেয়ে আসা পানি নিয়ন্ত্রণ করতে জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে ব্যারাজের ভাটিতে থাকা লালমনিরহাটের আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের প্রায় ২৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। বানভাসি এসব মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়েছে। গত তিন দিনে পানিবন্দি এসব মানুষের কাছে সরকারি- বেসরকারি তেমন কোনো সাহায্য পৌঁছায়নি। রোববার বিকেলে লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর সমকালকে জানান, পানিবন্দি এলাকায় ১২০ টন জিআর চাল ও দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
গাইবান্ধা :গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, তিস্তা, করতোয়াসহ সবক’টি নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ২৭ সেন্টিমিটার এবং তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেইসঙ্গে ঘাঘট, কাটাখালী, বাঙালি ও করোতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি দ্বিতীয় দফায় আবারও অবনতি হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় নদনদীর পানি আরও বৃদ্ধি পাবে এবং জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানানো হয়েছে। সাঘাটা, ফুলছড়ি, সুন্দরগঞ্জ ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের বসতবাড়ি আবারও পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে এবং ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এ ছাড়া গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানী, গিদারী, মোল্লার চর ইউনিয়ন, ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া, খাটিয়ামারী, ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা ও যমুনা নদীবেষ্টিত সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া, পালপাড়া, চিনিরপটল, চকপাড়া, পবনতাইড়, থৈকরপাড়া, বাঁশহাটা, মুন্সিরহাট, গোবিন্দি, নলছিয়াসহ বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
মৌলভীবাজার :হু-হু করে কুশিয়ারা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এই নদীর মৌলভীবাজার অংশের সদর উপজেলার ব্রাহ্মণগ্রাম ও শেরপুর লঞ্চঘাট এলাকার পাঁচটি স্থানে তীর রক্ষা বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এতে অর্ধশতাধিক পরিবারের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে বাঁধ মাড়িয়ে পানি প্রবেশ করায় কুশিয়ারা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ ভাঙনের আশঙ্কায় বন্যা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিন দেখা যায়, দু’দিন ধরে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় কুশিয়ারা নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হলেও তলদেশ ভরাট হওয়া কুশিয়ারা জলে টুইটম্বুর হয়ে পড়েছে।
সুনামগঞ্জ :দ্বিতীয় দফা বন্যায় সুনামগঞ্জের লাখো মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষ মহাদুর্ভোগে রয়েছেন। করোনার মধ্যে লাগাতার দু’দফা বন্যা যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’-এর মতো অবস্থা। এবারের বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হবে শুনে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলার লাখো শ্রমজীবী মানুষ।
বিশ্বম্ভরপুরের দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নের সোনাপুর নতুনহাটির রমেন্দ্র বর্মণ (৪৫) জানান, ১৪ দিন আগে বন্যার পানি এলে চৌকির ওপর বাঁশের মাচা বেঁধে টিনের চুলো বসিয়ে কোনোরকমে দিনে একবার খেয়ে পাঁচ দিন ছিলেন। শনিবার থেকে আবার ঘরে কোমরসমান পানি।
জামালগঞ্জের রহিমাপুরের প্রজেশ দে বললেন, ‘গাঁওয়ের কেউয়ের ঘরঔ ভাসাইল নাই। কে কার বাড়ি গিয়া উঠবো। কেউর ঘরও কোমর, কেউর হাঁটু, কেউর ঘণ্টা সমান পানি। বিপদ মাইনসের লাগি আইছে, গরুরও লাগিও।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানিয়েছেন, সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে, যেহেতু বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি রাখতে হবে। তিনি জানান, জেলায় ২৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র রোববার দুপুর পর্যন্ত খোলা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান জানিয়েছেন, রোববার বিকেল ৩টায় সুরমা নদীর সুনামগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২৬৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) :জগন্নাথপুরের নিম্নাঞ্চলে ফের বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। গত দু’দিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের ভুরাখালি, দাসনাগাঁও