মিজান মালিক ; দেশের ‘শীর্ষস্থানীয় জালিয়াত’ ও ৫৬ প্রতারণা মামলার আসামি রিজেন্ট হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী এবং রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার কমিশন এ সিদ্ধান্ত নেয় বলে যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন দুদক পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য।
মাইক্রোক্রেডিট ও এমএলএম ব্যবসার নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে সাহেদ চক্রের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া বহুমাত্রিক জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে পরস্পর যোগসাজশে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগও উঠেছে করোনা টেস্ট নিয়ে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করা সাহেদের বিরুদ্ধে।
আয়কর ফাঁকি, ভুয়া নাম ও পরিচয়ে ব্যাংক ঋণ নিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের বিষয়টি আমলে নিয়েছে দুদক।
এর আগে কমিশনের সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগের বিভিন্ন ব্যক্তি, গণমাধ্যম, ভার্চুয়াল মাধ্যমসহ নানা উৎস থেকে সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সংগ্রহ করে।
এসব তথ্য-উপাত্তসংবলিত অভিযোগগুলো কমিশনের দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেল কমিশনে উপস্থাপন করলে কমিশন এ সিদ্ধান্ত নেয়।
কমিশনের বিশেষ তদন্ত অনুবিভাগের মাধ্যমে এই অভিযোগটি অনুসন্ধান করা হবে বলে জানা যায়। দুদকের উপপরিচালক মো. আবু বকর সিদ্দিকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম এ কাজ পরিচালনা করবে। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক মো. নেয়ামুল হাসান গাজী ও শেখ মো. গোলাম মাওলা।
রিজেন্ট হাসপাতালের মাধ্যমে করোনা টেস্ট নিয়ে প্রতারণার ঘটনা ফাঁস হলে সাহেদ আত্মগোপনে চলে যান। তবে ধারণা করা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতেই রয়েছেন তিনি। যে কোনো সময় গ্রেফতার হতে পারেন।
জানা গেছে, আধা শিক্ষিত সাহেদ ১৯৯৯ সালের পর থেকেই প্রতারণা শুরু করেন। তার বাড়ি সাতক্ষীরায়। ওই এলাকার আরও একজন সাহেদ আছেন, যার যাতায়াত সরকারের উচ্চপর্যায়ে। যেমনটি ছিল রিজেন্ট সাহেদের। বঙ্গভবন থেকে গণভবন– সর্বত্রই ছিল তার অবাধ বিচরণ। চতুর সাহেদ কৌশলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদকীয় উপকমিটির পদও বাগিয়ে নেন। আর সেই পদ বিক্রি করে তিনি রাতারাতি ঢাকায় দোর্দণ্ড প্রতাপশালী হয়ে ওঠেন।
অনুমোদন ছাড়া উত্তরা ও মিরপুরে রিজেন্ট হাসপাতালের মাধ্যমে করোনা রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা এবং জালিয়াতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। কম্পিউটার থেকে বের করে তিনি ইচ্ছেমতো পজিটিভ ও নেগেটিভ রিপোর্ট হাজার হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। তার প্রতিষ্ঠানের ভুয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে শত শত লোক প্রতারণার শিকার হন। বিদেশেও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।
এর আগে সাহেদ করিমের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করে। এর পাশাপাশি তার নামে থাকা ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্য সাত দিনের মধ্যে জানানোর জন্য সব তফসিলি ব্যাংককে চিঠি দেয়া হয়েছে।