হরিণাকান্দি, গাদিয়ালা, বেরী, পৌর এলাকার যাত্রাপাশা, শেরপুর, পশ্চিম ভবানীপুর, কলকলিয়া ইউনিয়নের শ্রীধরপাশা, জগদ্বীশপুর, কামারখাল, গলাখাই, নোয়াগাঁও, কান্দারগাঁও, পাড়ারগাঁও, নাদামপুর, হিজলা, মজিদপুর, রানীগঞ্জ ইউনিয়নের রানীনগর, বাগময়না রৌয়াইল গ্রামসহ কমপক্ষে ৪০টি গ্রামের লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) :তাহিরপুরে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করেছেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। গতকাল রোববার বিকেলে তিনি উপজেলার শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের মোয়াজ্জেমপুর, ভবানীপুর, সন্তোষপুর, মারালা, পৈ ুপ, রামজীবনপুর, নোয়াগাঁও, নোয়ানগরসহ বিভিন্ন গ্রামে ত্রাণ বিতরণ করেন।
শেরপুর :জেলার নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীর বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। এ ছাড়াও নিম্নাঞ্চলে ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি উপচে তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ।
নালিতাবাড়ী উপজেলার মরিচপুরান ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামের ভোগাই নদীর বাঁধ ভেঙে প্রায় ১০০ মিটার এলাকাজুড়ে প্রবল বেগে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করছে আশপাশের কয়েকটি গ্রামে। এদিকে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ঝিনাইগাতী উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পাগলার মুখ নামক স্থানে মহারশি ও মালিঝি নদীর পানির তোড়ে ভেসে গেছে হাতিবান্ধা গ্রামের চলাচলের একমাত্র সেতুটি। অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে সদর উপজেলার কুলুরচর বেপারীপাড়া ও নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা ও চর অষ্টাধর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে।
মদন (নেত্রকোনা) :মগড়া ও ধনু নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় মদনের গোবিন্দশ্রী গুচ্ছগ্রামের ৫০ পরিবারসহ উপজেলার পঁ?াচ ইউনিয়নের শতাধিক পরিবার গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সবজি, আমন বীজতলা, পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় চাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে আমনচাষিরা পড়েছেন বিপাকে।
গোবিন্দশ্রী গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা তৌহিদ উল্লাহ, বাবুল, সাত্তার, রহিম জানান, গত শনিবার গুচ্ছগ্রামে পানি প্রবেশ করায় আমাদের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেলেও এ পর্যন্ত কেউ দেখতে আসেনি, মেলেনি সরকারি সাহায্য।
ছাতক (সুনামগঞ্জ) :ছাতকে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে উপজেলার নতুন নতুন এলাকা। ফলে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন উপজেলার নিচু এলাকায় বসবাসরত শত শত দরিদ্র পরিবার। বন্যাকবলিত এলাকার লোকজন পরিবারের সদস্য ও গবাদি পশু নিয়ে নিকটস্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন। ইতোমধ্যেই বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে সুরমা নদীর তীরবর্তী সব ক্রাশার মিল। বন্ধ হয়ে গেছে নদীতে অবস্থানরত বাল্ক্কহেড-কার্গোতে পাথর-বালু লোডিং-আনলোডিং। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শহরের মার্কেট ও অলিগলিতে পানি ঢুকে অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। মূল সড়কে ও বাজারে এখন নৌকা চলাচল করছে। উপজেলার সঙ্গে সব ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ) :ধর্মপাশায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ২০ হাজার ২০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাড়িঘরে পানি ওঠায় ১৫০টি পরিবার বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। উপজেলা সদরের সঙ্গে বিভিন্ন ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। থাকা-খাওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছে পানিবন্দি পরিবারগুলো। এ ছাড়াও মধ্যনগর বাজার, জয়শ্রী বাজার, বংশীকু া বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বাজারগুলোতে পানি ওঠায় বন্ধ রয়েছে অধিকাংশ দোকানপাট। এসব পানিবন্দি পরিবারের খাদ্য সমস্যা মেটাতে বন্যাদুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। রোববার ধর্মপাশা উপজেলার চাপাইতি, বিশারা, সাজদাপুর, হিজলাসহ বিভিন্ন গ্রামে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির হাসান জানান, বন্যাদুর্গত মানুষের খাদ্য সহায়তায় খিচুড়ি, চিড়া, বিস্কুটসহ শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ সারাদেশ